খাদ্যমূল্যে যাকাতুল ফিতর আদায় বিধান
খাদ্যমূল্যে যাকাতুল ফিতর আদায় করব
এপ্রিল ২৫ ২০২১, ১১:২০
খাদ্যমূল্যে যাকাতুল ফিতর আদায় করব?
আজকের ঝলক নিউজ ।
মো. বাকী বিল্লাহ খান পলাশ
যাকাতুল ফিতর একটি অপরিহার্য ইবাদত যা শেষ রামাযানের সূর্যাস্ত পাওয়া প্রত্যেক মুসলমান নারী পুরুষ এমনকি এ সময় জন্ম গ্রহণ করা শিশুর জন্য আদায় করা ফরয। ইবনু ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসূল (ছা.) ক্রীতদাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথাপিছু এক ছা‘ খেজুর, যব ইত্যাদি খাদ্যবস্তু দ্বারা ফিৎরা দেয়াকে ফরয করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দান করেছেন’ (বুখারী হা/১৫০৩-৫)। তবে পেটের বাচ্চার জন্য যাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। কিন্তু কেউ যদি তা আদায় করে তবে তা সদাকা হিসাবে গণ্য হবে। উসমান (রা.) পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর আদায় করেছেন (যাকাতুল ফিতর, মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন, পৃষ্ঠা নং. ৫)।
মূলত এমন ব্যক্তির উপর ফিতরা ফরয যার বাড়ীতে সামান্য কিছু পরিমাণ খাবার আছে। এবং ফিতর বন্টনের খাত হিসাবে হাদীছে মিসকীন এবং ফক্বীরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে (আবু দাউদ হা/১৬০৯)।
যাকাতুল ফিতর মানুষ ব্যতীত অন্য কোন প্রাণীর খাদ্য দ্বারা আদায় প্রযোজ্য নয় কেননা যাকাতুল ফিতর শুধুমাত্র দরিদ্রদের খাদ্যের অভাব পূরণের জন্য, কোন প্রাণীর খাদ্যাভাব দূর করার জন্য নয়। (যাকাতুল ফিতর, মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন, পৃষ্ঠা নং. ৯)।
প্রধানত একটি দেশের প্রধান খাদ্য হিসাবে যা স্বীকৃত যেমন খেজুর, যব, কিসমিস, পনির, গম, চাউল ইত্যাদি তা যাকাতুল ফিতর আদায়ে বিবেচ্য হবে। অন্য কিছু নয়। কেননা রাসূল (ছা.) খাদ্যের মাধ্যমে যাকাতুল ফিতর আদায় করা ফরয করেছেন।
জানা থাকা প্রয়োজন
যাকাতুল ফিতর খাদ্য মূল্য বা টাকা দিয়ে আদায় করা যাবে না কেননা রাসূল (ছা.) এর যুগে মুদ্রার প্রচলন থাকা সত্বেও তিনি খাদ্যবস্তু দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন। (ফাতাওয়া উছায়মীন ১৮/২৭৯ পৃষ্ঠা)। এটা সাহাবিদের আমলও । আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা‘ পরিমাণ যব অথবা এক সা‘ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা‘ পরিমাণ পনির অথবা এক সা‘ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম (সহীহ বুখারী হা/১৫০৬)।
যাকাতুল ফিতর আদায়ের সময় :
যাকাতুল ফিতর আদায়ের দুটি সময় রয়েছে । একটি উত্তম অপরটি জায়েজ বা বৈধ সময়। উত্তম সময় হল ঈদের দিন সকালে ঈদের ছালাতের পূর্বে এবং অপরটি হলো ঈদের একদিন বা দু’দিন পূর্বে। তবে ঈদের ছালাতের পর ফিতরা আদায় হবে না কারণ তা রাসূল (ছা.) এর আদেশের পরিপন্থি। যে ব্যক্তি ঈদের ছালাতের পূর্বে তা (হকদারের নিকট) পৌছে দিবে তা যাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে অপরদিকে যে ব্যক্তি ঈদের ছালাতের পর পৌছে দিবে তা সাধারণ সদকা হিসাবে বিবেচিত হবে (ইবনে মাজাহ হা/১৮২৭, আবু দাউদ হা/১৬০৯)।
উল্লেখ্য যে, এক যাকাতুল ফিতর অনেক ফক্বীরকে দেয়া যাবে আবার অনেক ফিতর এক জনকেও দেয়া যাবে। যেহেতু রাসূল (ছা.) যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন কিন্তু হকদারকে কি পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেননি (যাকাতুল ফিতর, মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন, পৃষ্ঠা নং. ১০)।
যাকাতুল ফিতর এর পরিমান :
এবার আমরা আলোচনা করব যাকাতুল ফিতর এর পরিমাণ নিয়ে। পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে রাসূল (ছা.) মাথাপিছু এক ছা‘ পরিমাণ খাদ্যবস্তু দ্বারা ফিৎরা দেয়াকে ফরজ করেছেন সুতরাং এক ছা‘ বর্তমানের হিসাব অনুযায়ী আড়াই কেজি চাউলের সমান অথবা প্রমান সাইজ হাতের পূর্ণ চার অঞ্জলী চাউল (এক নযরে ছিয়াম ও রামাযান, ড. মুযাফফর বিন মুহসিন, পৃষ্ঠা নং. : ১৮)।
যাকাতুল ফিতর প্রদানের সময় প্রদানকারী ব্যক্তি যে এলাকায় অবস্থান করবেন সে স্থানের অভাবী এবং ফক্বীরকেই তিনি বেশী প্রধান্য দেবেন। যদিও তিনি উক্ত এলাকার স্থায়ী অথবা অস্থায়ী হোন।
জানা থাকা প্রয়োজন :
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমানে সরকার ঘোষিত অর্থ দ্বারা ফিতরা প্রদান করলে তা আদায় হবেকি? ‘বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন ও তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, (সুরা আল-ই-ইমরান, আয়াত নং. ৩১)। রাসূল (ছা.) বলেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা পরিত্যাজ্য (সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮)। তিনি আরো বলেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে (সহীহ বুখারী, হা/৭২৮০)। সুতরাং কোন আমল বা ইবাদতের মাধ্যমে আমরা যদি আল্লাহ্তায়ালার সন্তুষ্টি ও প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে চাই তবে আমাদের অবশ্যই রাসূল (ছা.) এর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা বাঞ্চনীয়। আল্লাহ্তায়ালা আমাদের সঠিক ও সত্যকে জেনে বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন।
আরো পড়ুন : তহবিল সংগ্রহে রোজা রেখে লন্ডনের রাস্তায় হাঁটছেন প্রবাসী দবিরুল
ভিডিও : https://www.youtube.com/watch?v=EuMzqzjdK3U&list=RDMM&index=3
সহায়ক গ্রন্থসমূহ :
যাকাতুল ফিতর, মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-ইসাইমীন
এক নযরে ছিয়াম ও রামাযান, ড. মুযাফফর বিন মুহসিন