ভুল অপারেশন ও ডাক্তারদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু
মে ০৩ ২০২৪, ০৪:০৭
বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে অপ- চিকিৎসা ,ভুল অপারেশন ও ডাক্তারদের অবহেলায় সুমাইয়া নামে এক রোগীর মৃত্যুর কারনে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ খালিদ মাহমুদ ও ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে ওই রোগীর স্বামী লিখিত অভিযোগ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে।
২ মে ২৪ তারিখ স্বাস্থ্য সচিবের নিকট আবেদন করেন সুমাইয়ার স্বামী আব্দুল্লাহ আল আমান।
লিখিত আবেদনে ঐ দু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক বিচার ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয়।জনাব আমান বলেন, ওই দু’চিকিৎসকের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানাই। তাদের হাতে সুস্থ্য মানুষ মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব বরন করছে।তাদের আইনের আওতায় না আনা হলে তাদের হাতে দুর্ঘটনার সংখ্যা দীর্ঘ হতেই থাকবে।
আমানের দাবি, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই সুস্থ্য সুমাইয়াকে অপারেশন করা হয়।অপারেশনটি করা হয়েছে স্রেফ টাকার জন্য। নরমাল ডেলিভারীতে একটি মৃত শিশু জন্ম নেয়ায় তাদের বিল কম হবে তাই টাকার জন্য ভুল অপারেশন, অপচিকিৎসা ও অবহেলার কারনে সুমাইয়ার মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগে আব্দুল্লাহ আল আমান উল্লেখ করেন,আমার স্ত্রী সুমাইয়াকে বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করাই।২৯ এপ্রিল দিনগত রাতে আমার স্ত্রীর নরমাল ডেলিভারীতে একটি মৃত সন্তান প্রসব করে।ডাঃ খালিদ মাহমুদ ও ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক আমার স্ত্রীকে অপারেশন করেন।ভুল অপারেশন ও অবহেলায় মৃত্যু বরন করে। আবেদনে আরো উল্লেখ করেন,আমি পুরো ঘটনার তদন্ত পুর্বক ডাঃ খালিদ মাহমুদ ও ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হকের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক বরিশালে ২০১৪ সাল থেকে কর্মরত।ডাঃ খালিদ মাহমুদ ও ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক এই দুজন ডাক্তারই দালাল নির্ভর প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছে। আমরা তাদের দুজন ডাক্তারের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান স্বাস্থ্য সচিবের নিকট।
জনাব আমান বলেন,ডাঃ খালিদ মাহমুদ ও ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপারেশন করেন সুমাইয়াকে।ভর্তি এবং মৃত সন্তান প্রসব করার পরেও সুমাইয়া সুস্থ্য ও স্বাভাবিক ছিলো।অপারেশন করার পরে অবস্থার অবনতি পরে মুত্যু হয়।
আব্দুল্লাহ আল আমান বলেন, ওই দুজন ডাক্তারই আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।সুমাইয়ার অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক পরে ডাঃ খালিদ মাহমুদ পালিয়ে যায় বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে । আমান বলেন , আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করে বা আমাদের মতামত না নিয়ে সুমাইয়াকে অপারেশন করা হয়।
আমান বলেন, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দায়ীদের শাস্তির দাবি করছি। এদিকে সুমাইয়ার মৃত্যুর পরে তার সকল কাগজপত্র গায়েব করা হয়।কাগজপত্র চাইলে দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জনাব আমান বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায়
১ মে ২৪ তারিখ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ খালিদ মাহমুদ বলেন, আমি এ বিষয়ে আগেই বক্তব্য দিয়েছি। ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হকের মোবাইলে এ বিষয়ে জানতে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
বরিশালে রোগী নিহত ও পঙ্গু করনের পরেও সর্বরোগের ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হক বহাল তবিয়তে
প্রসঙ্গগত, ডাঃ খালিদ মাহমুদ বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে এবং ডাঃ মুন্সি মুবিনুল হক বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আবাসিক মেডিকেল সার্জন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এ দু’জন ডাক্তার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দালাল প্র্যাক্টিসে জড়িত।তারা দালালদের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখেন এবং রোগীদের অপারেশন করান।
উল্লেখ্য,২৯ এপ্রিল সুমাইয়াকে বরিশালের কালিবাড়ি রোডস্থ বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতেই অপারেশন করা হয় ওই হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হলে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়।শেষ রাতে হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যু বরন করেন সুমাইয়া। শুরু থেকেই পরিবারের অভিযোগ, কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ভুল অপারেশন ও অবহেলায় বাঁচানো যায়নি সুমাইয়াকে। রোগীর মৃত্যর আগে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি মৃত শিশু প্রসব করে সুমাইয়া।