নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে নারীরাও কম দায়ী নয়

ডিসেম্বর ১৫ ২০২০, ১৯:৩৯

Spread the love

~ এম.আর.প্রিন্স ~ সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী ।

     ” ধর্ষণতো জোড় করলে হয় । আমি কারও মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিংবা জোড় করে মেলামেশা করিনি । সবাই স্বেচ্ছায় সবকিছু করেছে । তাহলে এটাকে আপনি ধর্ষণ বলছেন কেন ?” কথাগুলো নির্দ্বিধায় বলেছেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের  নওরোজ হীরা (৫২) নামের প্রভাবশালী এক ব্যক্তি । যার বিরুদ্ধে সম্প্রতি একাধিক ধর্ষনের অভিযোগ ওঠেছে । অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একথা বলেন । আমি বললাম, ” ইচ্ছে করলেই স্বেচ্ছায় ও নির্দ্বিধায় সবকিছু করা যায়না । দেশে আইন ও বিধিবিধান রয়েছে । সে অনুযায়ী চলতে হবে ।” ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জবাবে তিনি বলেন, ” তাহলে আমাকে একা দোষী ভাবছেন কেন ? উভয়ই অপরাধী ।ছেলেদের যদি ধর্ষক বলেন তাহলে যে সমস্ত মেয়েরা রূপ যৌবন ও শরীরের প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেদেরকে আবেগের ফাঁদে ফেলে সঙ্গ দেয় তাদের উপাধি কি দিবেন ? ।” তার অসংলগ্ন এলোমেলো কথা বার্তায় বিব্রত হয়ে থেমে গেলাম । একটি সূত্র থেকে তার অনৈতিক কার্যকলাপের কিছু ভিডিও সংগ্রহ করলে তাতে দেখা যায় একটি কিশোরী মেয়ে একরকম বিদঘুটে চেহারার বয়স্ক লোকের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত এবং যা কিছু করেছে তা স্বেচ্ছায় ও নির্দ্বিধায় । যেমনটি দেখেছিলাম আলোচিত এক মডেল ও অভিনেত্রীর বেলায় । এরকম অসংখ্য অভিযোগের ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা যায় । নারীরা নেশা, অনৈতিক কার্যকলাপ, একই সময়ে একাধিক সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন্ করা, পরকীয়া সহ নানা অপরাধে জড়ানোর কারনে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে অহরহ । বহু ধরনের আবেগের তীব্রতা মাঝে মাঝে উচ্ছৃঙ্খল ও অধিক মোহে আচ্ছন্ন মেয়েদের চিন্তা ও চেতনাকে ভোতা করে দেয় । অনেক ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায় নারীরাই নারীদের ঈর্ষা করে ।বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ কথাটি প্রায়শই শুনে থাকি । ননদ-ভাবী, যা’য়ে যা’য়ে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলে নিরবে নিভৃতে । যা পরোক্ষভাবে নারী পুরুষ সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে । অতিরিক্ত আবেগে একজন পুরুষকে ভালভাবে না জেনেই নারীরা গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলে । আবার লোভে কিংবা স্বার্থসিদ্ধির জন্যও খারাপ কিছু জেনে শুনেও সম্পর্ক গড়ে তোলে ।নারী হয়ে আরেক নারীর সংসার ভাঙ্গে ।পরবর্তীতে অসতর্কতা ও ভুলের খেসারত দিতে হয় কঠিন ভাবে । তাই নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে নারীরাও কম দায়ী নয় । নারী পুরুষ উভয়ের সকল আবেগ চেতনাকে সুন্দর ও উন্নত করতে হবে । যাতে নারীদের আত্ম সম্মান বাড়ে এবং নিজের অধিকারটা বুজতে পারে সেদিকে সচেতন হতে হবে । নারী পুরুষ উভয়ের দায়িত্ববোধ জাগ্রত এবং সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে ।

মানব জীবন বিনাশকারী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কভিড১৯ মহামারির শুরুর দিকে অপরাধ প্রবনতা অনেক কমে গিয়ে ছিলো । কিন্তু  সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো সারা দেশে আলোড়ন ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে । গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে বছর এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে ৬৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ সালের প্রথম চার মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছিল । সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ধর্ষণের পর কমপক্ষে ২৯ জন মারা গেছে এবং পাঁচজন আত্মহত্যা করেছে । বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের (নারী ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন) তথ্য অনুযায়ী প্রতিনিয়তই নারী ও কণ্যা শিশু ধর্ষণের পরিমান বেড়েই চলেছে এবং নির্যাতনের নির্মম ও নিষ্ঠুর ধরনকে উদ্বেগ জনক বলেছে । সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে বোঝাই যাচ্ছে ২০২০ সালের সর্বশেষ হিসাব আরও উদ্বেগ জনক হতে পারে । পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অবস্থা খারাপ ।রয়টার্সের তথ্যমতে, লকডাউনের প্রথম সপ্তাহেই  ভারতে নারী নির্যাতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল পরবর্তীতে এর মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছে যা আমরা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম গুলোতে দেখতে পাই ।অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের নারীরাও নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না । তাই বিশ্ব ব্যাপী নারী বিষয়ক দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন অত্যাবশকীয় হয়ে উঠেছে ।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »