লেখক মোঃ জহিরুল ইসলাম
বরিশালের মান্তা সম্প্রদায়
নভেম্বর ০১ ২০২৫, ০৮:৫৮
বরিশালের মান্তা সম্প্রদায় মান্তা সম্প্রদায়দের জন্য জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত।
বরিশালের মান্তা সম্প্রদায় (যাদেরকে অনেকে “ভাসমান জনগোষ্ঠী” বা “নৌ-যাযাবর” হিসেবেও চেনেন) বাংলাদেশের অন্যতম প্রান্তিক ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। তারা মূলত নদী ও জলাশয় নির্ভর জীবনযাপন করে, নৌকাতেই থাকে এবং মাছ ধরা তাদের প্রধান জীবিকা। নিচে তাদের সমস্যা ও করণীয় অংশে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
🧭 সমস্যা (Challenges / Issues)
১. স্থায়ী বাসস্থানের অভাব
-
মান্তা জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই নদীতে বা খালের পাশে নৌকায় বসবাস করে।
-
নদীভাঙন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রশাসনিক বাধার কারণে তাদের বাসস্থানের কোনো নিরাপত্তা নেই।
-
অনেক সময় নদীতে নৌকা রাখার স্থান নিয়েও বিরোধ হয়।
২. শিক্ষা থেকে বঞ্চনা
-
শিশুদের স্কুলে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, কারণ তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায়।
-
স্থায়ী বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও নিয়মিত উপস্থিতি সম্ভব হয় না।
-
ফলে সাক্ষরতার হার অত্যন্ত কম।
৩. স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সমস্যা
-
নদীতে বসবাস করায় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।
-
পরিস্কার পানি, স্যানিটেশন ও পুষ্টিকর খাবারের অভাব রয়েছে।
-
নারীরা প্রসবকালীন চিকিৎসা না পাওয়ায় ঝুঁকিতে থাকেন।
৪. আইনি পরিচয়ের অভাব
-
অনেক মান্তা পরিবারের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন বা নাগরিক কাগজপত্র নেই।
-
ফলে সরকারি সেবা, ভোটাধিকার ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
৫. জীবিকা অনিশ্চয়তা
-
মাছ ধরা মৌসুমভিত্তিক; নিষেধাজ্ঞার সময় তারা আয়ের উৎস হারায়।
-
বিকল্প জীবিকার সুযোগ নেই।
-
মৎস্য ব্যবসায়ীদের শোষণ, দালাল চক্রের ঋণফাঁদ ইত্যাদি সাধারণ ঘটনা।
৬. সামাজিক বৈষম্য ও অবহেলা
-
মান্তা জনগোষ্ঠীকে মূলধারার সমাজে “ভিন্ন” হিসেবে দেখা হয়।
-
সামাজিক অনুষ্ঠান, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ কম।
🌱 করণীয় (Way Forward / Recommendations)
১. স্থায়ী পুনর্বাসন ও জমি বরাদ্দ
-
সরকারের উচিত নিরাপদ নদী-তীরবর্তী এলাকায় মান্তা পরিবারের জন্য স্থায়ী আবাসন প্রকল্প নেওয়া।
-
স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জলাশয় নির্ভর জনগোষ্ঠীর জন্য ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে।
২. ভাসমান শিক্ষা কেন্দ্র ও বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা
-
নৌকা ভিত্তিক বা ভাসমান স্কুল স্থাপন করে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
-
এনজিও ও সরকারি শিক্ষা অফিসের যৌথ উদ্যোগে মোবাইল শিক্ষাসেবা দেওয়া যেতে পারে।
৩. স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া
-
ভাসমান বা মোবাইল স্বাস্থ্য ক্লিনিক চালু করা।
-
স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
-
মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া।
৪. পরিচয়পত্র ও নাগরিক অধিকার
-
স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও অন্যান্য নথি নিশ্চিত করা।
-
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে (ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা) অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. বিকল্প জীবিকা উন্নয়ন
-
মৎস্য নিষেধাজ্ঞা মৌসুমে বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি করা (যেমন হাঁস-মুরগি পালন, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা)।
-
প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা প্রদান করা।
৬. সচেতনতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি
-
মান্তা সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্য কমাতে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো।
-
স্থানীয় সরকার ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা।এ্যাডভোকেসী; জহিরুল ইসলাম
বরিশালের মান্তা সম্প্রদায় বাংলাদেশের নদীমাতৃক সংস্কৃতির একটি অনন্য অংশ। কিন্তু তাদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের সমন্বিত সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই তাদের জীবনমান উন্নয়ন করা জরুরি।
































































































