করোনা মোকাবেলায় প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে সঠিক : মোঃ জহিরুল ইসলাম

Spread the love

করোনা মোকাবেলায় প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে সঠিক

করোনা ভাইরাস দুর্বল হয়নি বরং আমাদের বেড়েছে সাহস, কমছে সচেতনতা । যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং শরীরে শক্তি আছে তারা অল্প কষ্টেই করোনা মোকাবেলা করে প্রচার করছেন করোনা কোন ব্যপারইনা করোনা দুর্বল। যারা একটু দুর্বল, দীর্ঘ দিনের ব্যাধি আছে তারা জানেন করোনা কতটা শক্তিশালী, অনেকেরই ফুসফুসকে ৫০-৭০% ক্ষতিগ্রস্থ করে দিচ্ছে যা সেড়ে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমাদের পরিচিত মামুনের স্ত্রীর ৫০% ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলেছে সে তিনমাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা নেগেটিভ হলেও তার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নিয়মিত যুদ্ধ করতে হচ্ছে যা আরো কতদিন লাগবে জানা নেই ।

মনে রাখতে হবে করোনা ভাইরাসের সাথে দেহের যে যুদ্ধ চলে সেখানে একটি পক্ষ পরাজিত হয় অপর পক্ষ জয়ী হয়। হয়তো করোনা ভাইরাস নয়তো শরীর । শরীর জয়ী হলেও শরীরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা সারিয়ে তুলতে নিতে হবে কিছু পদক্ষেপ ও বিশ্রাম। অবশ্যই তা হতে হবে চিকিৎসকের অথবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ।

এবার আসুন জেনে নেই করোনার উপসর্গ দেখা দিলে কীভাবে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে :

মনে রাখতে হবে সেবা দিবেন ডাক্তার ও সরকারী লোকজন বাকিরা দিবেন পরামর্শ । তবে নিজেকে সবসময় নিতে হবে সঠিক সিদ্ধান্ত:

১.   করোনা টেষ্ট : একজনের শরীরে যখন উপসর্গ দেখা দিলো তখন কিছ কাছের লোকেরা পরামর্শ দিলো টেষ্ট না করানোর জন্য । তাদের যুক্তি ছিলো টেষ্ট করলে লোকে জানবে, হাসপাতালে গেলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, মানসিক চাপ বাড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি। ডাক্তার ও নার্সকে  ফোন দিয়ে জানানোর পরে তারা উভয়েই টেষ্ট করার জন্য পরামর্শ দিবে। অবশ্যই টেষ্ট করাতে হবে কারণ টেষ্ট করলেই কেবল সঠিক চিকিৎসা, সেবা ও সতর্ক থাকা সম্ভব। এছাড়াও প্রয়োজনে হাসপাতালের চিকিৎসা নেওয়ার পথও খোলা থাকে। সুতরাং উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই টেষ্ট করাতে হবে ।

২.   বাসায় অক্সিমিটার ও থার্মোমিটার থাকা জরুরী : বাসায় অবশ্যই একটি অক্সিমিটার ও থার্মোমিটার থাকা জরুরী যা আপনার শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তে অক্সিজেন সিচুরেসন নিরুপনে সহায়তা করবে এবং আপনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে সহযোগিতা করবে কারণ এই সময় আপনি ইচ্ছা করলেই সরাসরি ডাক্তারের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন না নিচ্ছেন ফোনে সুতরাং ডাক্তারকে শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তে অক্সিজেন লেভেল  জানাতে হবে যার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা দিবেন। এর পরে ভেবে রাখুন অসুস্থ হলে কোথায় ভর্তি করবেন । সম্ভব হলে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের বন্দবস্ত করে রাখুন ।

৩.   বিভিন্ন চাপ সামলাতে মানসিক প্রস্তুতি : টেষ্ট ফলাফল পাওয়ার পরে প্রচন্ড চাপ অনুভব হতে পারে সেজন্য প্রস্তুত হতে হবে, আপনি টেষ্ট দিয়েছেন বিধায় আপনি জেনেছেন আপনি পজেটিভ অনেকে টেষ্ট দেয়না কিস্তু সে পজেটিভ, আপনি সঠিক কাজটি করেছেন এখন আপনার দায়িত্ব হলো নিজেকে পরিবারের সদস্য ও অন্যদেরকে সুরক্ষিত রাখা ও নিজেকে নেগেটিভ করা, শুধু মাত্র ডাক্তারের পরামর্শে চলবেন বাকিদের পরামর্শ শুনবেন। সাথে সাথে আপনি ভেবে নিবেন কিছু লোক আপনাকে মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করবে তাদের চিহ্নিত করুন তাদের ফোন ধরা থেকে বিরত থাকতে পারেন ধরলেও তেমন গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই। যার কথা শুনলে আপনার ভালো লাগবে তার সাথে কথা বলুন আবারো বলছি উপদেশ মানবেন শুধু ডাক্তারের বাকিদের উপদেশ শুনবেন।

ধরুন পজেটিভ হওয়ার পরে একজন ফোন দিয়ে বল্লেন ‘‘ কিভাবে ঘটাইলেন, বাচ্চাটারও ঘটাইলেন ওতো কিছুই বলতে পারবেনা, কিযে হবে কিছুই জানিনা । এটি মানুষকে নাস্তানাবুদ করে আমার পরিচিত একজনের হয়েছিলো জানে আর জান রাখেনা চেহারাও কালো হয়ে যায় কষ্টে’’।  এগুলে নিয়ে ভাববেন না ।

৪.  চিকিৎসা ও সেবা : শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ঔষধ নেওয়া জুরুরী কারণ একজনের শরীরে এক এক ধরনের ঔষধ কাজ করে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ নেওয়া জরুরী নয় ।

৫.  নিজেকে বিশ্রামের পাশা-পাশি ব্যস্ত রাখুন : শুধু পজেটিভ ভেবে দিন পার করে দিলে হবেনা । নিজের পছন্দ মতো গান শুনুন, লেখা-লেখি করুন, শারীরিক ব্যায়াম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন । নিজেকে ব্যস্ত রাখুন যে কাজটি করতে আপনার ভালো লাগে সে কাজে, যথা সম্ভব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় । পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে । পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ব্যায়াম এর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। রেডিও শুনুন, বই ও পত্রিকা পড়ুন ।

৬.   খাবার সচেতনতা : করোনা থেকে সেড়ে তুলতে খাবারের কোন বিকল্প নেই। খাবারে পানি ও আঁশ জাতীয় খাবার বেশী খেতে হবে । ফল, ডাব, পাশা-পাশি সবজি, ডিম ও মুরগী ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশী খেতে হবে। বুঝতেই পারছেন পুষ্টিকর খাবার খাবেন যে খাবারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শরীরে শক্তি জাগাবে ।

৭.   পরিকল্পনা করুন : পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে করোনা চলাকালীন সময় কখন কি করতে হবে । কোন সময় কোন ঔষধ সেবন করতে হবে। জুরুরী চিকিৎসা নিতে হলো কোথায় কীভাবে যাবেন, অক্সিজেন দরকার হলে তার ব্যবস্থা কী হবে ইত্যাদি। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।

করোনা থেকে শুস্থ হওয়ার জন্য পরিবার, আত্নীয়-স্বজন কর্মস্থলের ইতিবাচক ভূমিকা খুবই জরুরী :

১.             পরিবার : পরিবারে যারা আক্রান্ত নয় তাদের আলাদা করে দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, ঔষধ, গরম পানি, চা, উপকরণ ইত্যাদি যথা সময়ে দিতে হবে এবং ইতিবাচক আচরণ করতে হবে ।

২.             আত্নীয় স্বজন : একক পরিবারে যারা সবাই আক্রান্ত বা পাক করার লোক নেই তাদেরকে খাবার সরবরাহ করা উচিত । প্রয়োজনীয় ঔষধ ও বাজার করে সহযোগিতা করা দরকার ।

৩.            কর্মস্থল : যদি সম্ভব হয় করোনা আক্রান্ত স্টাফকে আর্থিক সহযোগিতা কারণ এই সময় টাকার খুবই দরকার হয়, অনেক সময় স্টাফদের কাছে টাকা থাকেনা যদি কোন পাওনা টাকা থাকে বা বীল জমা থাকে এই সময় পরিশোধ করে দিতে পারেন। ঔষধ খুব একটা দরকার হয়না তাই চিকিৎসা খরচ না দিয়ে আক্রন্ত হলে বেসিকের একটি অংশ যেটা হতে পারে ২০% থেকে ৫০% সেটা দিয়ে দিতে পারেন। করোনা পজেটিভ হলে ডাব, ডিম, সবজি, মাংস ও  ফল কিনতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। পাশা-পাশি ইতিবাচক আচরণ করুন । কর্মীদের সেবার জন্য ডাক্তারদের সাথে চুক্তি করে রাখতে পারেন ।

সবশেষে একটি বিষয় হলো সহযোগিতামূলক মনোভাব রাখা, মানবিক সম্পর্ক অটুট রাখা যা বিপদে সহমর্মীতা তৈরী করে এবং মানসিক চাপমুক্ত রাখে এজন্য পরিচিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন, মটিভেশনাল স্পীকারের সাথে সম্পর্ক রাখুন, সহকর্মী, আত্নীয় স্বজনদের সাথে সুম্পর্ক বজায় রাখুন যারা একে অপরের বিপদের এগিয়ে আসবে।

মোঃ জহিরুল ইসলাম



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »