পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ; আউয়াল জামান কয়েছ
জুন ৩০ ২০২০, ২১:২০
“পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ”

বাংলাদেশে মুলত পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা হয় ১৯৮১ সনে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতি নির্বাচিত করার মাধ্যমে, কারন নিঃসন্দেহে তখন শেখ হাসিনার চেয়ে যোগ্য এবং অভিজ্ঞ একাধিক নেতা আওয়ামীলীগ এ ছিলেন আর যেহেতু একাধিক নেতা ছিলেন, কিন্ত গনতন্ত্র বা বহুমতকে মেনে নেয়ার মত মন মানসিকতা তখন দলীয় নেতাদের মধ্য ছিল না, তাই দলীয় শৃংখলা রক্ষার সার্থে এবং ভাঙ্গন রোধ করতে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনাকে চেয়ারে বসানো হয়। আর এই থেকেই পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা বাংলাদেশে।
এখন প্রায় চল্লিশ বছর হয়ে গেল, আর এই সময়ের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক থেকে শুরু করে ওবায়দুল কাদের পর্যন্ত, ৬ জন সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্ত সভাপতিকে চ্যালেঞ্জ করার মত দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারেন নি।
একই ভাবে ১০ই মে ১৯৮৪ সন থেকে বেগম খালেদা জিয়া বি এন পির চেয়ারপার্সন এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন, এবং মহাসচিব এর দায়িত্ব পালন করেন বদরুদদুজা চৌধুরী থেকে শুরু করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ৩৬ বছরে মোট পাঁচ জন, এখানেও চেয়ারপার্সন এর দায়িত্ব নেওয়ার সাহস কেউ করেন নি। তবে প্রকাশ্য হোক অথবা গোপনে দুটি দলেই কিছু সংস্কার পন্থী নেতা আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে, পরিবার তন্ত্র থেকে দলকে বের করে নিয়ে আসার যথাসাধ্য চেষ্টাও তারা করেছেন, বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেন সময়কালে, যদিও তা বিফলে গেছে এবং হয়েছে হিতে বিপরীত।বর্তমান দুই নেত্রীর মধ্য শেখ হাসিনা অনেকটাই সফল, সোজা অথবা বাকা যে পথেই হোক তিনি তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছেন, যা একটি গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের মুল লক্ষ্য। তবে দেশের মানুষ এর ভালবাসা কি পরিমান রয়েছে তাঁর উপর তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
আর বেগম জিয়া উদার নীতি অবলম্বন করতে গিয়ে ক্ষমতা থেকে দুরে আছেন।তবে দুই নেত্রীই তাদের দলকে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন এটা অনেক বড় সফলতা ।
এখন প্রশ্ন হল এই দুই নেত্রী যদি কখনও মৃত্যু বরণ করেন তখন কি হবে, পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা কি বজায় থাকবে ?
বেগম জিয়ার পর তারেক রহমান দলীয় প্রধান হবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত, যেহেতু তিনি দলের সিনিয়র বাইস চেয়ারম্যান। আর শেখ হাসিনার পর যদি গতানুগতিক ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে, হয় শজিব ওয়াজেদ জয় অথবা শেখ রেহানা আসবেন।
দেশের সাধারণ মানুষের কথা হলো এখানে তাদের চেয়ে ভাল ও যোগ্য কোন নেতা কি এই দল দুটোর মধ্য নেই? অবশ্যই আছেন, তাহলে কেন আমরা এদেরকে নেতা হিসেবে মানব?
এই প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, বৃটিশ পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ছিল রাজতানত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, রাজা এবং তার উত্তরসূরীদের নেত্রীত আমরা তখন থেকেই অবলীলায় মেনে আসছি। এবং বৃটিশরা ও আমাদের দুশ বছর শাসন করে গেছে এই ধারাবাহিকতা আমরা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, এখন ও রক্ষা করে চলেছি, ভারত, পাকিস্তান যদিও এর থেকে কিছুটা বের হয়ে এসেছে, কিন্ত আমরা পারিনি। আমাদের মন মানসিকতা এখনও আগের মতই রয়ে গেছে। শুধুমাত্র নামেই গনতন্ত্র আমাদের দেশে এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য। যথেষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন এবং সৎ অনেক নেতা অতীতে যেমন বাংলাদেশে ছিলেন, এখন ও আছেন, ভবিষ্যেত এ ও আসবেন তবে আমরা তাদের যোগ্য আসনে বসাতে পারব কি না এটাই এখন প্রশ্ন ।
দেখা যাক অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কি অবস্থা, পরিবার তান্ত্রিক জটিলতায় জাতীয় পার্টি আজ নিশ্চিহ্ন প্রায়, সরকারি দল নাকি বিরুদি দল তাও তারা বলতে পারছেন না ।
তবে বাংলাদেশ জামাত এ ইসলাম, হিসেব এর মধ্য একমাত্র রাজনৈতিক দল যাদের মধ্য পুরোপুরি গনতন্ত্র চর্চা রয়েছে, যদিও এখন তাদের নিবন্ধন নেই, দলীয় প্রতিক নেই, এর পরেও তারা নানান সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে বলে থাকেন তাদের মূল উদ্দেশ্য হল পরকাল বা জান্নাত, তা যে কোন ধরনের জনকল্যান মূলক কাজ করে তারা পেতে চান, হোক সেটা রাজনৈতিক অথবা সামাজিক।
নতুন রাজনৈতিক দল এ বি পার্টির জন্ম হয়েছে অল্প কিছুদিন আগে যাদের মূল মন্ত্র হল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, এই নিয়ে যদি তারা এগিয়ে যেতে পারেন তবে বাংলাদেশ একটি গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
নুরুল হক নুর এর রাজনৈতিক দল গঠন, এটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ যদি তা দুষ্ট রাজনৈতিক চক্র থেকে দেশকে বের করে নিয়ে আসতে পারে, তবে তার বিভিন্ন বক্তব্য বর্তমান সরকারের যে সমালোচনা শুনা যায়, অথচ সরকার দল তাঁকে সভাব সুলভ আক্রমণ করছে না, এতে সাধারণ মানুষ এর মনে প্রশ্ন, নুর কি তাহলে সরকারের কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন, নাকি তাঁর জনপ্রিয়তার মূল্যায়ন করছে সরকার ?
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেকটাই মহাসাগর এ ভাসমান, খর কুটু যাই পায় আকরে ধরে বাঁচতে চায়। নতুন কোন নেতা যখন আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, তাঁকেই আমরা বিশ্বাস করে মনের কোনে একটু আলো জালাবার চেষ্টা করি। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতির সূচনা হোক, মারামারি হানাহানি থেকে দেশের সকল রাজনৈতিক দল সরে আসুক, পরিবার তান্ত্রিক রাজনীতির অবসান হোক।
আউয়াল জামান কয়েছ
বারমিংহাম, যুক্তরাজ্য






























































































