উপকূলীয় মৎস চাষের গুরুত

জানুয়ারি ১৫ ২০২১, ১১:২৩

Spread the love

উপকূলীয় মৎস চাষের গুরুত

উপকূল পরিবেশগত দিক থেকে অন্যতম বৈচিত্রময় একটি ইকোসিস্টেম যা বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য জীবিকার অসংখ্য সুযোগ সৃষ্টি করে। উপক’লীয় মৎস চাষ তুলনামূলক ভাবে উন্মুক্ত এবং কম ব্যয়বহুল হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ এই কাজে আকৃষ্ট হয় যা প্রকারান্তরে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরণের জীবিকার সুযোগ তৈরী করে। উপক’লীয় এলাকা বিভিন্ন প্রজাতির সম্পদের আবাসস্থল হওয়ায় এটি নারী, পুরুষ এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং প্রকৃতিতে এই উন্মুক্ত প্রবেশাধীকার দরিদ্রদের জন্য নানাবিধ সুযোগ সৃষ্টি করে। উপক’লীয় এলাকার জলাশয় সমূহও এর সাথে সংশিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে যেখানে তারা খাবার জন্য এবং বিক্রয়ের জন্য মাছ আহরণ করেতে পারে, কিন্তু এটিই উপক’লীয় এলাকার সিস্টেমের সাথে এই এলাকার মানুষের স¤পৃক্ততার একমাত্র উপায়, কারণ এই ক্ষেত্রের বিশাল একটি অংশ, অর্থাৎ মৎসজীবিরা খুবই দরিদ্র যদিও তারা প্রতি বছর জাতীয় রাজস্ব আয়ে বিশাল অংকের অবদান রাখে।

ভোলা বাংলাদেশের মূল ভুখন্ড হতে বিচ্ছিন একটি জেলা শহর যা নদীর মোহনা দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং বাংলাদেশের দক্ষিণের সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তম একটি দ্বীপ। এটি বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত এবং এর আয়তন ৩৭৩৭.২১ কিঃমিঃ। এর উত্তরে বরিশাল এবং লক্ষীপুর জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে লক্ষীপুর এবং নোয়াখালী জেলা এবং মেঘনা নদী ও শাহবাজপুর চ্যানেল এবং পশ্চিমে পটুয়াখালী জেলা এবং তেতুলিয়া নদী অবস্থিত। কৌশলগত দিক থেকে সুবিধা জনক স্থানে অবস্থানের কারণে ভোলা জেলায় প্রতি বছর সর্বোচ্চ পরিমাণে উৎকৃষ্ট মানের ইলিশ আহরিত হয়। ভোলা জেলাকে পরিবেষ্টিত করে রাখা নদীসমূহ বিশেষত, তেতুলিয়া এবং এর শাখাসমূহ ইলিশের প্রজনন এবং বেড়ে ওঠার উত্তম স্থান। প্রজনন মৌসুমে ইলিশের স্থান পরিবর্তনের মূল নদীগুলোও ভোলা জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত।

যার ফলে, সারা বছর এই জেলার নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় এবং জেলেরা প্রতি বছর প্রায় ১১৪,৬৪৬ মেট্রিক টন ইলিশ সহ মোট ১৬০,৮০৮ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করে (বাংলাদেশ মৎস চাষ হ্যান্ডবুক-২০১৩-১৪)। এই পরিসংখ্যান আরও দেখায় যে, ভোলা কেবল মাত্র বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইলিশ উৎপাদনকারী (১১৪,৬৪৬ মেঃটঃ) জেলাই নয় উপরন্তু দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০% এর যোগানদাতা (মোট দেশজ উৎপাদন ৩৮৫,১৪০ মেঃটঃ) (বাংলাদেশ মৎস চাষ হ্যান্ডবুক-২০১২-১৩)। প্রতি বছর ইলিশ আহরণের এই হার ৮%-১০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে (ওয়ার্ল্ড ফিস)। আহরিত ইলিশের মোট মুল্য প্রায় ৫০,০০০ মিলিয়ন টাকা (৫,০০০ কোটি টাকা) যা জাতীয় অর্থনীতিতে ভোলা জেলার মৎস শিকারিদের বার্ষিক অবদান। ইলিশের পাশাপাশি এসব জেলেরা প্রতি বছর আনুমানিক ৪৫০ কোটি টাকা সমমূল্যের অন্যান্য প্রায় ৪৬,১১২ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করে থাকে। তথাপি, জাতীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখার পরেও ভোলা জেলার প্রায় ১.৫ লক্ষাধিক জেলেরা দেশের অন্যান্য জেলেদের মতই দরিদ্রই থেকে যায়।

লেখক,

মোঃ জহিরুল ইসলাম

উন্নয়ন কর্মী

 



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »