১৬ অক্টোব মনোরমা বসু মাসিমার প্রয়াণ দিবস

মুক্তিযোদ্ধা মনোরমা বসু মাসিমা

Spread the love

মুক্তিযোদ্ধা মনোরমা বসু মাসিমা : প্লাবনী ইয়াসমিন

উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, নারীমুক্তি আন্দোলন, মুক্তি সংগ্রামের অনন্য পথিকৃৎ মনোরমা বসু। ভারতবর্ষজুড়ে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন চলার সময় যখন স্বদেশিরা রাস্তায় গান গেয়ে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল তখন সেই মিছিলেই হাতে হলুদ রাখি বেঁধে স্বদেশি আন্দোলনে দীক্ষা নেন তিনি। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ চৌদ্দ বছর বয়সে বরিশালের বাঁকাই গ্রামের জমিদার চিন্তাহরণ বসুর সঙ্গে তার বিবাহ হয় এবং স্বামীর প্রত্যক্ষ সমর্থনে তিনি স্বদেশি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। বরিশালে অবস্থানকালে মনোরমা স্বদেশি আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং নারী অধিকার রক্ষায় ‘সরোজনলিনী মহিলা সমিতি’র শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম মহিলা সংগঠন। এ সমিতির মাধ্যমেই তিনি নারী সমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ ভারতজুড়ে যখন চলছিল আইন অমান্য আন্দোলন। এ আন্দোলনে মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি কারাবন্দি হন। শাস্তি হিসেবে ৬ মাস জেল ও ১৫০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। জেলে থাকাকালীন তিনি ঊর্মিলা দেবী (দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বোন), জ্যোতির্ময়ী দেবী প্রমুখ প্রখ্যাত কংগ্রেস নেত্রীর সান্নিধ্য লাভ করেন।
মনোরমা বসু ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সমাজসেবক। তিনি অনাথ ও দুস্থ মহিলাদের, বিশেষ করে বিধবা ও কুমারী মেয়েদের আশ্রয়দানের জন্য বরিশালের কাউনিয়ায় ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র বরিশাল জেলা শাখার অন্যতম নেত্রী ছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ খ্রিস্টাব্দ দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সময় লঙ্গরখানা, চিকিৎসালয় ও উদ্ধার আশ্রম স্থাপন এবং পুনর্বাসন কাজে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন নারী আন্দোলন, সমাজসেবা ও রাজনৈতিক কাজের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বরিশাল জেলা শাখা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনকে গতিশীল করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পরিষদের সহসভানেত্রী ছিলেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে মনোরম বসু মাসিমার সহযোদ্ধা ছিলেন বেলা নবী।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ দেশ ভাগের পর নতুন শাসকদের শাসন ও শোষণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ বরিশালের খাদ্য-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তিনি এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন এবং সেই সঙ্গে জননিরাপত্তা আইনে আরো তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ ২৫ এপ্রিল মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে মনোরমা বসু আত্মগোপন করেন এবং সে অবস্থা থেকে আত্মপ্রকাশের পর তিনি ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’-এর কাজে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করেন। একই সঙ্গে গড়ে তোলেন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লীকল্যাণ অমৃত পাঠাগার (শহীদ অমৃতলালের নামে), আর শিশুদের জন্য মুকুল মিলন খেলাঘর। তার অবর্তমানে মাতৃমন্দিরের কার্যনির্বাহের জন্য নিজের সব সম্পত্তি মন্দিরের নামে দান করে যান। ১৯৬২ ও ৬৪’র গণআন্দোলন এবং ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১খ্রিস্টাব্দ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মনোরমা বসু প্রথমে দেশেই আত্মগোপন করে থাকেন। পরে জুন মাসে চলে যান ভারতে। সেখানে গিয়েও তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রচারণা, অর্থ সংগ্রহ, নারীদের সংঘটিত করা ইত্যাদি কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী। তারা দুজন মিলে সারা ভারতে বহু সভা করেছেন।দেশ স্বাধীন হলে জানুয়ারি মাসেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশ পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত হন। মহিলা পরিষদের উদ্যোগে বয়স্কা মহিলাদের জন্য কালীবাড়ি রোডের চণ্ডীসদনে স্থাপন করেন বৈকালিক স্কুল।
১৫ আগস্টের পর রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন এবং অস্থিরতার জন্য পার্টির সিদ্ধান্তে আত্মগোপন করেন। সে অবস্থাতেও দেশপ্রেম, সমাজসেবা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণে দলমত-নির্বিশেষে সবাই তাকে ‘মাসিমা’ বলে ডাকত। বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী, দৃঢ়চেতা, পরোপকারী এবং আদর্শনিষ্ঠ মনোরমা বসুর সমগ্র জীবন ছিল দেশপ্রেমে নিবেদিত। তিনি ছিলেন সাম্যবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত এবং যেকোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ।
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ মহাত্মা গান্ধী বরিশালে যান। সে সময় তার বক্তব্য শুনে মনোরমা বসু অনুপ্রাণিত হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ মাহাত্মা গান্ধী রাজনৈতিক প্রচারণা এবং তহবিল সংগ্রহের সংগ্রহের জন্য বরিশাল এলে মনোরমা বসু নিজের গহনা দান করেন। বরিশালে গান্ধীর সাথে এই সাক্ষাৎ তাঁকে আরো উজ্জীবিত করে তোলে। তিনি ব্রিটিশদের শৃঙ্খল থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপ্লবী মনোরমা বসু মাসিমা নামে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারতে কংগ্রেসের ডাকে শুরু হয় আইন অমান্য আন্দোলন করায় জীবনে প্রথম ৬ মাসের জেল ও ১৫০ টাকা জরিমানা হয়। প্রায় ছয় মাস পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আরো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করেন।তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ বরিশাল শহরের কংগ্রেস নারী কর্মীদের সাথে যোগ দেন ও ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পরবর্তীকালে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হন।
১৯৩৩-৩৪ খ্রিস্টাব্দ তিনি নিজ বাড়ির বারান্দায় চালু করেন মেয়েদের বিদ্যালয়। নিজের মেয়েসহ আরো ৫ জন মেয়েকে নিয়ে শুরু করেন স্কুলের কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে এই বিদ্যালয়ই বিখ্যাত ‘মাতৃমন্দির’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৪৩-৪৪ খ্রিস্টাব্দে বাঙলায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ছড়িয়ে পড়লে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসনকাজে মানুষের পাশে দাড়ান। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ মে মাসে বরিশালে নিখিলবঙ্গ মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সব কাজ তার নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছিল।তিনি নিজের বাড়িতে পাড়ার ও নিজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলেন মাতৃমন্দির সরকারী আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি বাড়িতে বাড়িতে মুষ্টি-ভিক্ষার ঘট বসালেনমাতৃমন্দিরের এই কঠিন কাজ করার পাশাপাশি মনোরমা বসু রাজনৈতিক কাজেও কঠোর পরিশ্রম করেন এসময়।তিনি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ কলকাতা শহরের মতো বরিশালেও মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি গড়ে তোলেন মনোরমা বসু। তিনি এর প্রথম নির্বাচিত সম্পাদক হন।
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সারা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে দেখা দিল দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিকার চেয়ে ৫ জুন বুভুক্ষু মেয়েদের নিয়ে বরিশালে মিছিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের সামনে। ফলে পুলিশ তখন তাদের উপরেও লাঠিচার্জ করে। মহিলা সমিতির ৪ জন নেত্রীসহ ৮ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় প্রায় ১০ মাস বিনাবিচারে কারাগারে আটক ছিলেন। পরে ৪ বছরের জেল হয় এবং জেল থেকে তিনি ছাড়া পান ১৯৫২খ্রিস্টাব্দে ২৫ এপ্রিল।মুক্তিলাভের পর মনোরমা বসু মাসিমা ৫২’র মে মাসে ইস্পাত দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ভেঙে ফেলা মাতৃমন্দিরকে পুনরায় গড়ে তোলেন। এ সময় বিপ্লবী সত্যেন সেন গানের মাধ্যমে বরিশালে মনোরমা বসু মাসিমার ‘মাতৃমন্দির’র জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। কমিউনিষ্ট পার্টি তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করে।সাথে সাথে শুরু করেন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা কার্যক্রম। যুক্ত হন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী কাজে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্বামী চিন্তাহরণ বসু মারা যায়। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতনের পর পরই মনোরমা বসু মাসিমাকে ঘিরে আবার শুরু হয় পুলিশি হয়রানি ও ষড়যন্ত্র। কৌশলে গ্রেপ্তার এড়ান তিনি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপনে থাকেন। ইতোমধ্যে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসে সদস্য পদ পান। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময়ে বরিশালের বিভিন্ন জায়গায় পার্টির কাজে নিজেকে নিয়েজিত করেন। পূর্বপাকিস্তানে পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁর ওপর থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা উঠে যায়।
১৯৬২-৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বৈরাচার আইয়ুব খান বিরোধী সকল আন্দোলনে তিনি ছাত্র-যুব ও পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। এ সকল আন্দোলনে তিনিই একমাত্র মহিলাদেরকে সংগঠিত করণে আবদান রাখেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে দাঙ্গাবিরোধী কর্মকাণ্ডে মাসিমা জোরদার দায়িত্ব গ্রহণ করে তা যথাযথভাবে পালন করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে গণ-অভ্যুত্থানে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয়। তিনি সমগ্র বরিশাল জুড়ে এ সময় আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করেন।১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের দাঙ্গাবিরোধী কর্মকাণ্ডে মাসিমা জোরদার দায়িত্ব গ্রহণ করে তা যথাযথভাবে পালন করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের গণ-অভ্যুত্থানে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয়। তিনি সমগ্র বরিশাল জুড়ে এ সময় আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করেন। ১৯৭০খ্রিস্টাব্দে তিনি ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় মহিলাদের সংগঠিত করে ত্রাণকার্য বিতরণ ও আর্তমানুষের সেবায় নিজেকে নিয়েজিত করেন। ৭০’র নির্বাচনে তিনি পার্টির প্রার্থীর পক্ষ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি পিরোজপুরের নিরোদ নাগের সাথেও পার্টির কাজ করেন।১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মহিলা পরিষদ বরিশালের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। এবছর দেশের দক্ষিণ উপকূল জুড়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়। মনোরমা দেশের নানাস্থানে গিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করেন এবং তা সন্দ্বীপ ও পটুয়াখালির নিম্নাঞ্চলে বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে মনোরমা বসুর ইচ্ছা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করবেন, কিছু কথা বলবেন। যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ।উনি ঢাকা গেলেন,কলিং বেল দিতেই,বঙ্গবন্ধু দরজার কাছে এসে মাসিমাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের টেবিলের উপরেই বসালেন। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্ন, তুমি কী চাও মাসি? কেন এসেছ।মাসি বললেন, আমি কিছু চাই না। তুমি আমার দুটা কাজ করে দেবে।বলো মাসি কী কাজ?বরিশালে আমার মাতৃমন্দির স্কুলটা তুমি নিয়ে নাও, আর বাকাই জমিদার বাড়ি আমার শশুর বাড়িটায় একটা হাসপাতাল বানিয়ে দাও।একথা শুনে, বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, “দেখ, দেখ, সবাই আসে শেখ মুজিবের কাছ থেকে নিতে আর আমার মাসি এসেছেন আমাকে দিতে”।
ফল যা হওয়ার হয়েছে। মাসিমা’র ‘মাতৃমন্দির’ এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মনোরমা বসু কল্যাণ ট্রষ্টের পক্ষে এই বিদ্যালয়ের জমি সরকারকে দেওয়ার দলিলে স্বাক্ষর প্রদান আজও আমাদের তৃপ্তি দেয়। বাকাই জমিদার বাড়ির হাসপাতাল টা এখন ও হয়নি।আজ বঙ্গবন্ধু বেচেঁ থাকলে হয়তো হয়ে যেতো, মাসিমার স্বপ্নের হাসপাতাল।১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সোভিয়েত নারী কমিটির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে রাশিয়া ভ্রমণ করেন।
১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি বার্ধক্য আর নানা জড়ায় পীড়িত হতে থাকেন।মনোরমা বসুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তাঁকে ১৯৯২খ্রিস্টাব্দে ১১ মার্চ মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করে। পরে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে শেরেবাংলা পদক (মরণোত্তর), ১৯৯৮খ্রিস্টাব্দে মহিলা পরিষদ কর্তৃক সম্মননা (মরণোত্তর), ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বেগম রোকেয়া পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। তাঁর রেখে যাওয়া যাবতীয় সম্পত্তি নিয়ে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে গঠন করা হয় ‘মনোরমা বসু মাসিমা স্মৃতি ট্রাস্ট’।
তিনি শুধু ভারতবর্ষের মুক্তির জন্য আন্দোলন করেননি, মানুষের মুক্তির জন্যও আন্দোলন করে গেছেন সারাজীবন। বরিশাল শহরে নিজ বাড়িতেই গড়ে তোলেন ‘মাতৃমন্দির’ । কুমারী মা, স্বামী পরিত্যক্তা, বিপথগামী ও আশ্রয়হীনা মেয়েদের আশ্রয়স্থল এই ‘মাতৃমন্দির’। অসহায় মেয়েদের স্বাবলম্বী করতে গড়ে তোলেন ‘নারী কল্যাণ ভবন’, শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য ‘মুকুল-মিলন খেলাঘর আসর’, সাধারণ মানুষের জ্ঞানের জন্য ‘পল্লীকল্যাণ অমৃত পাঠাগার’, নারী জাগরণ ও নারী অধিকার রক্ষায় ‘নারী আত্মরক্ষা সমিতি’, ‘মহিলা সমিতি’ ও ‘মহিলা পরিষদ’সহ নানা সংগঠন।নারী জাগরণের অন্যতম পুরোধা, মহিয়সী নারী মনোরমা বসু মাসিমা তাঁর কর্মবহুল সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ১৬ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। যদিও তাঁর শারীরিক মৃত্যু হয়েছে, তবুও তিনি বেঁচে আছেন আমাদের সমাজবদলের সংগ্রামী কর্মকাণ্ডে, আছেন তারুণ্যদীপ্ত মিছিলের অগ্রভাগে প্রেরণার অফুরন্ত উৎস হয়ে। কেননা, মৃত্যুতেই থেমে থাকে না জীবন। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন নারীমুক্তিসহ গণমানুষের মুক্তির কাফেলায়।সংগ্রামী জীবনের এই নারী আজ অনেকের কাছেই অপরিচিত। তবে তিনি কখনোই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। জন্ম থেকে জন্মান্তর বেঁচে থাকবেন সবার মাসিমা হয়েই।
আজ মনোরমা বসু মাসিমার আজ প্রয়াণ দিবস।
সরকারী আইন সহায়তা
https://www.youtube.com/watch?v=eXZyBLC_hLk

 



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »