ব্যাংকিং হবে ঘরে বসেই

Spread the love

অটোমেটেড টে’লার মেশিন (এটিএম), ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন (সিডিএম) এবং ক্যা’শ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) স্থাপনের কল্যাণে টাকা জমা, তোলা ও স্থা’নান্তরে গ্রাহকদের সরাসরি ব্যাংকের শাখায় যাওয়ার প্রয়ো’জনীয়তা অনেকখানি কমেছে। এবার এটিএম, সিডিএম আর সি’আরএমেও ঢু মারতে হবে না। খুব কা’ছেই সেই দিন। ব্যাংক ও এমএফএসের (মো’বাইলে আর্থিক সেবাদাতা) মধ্যে আন্ত লে’নদেন চালুর ফলে ঘরে বসেই নিশ্চিন্তে প্র’য়োজনীয় সব লেনদেন করতে পা’রবেন গ্রাহক। ব্যাংক থেকে নিজের মোবা’ইল ফোনে টাকা আনা, নিজের মোবাইল থে’কে ব্যাংকে টাকা জমা করা, বিভিন্ন বিল, ঋণের কিস্তি ও স্কুল-কলেজের বেতন পরিশোধ, এ’ক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে টাকা স্থা’নান্তর, হোটেল বুকিং, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমানের টিকিট কাটা—সবই এখন করা যাবে ঘ’রে বসেই।

সংশ্লিষ্ট ব্য’ক্তিরা বলছেন, ব্যাংক ও এমএফএ’সের মধ্যে আন্ত লেনদেন চালু হ’ওয়ার ফলে গ্রাহকদের ডি’জিটাল লেনদেনের সুযোগ বাড়বে। এতে গ্রাহকদের সময় বাঁচবে, কমবে ভোগান্তি। তাঁদের স্বাধীনতা তৈরি হবে। ফলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে। শহর ও গ্রামে টাকার প্রবাহে ভারসাম্য আসবে। অন্যদিকে ব্যাং’কেরও এসব সেবা দেওয়ার চাপ কমবে। তবে ব্যাংক থেকে এমএফএসে এবং এমএফ’এস থেকে ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরে প্রতি হাজারে সাড়ে চার টাকা চার্জ বসানোর সমালোচনা ক’রছেন অনেকেই। কারণ এই চা’র্জ এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা গ্রাহকদের ঘাড়েই চা’পবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সা’বেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক ও এ’মএফএসের মধ্যে আন্ত লেনদেন চালুর উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসীয়। এটা ডিজিটাল লে’নদেন বাড়ার পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষে’ত্রেও ভূমিকা রাখবে। তবে সমস্যা হলো—এ সেবায় এমএফএস থেকে কেউ ব্যাং’কে টাকা রাখলেও চার্জ দিতে হবে। এটা কি’ন্তু ব্যাংকিং সেবার যে নিয়ম তার সঙ্গে মেলে না। কারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে কি’ছু লাভের আশায়। কিন্তু এখন উল্টো ব্যাং’কে টাকা রাখার বিনিময়ে চার্জ দিতে হবে। এই চার্জ প্রতি হাজারে সাড়ে চার টাকা নে’ওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটাই এ সে’বার বড় অসংগতি।’

এদিকে ব্যাংক ও এ’মএফএসের আন্ত লেনদেন আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে চালু হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএস হিসাবে, এমএফএস হি’সাব থেকে ব্যাংক হিসা’বে এবং ব্যাংক হিসাব থেকে এমএফএস হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা যাবে। বর্তমানে এক এমএফএস থেকে আরেক এমএফএসে টাকা স্থা’নান্তরের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক হিসাব থেকে এমএফএসে টাকা আ’না এবং এমএফএস থেকে ‘ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণকারী গ্রাহকরা আ’গে থেকেই ঘরে বসে টাকা জ’মা ও স্থান্তরের সু’বিধা ভোগ করছেন।

এ ব্যাপারে মো’বাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের যো’গাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে আন্ত লেনদেন চালুর ফলে গ্রাহকদের জন্য বিরাট সুবিধা হবে। এ’ত দিন সরাসরি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে গ্রাহকদের আমানত ও ঋণের কিস্তি জমা দিতে হতো, যা এ’খন গ্রাহকরা ঘরে বসে ডিজিটালি দিতে পারবেন। এতে গ্রাহকদের সময় সাশ্রয় ও ভোগান্তি কমবে। চার্জ নির্ধারণের বিষ’য়টিতে অসংগতির কথা জা’নান শামসুদ্দিন হায়দারও। তাঁর মতে, ব্যাংক থেকে এমএফএসে টাকা এলে, আবার এম’এফএস থেকে ব্যাংকে টাকা গেলেও উ’ভয় ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এমএফএসের পক্ষ থেকে হাজারে সাড়ে চার টাকা দেও’য়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের প’ক্ষ থেকে এমএফএসকে কোনো চার্জ দেওয়ার কথা বলা হয়নি।

ব্যাংক ও এমএফএসের ম’ধ্যে আন্ত লেনদেন চালুর বিষয়ে গত বৃ’হস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হয়। এতে বলা হয়, দেশে নগদ টাকার লেনদেন কমাতে সব ব্যাংক ও এমএফএস প্রতি’ষ্ঠানের মধ্যে আন্ত লেনদেন সেবা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সফলভাবে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন’কারী ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার থেকে লেনদেন শুরু করবে। যারা প্রস্তুতি শেষ কর’তে পারেনি, তাদের আগামী ব’রের ৩১ মার্চের মধ্যে এ সেবা চালু করতে হবে।

প্রথম ধাপে এ সে’বায় যেতে না পারার কারণ জা’নতে চাইলে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির এ মিশুক বলেন, ‘নগদ এবং রকেটে আ’মরা যারা আছি, তারা আগে থেকেই ব্যাংকের সঙ্গে কানেকটেড। ব্যাংক থেকে এম’এফএসে টাকা আনা ও এমএফএস থেকে ব্যাং’কে টাকা স্থানান্তর আমরা শুরু থেকে বিনা চার্জে দিচ্ছি। কিন্তু এখন ব্যাংকে টাকা জমা ও আনায় হাজারে সাড়ে চার টাকা চার্জ এ’মএফএসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দিতে বলা হয়েছে। ফলে আ’মরা হুট করেই বিনা চার্জের এ সে’বা দেওয়াটা বন্ধ করতে পারব না। এ জন্য আমাদের একটু সময় লাগছে। এই চার্জটা তো গ্রা’হক নয়, এমএফএস থেকে নেওয়ার কথা ব’লা হয়েছে, তাহলে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমাদের মধ্যে ভাগাভাগির কথা বলা হয়ে’ছে। কিন্তু ভাগাভাগি হলেও শে’ষ পর্যন্ত গ্রাহকের ঘাড়েই পড়বে। আন্ত লেনদেনের এই সেবাটা প্রথম এক বছর বা ছয় মাস চা’র্জহীন করা গেলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বি’ল্পব ঘটানো সম্ভব হতো’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’

জানা গেছে, প্র’থম ধাপে চারটি ব্যাংক ও চারটি এম’এফএস প্রতিষ্ঠান এই সেবায় যুক্ত হবে। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, আল-আরা’ফাহ? ইসলামী ও পূবালী ব্যাংক। আর মো’বাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলো বিকাশ, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ, ইউ’নাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউ’ক্যাশ ও আল-আরাফাহ্ ইস’লামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট।

কেন্দ্রীয় ব্যাং’ক বলছে, ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে আন্ত লেনদেন চালুর মূল উদ্দেশ্য হলো নগদ লেনদেন কমিয়ে আনা। ফলে ব্যাংক থেকে টা’কা এনে ডিজিটালি সব লেনদেনের সুযোগ নিতে পারবেন গ্রাহকরা। এখন এমএফএসের মাধ্যমে অন্যের হিসাবে টাকা পাঠানো ও টাকা তোলার সুবিধা ‘ড়াও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পা’নি, টেলিফোন, ইন্টারনেট বিল, স্কুল-কলেজের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে। আবার বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বি’মান এবং সিনেমা দেখার টি’কিটও পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইন ও অফলাইনে কেনাকাটা করা যাচ্ছে, আবার মোবাইল রিচার্জ সুবি’ধাও আছে।

বর্তমানে দেশে ৬০টি বা’ণিজ্যিক ব্যাংকের পূর্ণ অনলাইন শা’খা রয়েছে ৯ হাজার ৬৪৩টি। আ’র আংশিক অনলাইন শাখা রয়েছে ৫৮৮টি। তবে অনলাইন শাখার সং’খ্যা যতটা বেড়েছে, সেভাবে ই’রনেট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহ’ক বাড়েনি। আগস্ট শেষে ব্যাংকিং খাতে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহ’কসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ২০ হাজার ৯৩৩ জন। অন্যদিকে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ, এমক্যাশ, শিওরক্যাশসহ দে’শের ১৬টি প্রতিষ্ঠান এম’এফএস সেবা দিচ্ছে। গত আগস্ট শেষে এমএফএসের প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা দাঁ’ড়িয়েছে ৯ কোটি ২৯ লাখে। সং’শ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে আন্ত লেনদেন চালুর ফলে এই ৯ কো’টি গ্রাহকও ডিজিটালি ব্যাংকিং’য়ের সব সুবিধা নিতে পারবে।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »