অন্যন্য নারী শাহ সাজেদা

Spread the love

আজকের ঝলক

অনন্য নারী শাহ্ সাজেদা

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল বলেছিলেন, ‘কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরোবারি, প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়লক্ষী নারী। অথবা বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’।
পুরুষ শাসিত সমাজে এই সত্য সহজভাবে স্বীকার করে নিতে চায় ক’জন। কারণ নারীকে তাঁর পথ পরিক্রমায় অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়। শত বাঁধা অতিক্রম করেই নারী আমাদের উন্নয়নের সমান অংশিজন হয়ে উঠছে। তাঁরা এক একজন হয়েছেন আমাদের অভিভাবকও। বিশ্বের বুকে আমদের নারীরা যে অবদান রেখে চলেছে তার প্রমাণ তো আমাদের সামনেই রয়েছে। শাহ সাজেদা কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করে সমাজ ও রাস্ট্রে অবদান রেখেছেন।
একজন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, নারী নেত্রী ও সমাজসেবকের নাম অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা। শিশু বয়স থেকেই শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং লেখালেখির জগতের সঙ্গে বিচরণ তাঁর। খেলার সাথীদের সঙ্গ দিতে দিতে শিক্ষা জীবন শেষ করেছেন। এরপরই যোগ দিযেছন মানুষ গড়ার কারিগরের ব্রতে। কলেজে দায়িত্বশীল শিক্ষক জননী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন তিনি। এর মধ্যেই নারীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশ নিতে যোগ দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে। সমাজ থেকে দুর্নীতির সূচক কমাতে কাজ করছেন টিআইবির উদ্যোগে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটিতে। বর্তমানে ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক শাহ সাজেদা।
১৯৫৭ সালের ৩১ মার্চ বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলায় বাঙ্গিলা গ্রামের শাহ্ বংশে (শিক্ষা সনদ) জন্মগ্রহণ করেন শাহ সাজেদা। পিতা-মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও সমাজসেবক মো. হোসেন শাহ্ এবং মাতা- আমেনা বেগম। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের আজাহার উদ্দীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন তখনকার বরিশাল পৌরসভা পরিচালিত ঝাউতলা মিউনিসিপ্যালিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাত্র এক টাকা দিয়ে ভর্তি হন ওই বিদ্যালয়ে।
৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৭৫ সালে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৭ সালে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ওই কলেজ থেকেই ব্যবস্থাপনায় স্নাতক সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশা হিসেবে শিক্ষকতা বেছে নিয়ে সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এক পর্যায়ে তিনি তাঁর স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্রজমোহন কলেজে বদলি হন। এরপর আর পেছন ফেরেননি তিনি। একটানা ২৫ বছর ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে তিনিই প্রথম নারী শিক্ষক ও প্রথম নারী চেয়ারম্যান। এসময় তিনি মার্কেটিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হয়ে একই সঙ্গে দুটি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন শাহ সাজেদা।
ব্রজমোহন কলেজে চাকুরী করার সময় তাঁকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছ। তারপরও তিনি দমে যাননি। নিজের যৌগ্যতা দিয়ে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছেন। পুরো শিক্ষকতা জীবনে তিনি নারীদের অধিকার আদায়, বিশেষ করে কলেজে অধ্যয়ন করা ছাত্রীদের সমস্যা সমাধানে তাঁদের একজন হয়ে পাশে থেকেছেন। একই সঙ্গে কলেজে যাতে সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশ গড়ার কাজে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিয়োজিত রাখে সেলক্ষ্যে পরামর্শ দিয়ে পাশে থেকেছেন। সাহিত্য-সাংস্কৃতির পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা শাহ্ সাজেদা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় তিনি অনেক প্রতিথযশা সাংবাদিক ও লেখকদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। এসময় তিনি বরেন্য সাংবাদিক ও কলামিষ্ট খন্দকার আলী আশরাফের স্নেহধন্য হন। ওই সময়ই তিনি সাপ্তাহিক বিচিত্রিা ও চিত্র বাংলার ও সাপ্তাহিক খবরসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখে নারীর অধিকার আদায়ে কাজ করে চলেছেন আজও।
শাহ্ সাজেদা ও ছোট ভাই শিশু সাহিত্যিক নসরত শাহ্ আজাদের আগ্রহে পিতা মো. হোসেন শাহ্ নিজেই বের করেন একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘বাংলার বনে’। ছাত্র জীবনেই নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে শাহ সাজেদা দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওই পত্রিকার। পরবর্তীতে পত্রিকাটি দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এর সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি। ১৯৯১ সালে বরিশালের প্রথম এই নারী সাংবাদিকের সম্পাদনা ও প্রকাশনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক শাহনামা পত্রিকা। এই পত্রিকা প্রকাশ করে বাংলা ভাষার দৈনিক পত্রিকার ইতিহাসে তিনিই হন প্রথম নারী সম্পাদক-প্রকাশক। দৈনিক শাহনামা পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি তিনি। বরিশালসহ দেশের গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অনেক সাংবাদিকদের হাতে খড়ি হয়েছে সাংবাদিক শাহ সাজেদার পত্রিকায় কাজ করার মাধ্যমে।
অধ্যাপক শাহ সাজেদা নারী অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থেকে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে হন ভর্তি পরীক্ষার প্রথম আহবায়ক। পরিবেশ ও বৃক্ষরোপনে অবদান রাখায় দু’বার জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। কলেজের ম্যাগাজিন প্রকাশনার ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী আহবায়ক ও সম্পাদক। কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাসে তিনিই প্রথম নারী হলসুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন সুরেন্দ্র ভবন ও নৃপেন্দ্র ভবন ছাত্রাবাসের। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর চারবার সিনেট সদস্য ছিলেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির একজন সদস্য তিনি।
অধ্যাপক শাহ সাজেদা শিক্ষা ক্ষেত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলা কমিটির সহ-সভাপতি, বরিশাল নারী উদ্যোক্ত প্লাটফর্মের উপদেষ্টা, আমরাই পারি সামাজিক সংগঠনের বরিশালের সভাপতি, বরিশালে সদ্য গঠিত এনার হুইল ক্লাবের সভাপতি, গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি বরিশালের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।সাংবাদিক হিসেবে তিনি ১৯৯৪ সালে সুইজারল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য সফর করেন।
তার স্বামী সাংবাদিক, রাজনীতিক কাজী আবুল কালাম আজাদ। তিনি একমাত্র কন্যা সন্তানের জননী। আজও তিনি সমাজসেবা ও নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত থেকে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন সংবাদপত্রে।
সংগ্রহ : নোমানী মামুন-সাংবাদিক ও সংগঠক। 

আরো পড়ুন নারী এনজিও কর্মীর গায়ে হাত

ভিডিও দেখুন https://www.youtube.com/watch?v=CME2fRovOmw

 



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »