প্রতিবেদন : মো: জহিরুল ইসলাম

ছালাতে আমরা কেন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছি না

Spread the love

ছালাতে আমরা কেন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছি না

মো. বাকী বিল্লাহ খান পলাশ

রাউ‘উল ইয়াদায়েন হ’ল ছালাতের সৌন্দর্য যা আল্লাহ্তায়ালার নিকট আতœসমর্পণের একটি অন্যতম নিদর্শন। মূলত (১) তাকবীরে তাহরীমার সময় (২) রুকূতে যাওয়ার সময় (৩) রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় এবং (৪) তিন ও চার রাকায়াত বিশিষ্ট ছালাতে প্রতি তাশাহ্হুদের বৈঠকের পর উঠে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময় আঙ্গুল লম্বা করে ক্বিবলামুখী স্বাভাবিকভাবে কাঁধ বা কান বরাবর দু’হাত উঠানোই রাফ’উল ইয়াদায়েন।

রাসূল (ছা.) এর একটি জীবন্ত সুন্নত এই রাফ‘উল ইয়াদায়েন যা তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত করে গেছেন এবং চার খলিফাসহ অসংখ্য সাহাবীদের হাদীস, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন, মুজতাহেদীনদের মতামত এমনকি হানাফী মাযহাবের বড় বড় মোহাক্কেক আলেমদের সিদ্ধান্ত ও ফেকাহ থেকে যা প্রমানিত।


এ ব্যাপারে আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী বিন আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) যখন নামাযের জন্য তাকবীরে তাহরীমা বলতেন তখন হাত দুটি কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং যখন রুকূ করার ইচ্ছা করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন এবং তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন ঐ রকমভাবে হাত উপরে উঠাতেন। (যুয বুখারী ৩য় পৃষ্ঠা) ।

আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছা.) কে দেখেছি যখন তিনি নামায শুরু করার জন্য দাঁড়িয়েছেন তখন তার হাত দু’টি কাঁধ বরাবর উচু করলেন এবং যখন তিনি রুকু করলেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠালেন তখনও ওভাবেই করলেন এবং বললেন সামি আল্লাহু লিমান হামিদা কিন্তু তিনি সেজাদার সময় ঐরূপ করলেন না। (বুখারী, মুসলিম ১ম, ১৬৮ পৃষ্ঠা)।
এ ব্যাপারে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) তার কেতাব ‘গুনিয়াতুত্ তালেবিন’ এর ৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমার সময় এবং রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা নামাযের জীবন।
হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত পন্ডিত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলবী বলেন, ‘যে মুছল্লী রাউ‘উল ইয়াদায়েন করে, ঐ মুছল্লী আমার নিকট অধিক প্রিয় ঐ মুছল্লীর চাইতে, যে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে না কেননা রাফ‘উল ইয়াদায়েন এর হাদীস সংখ্যায় বেশী ও অধিকতর মযবুত। (‘হুজ্জাতুল্লা-হিল বালিগাহ ২/১০ পৃষ্ঠা) ।


হানাফী মাযহাবের অপর প্রখ্যাত পন্ডিত আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী তার ‘মাওযুয়াতে কাবীরের’ মধ্যে লিখেছেন, অর্থাৎ নামাযে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় দু’হাত উত্তোলন না করা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস।

রাফ‘উল ইয়াদায়েনের ফযীলত সম্পর্কে ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইসহাক বিন রাহ্ওয়াই বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী উকবাহ বিন আমের (রা.) বলেন, রুকূর সময় এবং রুকূ হতে উঠার সময় হাত উত্তোলন করায় প্রত্যেক ইশারার জন্য দশটি নেকী রয়েছে। (নায়লুল আত্ত¡ার ৩/১২)। আর যদি কেউ রাসূল (ছা.) এর সুন্নাতের মহব্বতে একটি নেকীর কাজ করেন, আল্লাহ বলেন, আমি তার নেকী দশ থেকে সাত শত গুণে বর্ধিত করি। (বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬)।

মূলত শত শত ছহীহ হাদীছের বিপরীতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া বাকী তিন সময়ে রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করার পক্ষে প্রধানতঃ যে চারটি হাদীস পেশ করা হয়ে থাকে তার সবগুলোই বানোয়াট এবং বাতিল বলে মতামত প্রদান করেছেন বিশিষ্ট মুহাদ্দিস এবং আলেমগণ।


রাসুলুল্লাহ (ছা.) বলেন, ‘তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ…’ (বুখারী হা/৬৩১,৬০০৮, ৭২৪৬) সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সকল আমল এবং ইবাদত রাসুলুল্লাহ (ছা.) এর তরীকা অনুযায়ী সম্পাদন করা কেননা আল্লাহ্তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুকুম মান্য করল সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। (সূরা : আন-নিসা, আয়াত ৮০)।

তিঁনি আরো বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে উত্তম নমুনা। (সূরা : আল-আহযাব, আয়াত ২১।) সুতরাং আল্লাহ্তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য আমাদের প্রত্যেকটি আমল এবং ইবাদত সঠিক এবং সত্যটাকে জেনে বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

সহায়ক গ্রন্থ সমূহ :
১. ছালাতুর রাসূল (ছা.), মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
২. রফউল ইয়াদাইন রাসুল (স.) এর জীবন্ত সুন্নাত প্রমানস্বরুপ ৮০টি দলীল,
শায়খ আবদুস সাত্তার কালাবগী
৩. জুযউ রফইল ইয়াদাঈন, মূল : মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী (রহ.),
ভাষান্তর : খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান।

https://www.youtube.com/watch?v=WGVjKqK_Rpw&list=RDWGVjKqK_Rpw&start_radio=1

 

মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করে পুরস্কার পেল ৭ শিশু



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »