মো: জহিরুল ইসলাম
সরকারি চাকুরে ছাড়া ভালো নেই কেউ
জুলাই ০৫ ২০২১, ১০:৫৩
করোনা পরিস্থিতিতে: সরকারি চাকুরে ছাড়া ভালো নেই কেউ;
মো: জহিরুল ইসলাম
আজকের ঝলক নিউজ:
করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় সকল পেশার লোকজনই ক্ষতিগ্রস্থ বিশেষ করে রোজগারের/বেতন ভাতার দিক থেকে । বিভিন্ন জরিপমতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ লোক বেকার হয়েছেন যাদের অধিকাংশ গ্রামে চলে গেছেন । যাদের জীবন যাপন দরিদ্র সীমার নীচে চলে গেছে । সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন যাদের কাজের উপরে তাদের বেতন নির্ভর করে যেমন বিভিন্ন বাহনের চালক-শ্রমিক, দিন মজুর, দৈনিক ভিত্ত্বিক লেবার, দোকান ব্যবসায়ীরা ।
কেন শুধু সরকারি চাকুরেররা ভালো আছে?
করোনায় শুধুমাত্র মাস শেষে নির্ধারিত সময়ে বেতন পেয়েছেন সরকারি চাকুরিজীবীরা। তাদের জীবনমানে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি । তাই দেখা যাচ্ছে শুধু সরকারি চাকুরিজীবী ছাড়া কেউ ভালে নেই ।
আয় কমেছে সাধারণ মানুষের ।
বিশেষ করে যারা ভাড়া দিয়ে সংসার চালান যেমন বাড়ি ভাড়া, ঘর ভাড়া, গ্রেজ ভাড়া, বিভিন্ন বাহন ভাড়া যেমন সিএনজি, অটো, মাহেন্দ্র তারাও ক্ষতিগ্রস্থ । তাদের রোজগার কমে গেছে । শহরের বিভিন্ন গলিতে ঢুকলে দেখা যায় কি পরিমান বাড়ি ভাড়ার সাইনবোর্ড ঝুলছে । সেখান থেকে সহজেই প্রমান হয় যে কিছু মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে আবার কিছু মানুষ বেশি ভাড়া পরিশোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে কম ভাড়ায় অনত্র চলে গেছে । তার মানে তাদের আয় কমেছে ।
সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ
লকডাউনের কারণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন বিশেষ করে কারো খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন হলে ৩৩৩ নম্বরে অথবা ৯৯৯ এ কল করার কথা বলা হলেও যারা একদম গরিব নয় তারা এখানে কল করে খাদ্য সহায়তা পেতে লজ্জ্বাবোধ করছে আবার জরিমানার ভয়ে করছেন না । এই নম্বরে ফোন করে কেউ কেউ উল্টো জরিমানা দিয়েছেন যদিও তার পরিমান খুবই নগন্য । সরকারের অন্যসকল প্রনোদনা নিয়ে আছে বিভিন্ন প্রশ্ন বিশেষ করে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন প্রনোদনা ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি ।
সেবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ কারা ?
করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা । যারা স্বল্প পূঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাদের অনেকে এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে, কেউ কেউ অনলাইন দিয়ে কিছুটা টিকে আছে আবার কেউ কেউ খুবই ঝুঁকিতে আছেন । এক্ষেত্রে যারা প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠনে বিনিয়োগ করেছেন তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ । যদিও এই সেক্টরের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো নয় । অনেক প্রাইভেট কোম্পানীর কর্মী ও এনজিও প্রকল্পের কর্মীরাও চাকুরি হারিয়ে বেকার যারা কোনো প্রকার প্রনোদনার আওতায় পড়েনি ।
ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প
পাটিশিল্পীরা জানান, ঘাটাইল উপজেলার কুতুবপুর, পাকুটিয়া, বাণীবাড়ি, রৌহা, রামপুর, নাগবাড়ি গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার জাতিসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পণ্য পাটিশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এসব পরিবার আবহমান কাল ধরে বংশ পরম্পরায় পাটি বুনে জীবনধারণ করে আসছে। এখান থেকে তাদের যা আয় হতো তা দিয়েই সংসার চলে যেত। সন্তানদের পড়ালেখা চলছিল। কিন্তু একদিকে প্লাস্টিকের পাটির কারণে বেতের পাটির চাহিদা কমেছে। অপরদিকে গতবছর থেকে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারি। এতে ছন্দপতন ঘটেছে তাঁদের সাংসারিক জীবনে।
তারা যা বলেন
কথা হয় রৌহা গ্রামের পদ্মা রানী পাল, অমল চন্দ্র চন্দ, কল্পনা পাল ও পরিতোষ চন্দ্র দেবের সঙ্গে। তাঁরা সবাই এই গ্রামের তৃতীয় প্রজন্মের পাটিশিল্পী। পাটি বোনায় তাঁদের রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। শীতল পাটির একটি স্থানীয় ধরন তৈরি করেছেন তাঁরা। দাম কম হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। এ থেকে তাঁদের আয়ও ভালো হয়। কিন্তু করোনার কারণে পাটি বিক্রি করতে না পারায় তাঁরা মহাবিপদে পড়েছেন। তাঁরা জানান, এনজিও থেকে ঋণ করে ব্যবসা বাড়িয়েছিলেন। এখন পাটি বিক্রি হচ্ছে না কিন্তু ঋণের কিস্তি নিয়মিত দিতে হচ্ছে।
ভালো নেউ নরসুন্দরগণ ।
গাংনী উপজেলার চুল-দাড়ি কাটার সেলুন প্রিন্স জেন্টস পার্লারের মালিক সজীব আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পঁচিশ বছর আগে একটি চাটাইঘেরা দোকানে আমার বাবার হাতে সেলুনের কাজ শুরু। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবার একটি পা কাটা পড়লে আমাদের দুই ভাইকে সংসারের হাল ধরতে হয়। পুরোনো দোকান বদলে আধুনিক করেছি। অর্থ যোগান দিতে গরু বিক্রির পাশাপাশি নিতে হয়েছে ঋণ। এখন লকডাউনে দোকান বন্ধ। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দোকান খুলে বসে থাকলেও কাস্টমার নেই। মানুষের ধারণা সেলুনে এলে করোনা হবে।’
কি করা যেতে পারে >
যত দ্রুত সম্ভব একটি জাতীয় ডাটাবেজ তৈরী করা উচিত বিশেষ করে শ্রেণি ও পেশা অনুযাযী সেখানে ক্যাটাগরী তৈরী করা উচিত যাদের ক্রম হবে সবচেয়ে গরিব থেকে । কোন দুযোগ বা সসহযোগিতা দেবার প্রয়োজন হলে সেই ডাটাবেজ থেকে ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে একাউন্ট পরিচালিত হবে বা মোবাইল নম্বর থেকে যেখানে সরাসরি সহযোগিতা চলে যাবে । কোনো সসদস্য’র আর্থিক অবস্থার উন্নতি অথবা অবনতি হলে সে প্রমানসহ তার ডাটা আপডেট করতে পারবে সে সুযোগ থাকা উচিত । তাহলে এই ত্রাণ সহযোগিতা নিয়ে কোনো প্রকার প্রশ্ন উঠবে না ।
জরুরী প্রয়োজন সকল দলমত নির্বিশেষে একটি কমিশন গঠন করা, সকল পেশাজীবীদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা যারা সকল প্রনোদনা সঠিকভাবে বন্টন করতে পারবে । যার নেতৃত্ব দিতে পারে সেনাবাহিনী ।
আমরা ২০৪০ সালে উন্নত রাস্ট্রে উন্নিত হতে চাইলে আমাদের কাউকে পেছনে ফেলে রাখার সুযোগ নেই । তাই যৌথ ও টেকসই উদ্যোগ জরুরী । করোনার পরে আমার নতুন করে পৃথিবীর লক্ষ্য নির্ধারনে আমরা যেন পিছিয়ে না পড়ি সে জন্য পয়োজন টেকসই উদ্যোগ যাতে সকল নাগরিক ভালো থাকে ।
লেখক,
মো: জহিরুল ইসলাম (রাজু) বিএ, অনার্স, এম,এ, এলএল’বি, এমবিএ। কন্ঠ শিল্পী বাংলাদেশ বেতার, সদস্য বিনামূল্যে আইন সহায়তা কমিটি, স্কাউটার বাংলাদেশ স্কাউটস, প্রাক্তন সার্জেন্ট-বিএনসিসি-নৌ শাখা, লেখক ও কবি। ফোন ০১৭১১৩০০৪৭৬
বেগুন ফুল রঙের থ্রিপিস; মো: জহিরুল ইসলাম
https://www.youtube.com/watch?v=EuMzqzjdK3U&list=RDWGVjKqK_Rpw&index=3
ছবি : ইন্টারনেট :