বিডিসিএসওপ্রসেসের সমাপনী অধিবেশনে বৈশ্বিক পর্যায়ে বহুজনীনতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের প্রতি আহবান

প্রতিস্থাপন নয়, জাতিসংঘকে সমতার ও স্বচ্ছতার সাথে স্থানীয় এনজিওকে নিয়ে কাজ করতে হবে

Media Photo_08 Oct

Spread the love

বিডিসিএসওপ্রসেসের সমাপনী অধিবেশনে বৈশ্বিক পর্যায়ে বহুজনীনতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের প্রতি আহŸান
প্রতিস্থাপন নয়, জাতিসংঘকে সমতার ও স্বচ্ছতার সাথে স্থানীয় এনজিওকে নিয়ে কাজ করতে হবে

ঢাকা, ১০ অক্টোবর, ২০২০। বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ের ৭০০ নাগরিক সংগঠনের প্লাটফরম বিডিসিএসওপ্রসেস-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের আজ ৩য় দিন এবং সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ‘৭৫ বছরে জাতিসংঘ: উন্নয়ন এবং টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকার এবং নাগরিক সমাজের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সমাপনী অধিবেশনে অংশ নিয়ে জাতিসংঘকে বহুপাক্ষিকতা বা বহুজনীনতাকে সমর্থন করার আহ্বান জানান বক্তাবৃন্দ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার এবং টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে, জাতীয় পর্যায়ে স্থানীয় এনজিওদের প্রতিস্থাপন না করে সমান অংশীদারিত্ব এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে তাদের সাথে কাজ করার আহŸান জানানো হয়, যাতে করে স্থানীয় এনজিও / সিএসও মানবিক সংকটে সাড়া প্রদান এবং এবং উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় রোহিঙ্গা সংকটসহ এধরনের কার্যক্রমে শুধুমাত্র মনিটরিং এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মধ্যেই জাতিসংঘের ভূমিকা সীমাবদ্ধ করা উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করা হয় অনুষ্ঠানে।

সমাপনী অধিবেশনটির সভাপতিত্ব করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নজরুল ইসলাম। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন বিডিসিএসওপ্রসেসের জাতীয় সমস্বয়কারী রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি যোগ দেন সোশ্যাল ওয়াচের (উরুগুয়ে) রবার্তো বিসিও, বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে যোগ দেন স্মৃতি প্যাটেল, এ৪ইপি, সুইজারল্যান্ড; কোয়েনরাড ভ্যান ব্র্যাব্যান্ট জিএমআই, সুইজারল্যান্ড; ডঃ দীপঙ্কর দত্ত, অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল; কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন; মোঃ রফিকুল ইসলাম, এফএনবি; আরিফুর রহমান, ইপসা; মহসিন আলী, ওয়েব ফাউন্ডেশন; আবু মোর্শেদ চৌধুরী, কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স, পালস এবং সিসিএনএফ; মিঃ, ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, বিইউপি; মমতাজ খাতুন, আশ্রয় ফাউন্ডেশন; এবং রূপান্তরের রফিকুল ইসলাম খোকন। অনুষ্ঠানে দেশের এলাকা থেকে তৃণমূলের আরে অনেক এনজিও/সুশীল সমাজ সংগঠন নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
শাহীন আনাম বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা জাতিসংঘের বহুপাক্ষিকতা ধরে রাখতে লড়াই করবো, তবে জাতীয় পর্যায়ে আমাদেরকে প্রতিপক্ষ ভাবা উচিৎ নয়, স্থানীয় এনজিওদের সঙ্গে সমতাভিত্তিক আচরণ করতে হবে। তিনি রোহিংগাদের মানব মর্যাদার প্রতি পূর্ণ সংহতি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে স্থানয়ি এনজিওদের নেতৃত্বকে অবজ্ঞা করা উচিৎ হবে না। নজরুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘ, সিএসও এবং বহুপক্ষিকুার একটি সমন্বয় থাকা উচিত, সরকার তৃণমূলের স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্বের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়।

রবার্তো বিসিও জাতিসংঘের অর্থায়ন বা তহবিল ব্যবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে জানান, জাতিসংঘের মোট বাজেটের মাত্র ২% মানবাধিকার রক্ষায় বরাদ্দ থাকে। সংস্থাটির মোট তহবিলের মাত্র ২০% শতাংশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের স্বাধীনতা আছে, ৮০% তহবিলই ব্যবহার করতে হয় দাতাদের পরামর্শে। ধনী দেশগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের প্রচেষ্টাগুলোকে বাধাগ্রস্ত করে, ধনী দেশগুলো নিজেদের সামরিক ব্যয়ের জন্য যেখানে বিশ্ব জনসংখ্যার জনপ্রতি ২৭৩ ডলার খরচ করে, সেখানে জাতিসংঘের জন্য জনপ্রতি তাদের বরাদ্দ মাত্র ৭ ডলার। জাতিসংঘের পুরো বাজেট নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের বাজেটের চেয়েও কম! নিউইয়র্ক পুলিশের বাজেট যেখানে ৫.২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে জাতিসংঘের মোট বাজেট ৩.০৭ বিলিয়ন ডলার। অতীতে ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরকে ইউএনডিপি-র কাছে রিপোর্ট করতে হতো, এখন তাকে রিপোর্ট করতে হয় ইউএন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে। যেহেতু জাতিসংঘের অর্থ করদাতাদের অর্থ, তাই জাতিসংঘকে জাতীয় সরকার এবং স্থানীয় জনগণের কাছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
স্মৃতি প্যাটেল বলেন, জাতিসংঘের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় শীর্ষ পর্যায়ে স্থানীয়এনজিওদের কথা শুনতে হবে, জাতিসংঘকে স্থানীয় অংশীজনদের কাছে সকল অর্থের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোয়েনরাড ভ্যান ব্র্যাবান্ড বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ অন্যান্য সকল সহিংসতার অবসানের জন্য রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ জরুরি। ড. দীপঙ্কর দত্ত বলেন, জাতিসংঘের সংস্কার সম্পর্কে কথা বলার পরিবর্তে তাদের প্রতিশ্রæতিগুলো কী, তারা তা কতটা পূরণ করেছে তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ বলেন, বাংলাদেশী এনজিওগুলির বর্তমানে এতটাই সক্ষমতা আছে যে, তাদের অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই, এটি একাত্তর নয়। আবু মোর্শেদ চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন যে, জাতিসংঘের এজেন্সিগুলি স্থানীয়করণের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আর বিলম্ব করবে না, স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকারের অংশগ্রণ ব্যতীত রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে সহিংসতার সংকট হ্রাস করা যাবে না।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »