২০১৩ সালের জুলাই মাস। তখন আমি স্থানীয় সরকার প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী হিসাবে কর্মরত । একদিন বিকালে সনত দাদা আমাকে ফোন করে কমিউটিনি লিগ্যাল সার্ভিসের দ্বায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন, আমি প্রথমে না বলেছিলাম, কারণ আমার মনে হয়েছিলো আমি অত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমিনুল ভাই ও টুটুল ভাই আমাকে বুঝালেন বড় দায়িত্ব নিতে। রেজা ভাই ও দাদা অনেক স্বপ্ন দেখালেন, রাজি না হয়ে পারলাম না স্ত্রীর চাকুরি ছাড়িয়ে চরফ্যাসন চলে গেলাম। প্রিয় প্রকল্প ছেড়ে সিএলএস প্রকল্পে যোগ দিলাম। ১০৭ জন সহকর্মী । ৩ জন এ্যাডভোকেট । ২৫টি ইউনিয়ন । গ্রাম আদালত, স্থানীয় সরকার, নিম্ন আদালতের বিচারকগণের সাথে সরাসরি কাজ করার চ্যালেঞ্জ অনেক ।
বছর ঘুরতেই নিজেকে কিছুটা যোগ্য প্রমান করার প্রতিদান হিসাবে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব পেলাম ভোলা ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আঞ্চলিক টিম লিডার হিসাবে, সাথে আবার যোগ হলো রেডিও মেঘনার অপারেশন ।
দাদা একদিন ফোন করে বল্লেন, ‘‘জহিরুল বিএমটিসি’র দলিল হচ্ছেনা তুমি বিষয়টি দেখো’’ দাদার কাছে থেকে দায়িত্ব পাওয়া মানে তো অনেক কিছু। হক ভাইর কাছ থেকে পুরো বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম । হক ভাই জানালেন এই কাজটি নিয়ে যারা মাঠে নেমেছে তারা বদনাম নিয়ে ফিরেছে‘‘। হেসে বলেছিলাম ‘‘ আমি তো নামই চাইনা তো বদনাম আর আসবে কোথা থেকে, যার শাহস নেই তাকে কেনো ভয় দেখাচ্ছেন’’ । হক ভাই হাসলেন। আমি সকল বিষয়টি নিয়ে শামীম ভাই ও হীরা ভাই’র সাথে আলোচনা করতে সাচ্ছন্দবোধ করলাম তাদের উৎসাহে আমি জমি সংক্রান্ত সকল বিষয় রেজা ভাই ও দাদার সাথে খোলামেলা আলোচনা করার ফরে তারা মূল বিষয়টি বুঝলেন এবং আমাকে এক প্রকার ক্ষমতা দিলেন। এর পরে দাদা, সাহাবুদ্দিন ভাই, কামাল ভাই, বাবর ভাই, আমিনুল ভাই, শহর আলী ভাই ও হক ভাইর প্রচেষ্টায় রেডিও মেঘনা উদ্বোধনের দিনে বিএমটিসির দলিল হলো। পরের দিন হক ভাইকে হেসে বলেছিলাম ‘‘ দলিল হয়েছে, হক ভাই ।
একটি বড় প্রকল্প এটি নিয়ে প্রাথমিক অবস্থায় বেশ ঝামেলা হচ্ছিল ডোনারের সাথে । ২-৩ মাসের মাথায় এটি খুবই সুন্দর ও সাবলিলভাবে বাস্তবায়িত হওয়া শুরু করলো । এই টিমে আমরা পেয়েছিলাম ৪জন সিনিয়র সহকর্মী শামীম ভাই, হীরা ভাই, রাশিদা আপা ও নীলিমা দিদি যারা আমার চেয়েও সিনিয়র ছিলেন, আশা করি তারা আমার সাথে কাজ করে কোনো প্রকার বিব্রতবোধ করেন নি সুপারভাইজার হিসাবে তাদের কাছ থেকে সবসময় সম্মান পেয়েছি। কারণ আমি ক্ষমতাকে প্রয়োগ করার চেয়ে উপভোগ করতে সাচ্ছন্দবোধ করি সবসময়। প্রকল্পটি ঠিকঠাকভাবে বাস্তবায়ন করতে টুটুল ভাই ছিলেন অগ্রপথিক । শুরুতে খলিল ভাই ও পরে আলী আব্বাস দক্ষতার সাথে সামলেছেন হিসাব ও অডিট ।
হঠাৎ করে আইটিডিসি নিয়ে ঝামেলা শুরু হলো , সকল ঝামেলা সামলাতে সিএলএস টীম আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন কেউ কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। লক্ষ্য করলাম দক্ষিণ চর আইচা অফিসে বিদ্যুতের মিটার নেই। দাদার অনুমোদন নিয়ে নুরুল ইসলাম ভাইর সহযোগিতায় দ্রুত মিটার আনা হলো।
কিছুদিন পরে রেজা ভাই ফোন দিয়ে জানালেন চার্চের কাছে ওটি হস্তান্তর করে দিতে । চার্চ থেকে লোক আসছে আর আমাকে সংস্থার পক্ষ থেকে পাওয়ার দেওয়া হলো, হস্তান্তর করবো সেই সময় আমার মনে হলো যার কাছে হস্তান্তর করবো তার বৈধতা চেক করা দরকার । তার কাছে প্রমান চাইলে সে একটি ভিজিটিং কার্ড ছাড়া কিছু দিতে পারলোনা । আমার কাছে বিষয়টি একটু ভিন্ন মনে হলো । রেজা ভাইকে জানালাম, রেজা ভাই সবসময় মাঠের কথার খুব গুরুত্ব দেন তিনি চার্চের কাছে লিখিত দিতে বল্লে তারা তা দিতে না পারায় আমি অফিসে ফিরে আসলাম । এর পরে অনেক কিছু হয়েছে আইটিডিসি নিয়ে।
আজ সংস্থা সেই সম্পদের মালিক, আমি আনন্দীত । আজ অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো । সেই সময় ব্যস্ত বিএমটিসি, ১০৭ পরিবারের একটি বৃহৎ প্রকল্প, পুরো ভোলা জেলা সামলাতে পেরেছিলাম কিছু দক্ষ কর্মী ছিলো বিধায় যার মধ্যে একজন শামীম ভাই । অনেক আগেই সংস্থা ছেড়ে গেছেন কিন্তু মনে হয়েছিলো কাছেই আছেন, কিন্তু আজ তিনি পরপারে চলে গেলেন । একদিন এভাবে অনেকই চলে যাবে কিন্তু তাদের অবদান থেকে যাবে যুগ যুগ ধরে ।
আসুন চাকুরী বা ক্ষমতাবলে কাউকে যেনো মনে কষ্ট না দেই । কারো যেন ক্ষতির চিন্তা না করি, আমার আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আল্লাহ শামীম ভাইকে ক্ষমা করে জান্নাত নসিফ করুক ।
আরো পড়ুন
ভিডিও
https://www.youtube.com/watch?v=vxZpQhGWMJY