পুড়িয়ে দেয়া যুবক ছিলেন নামাজি, তদন্ত কমিটি-গ্রেফতার ৩

Spread the love

লালমনির’হাটের পাটগ্রামে এক যুবককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হ’ত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করে’ছে পুলিশ। জেলা প্রশাসন ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। রোববারের মধ্যে তদ’ন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি। ঘট’নার শুরুতে কে বা কারা কোরআন শরীফ অবমা’ননার গুজব ছড়িয়েছে তা খতিয়ে দেখতে মা’ঠে নেমেছে সিআইডি।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টো’বর) বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজি’দে আসরের জামায়াত শেষে মুসল্লিরা মসজিদ ছেড়ে বের হয়ে যান। পেছনে পড়া অল্প কিছু লোকজনের চিৎকারে মুসল্লিরা ফি’রে আসেন মসজিদে। পরে বাজা’রের ব্যবসায়ী ও বাজরে আসা লোকজন জড়ো হয়। উপস্থিত জনতার মধ্যে শোরগোল ওঠে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, গো’য়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয়ে দুই জন ব্যক্তি মসজিদে বোমা ও জঙ্গি আছে বলে তল্লাসি ক’রার সময় কোরআন শরীফ অবমাননা করেছে।

জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্য থেকে কয়ে’কজন এসময় দুইজনকে মা’রপিট শুরু করে। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজুল ইসলাম মসজিদে গিয়ে নানাভাবে মুসল্লিদের অনুরো’ধ করে ওই দুজনকে পাশের ইউপি কার্যালয়ে এনে একটি কক্ষে রাখেন। এদিকে আরো শত ‘ত মানুষ জড়ো হতে থাকে।

খবর পেয়ে ইউপি চেয়ার’ম্যান আবু সাইদ নেওয়াজ নিশাদ পু’লিশে খবর দেন। পুলিশ যেতে যেতে লোকারণ্য হয়ে পড়ে আশপাশের এলাকা। থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএন’ও কামরুন্নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল কোন রকমে ইউপি কার্যালয়ের ভেতর ঢুক’তে পারলেও অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে নিয়ে বের হতে পারেনি। বাইরে লোকজন কোরআন অবমাননাকারী আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে হ’ত্যার জন্য ওই দুইজনকে তাদের হা’তে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানায়। এক পর্যায়ে কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢো’কার চেষ্টা করে। পুরো দেড় ঘণ্টা ভাঙ’চুর ও তাণ্ডব চালায়। সংখ্যায় কম হওয়ায় পুলিশসহ ভেতরে থাকা লোকজন কু’লিয়ে উঠতে পারেননি। সন্ধ্যার আগে আগে হা’জার হাজার লোক আসে ইউপি কার্যালয়ে। এক পর্যায়ে বারান্দার একপাশের গ্রিল ভে’ঙ্গে ভেতরে ঢুকে দুজনের একজ’নকে ছিনিয়ে মাঠের মধ্যে নিয়ে গলায় দড়ি বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে ২শ মি’টার দূরে নিয়ে যায়। রাস্তার ওপর ফেলে পি’টিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

পুলিশ অপ’রজনকে নিয়ে কৌশলে ইউপি কার্যালয়ের দো’তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে একটি ব্যাংকে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর চা’লানো হয়।

বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান এবং মে’ম্বররা জানান, প্রথম দফায় আসা লো’কজনকে শান্ত করে আনা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু সন্ধ্যার পর একটি গ্রুপ যোগ দেয়। মূলত এরাই বেশি উ-শৃঙ্খলতা দে’খায়।

পাটগ্রাম থানার ওসি বলেছেন, যারা ঘটনা ঘটিয়ে’ছে তারা প্রকাশ্যেই ঘটিয়েছে। তাদে’র সকলের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহে আছে। ইন্ধন ও উস্কানিদাতা সবাইকে চিহ্নিত করা হয়ে’ছে।

টানা ৫/৬ ঘণ্টা ধরে এই বীভৎস তাণ্ডব চলার পর রাতে র‍্যাব, ৩ প্লাটুন বিজিবি ও রিজার্ভ পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গে’ছেন, নিহত ব্যক্তির নাম শহিদুন্নবী জুয়েল। বাড়ি রং’পুরের শালবনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরি সায়েন্সে পড়ালেখা শেষ করে রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যা’ন্ড কলেজে লাইব্রেরিয়ান হিসাবে চাকরি নিলেও বছরখানেক আগে বাধ্যতামূলকভাবে রিজাইন করা’নো হয়। ব্যক্তিগত জীবনে ধার্মিক ও ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন বলে জানিয়েছেন পরিবার ও প্রতিবেশীরা। চাকরী না থাকাসহ নানা কারণে জুয়েল গত কয়েকদিন ধরে মা’নসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছে পরিবার। তবে বদ্ধউন্মাদ ছি’লেন না।

সুলতান জোবায়ের আব্বা’স নামে একজন দলিল লেখককে নিয়ে এক’টি মোটরসাইকেলে করে বৃহস্পতিবার জুয়েল পাটগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সে’খান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে’ ভারতীয় সীমান্ত এলাকার বুড়িমারী স্থলবন্দর লাগোয়া বাজারে ওই মসজি’দটির অবস্থান।

ইউপি চেয়ার’ম্যান আবু সাইদ নেওয়াজ নিশাদ বলেন, কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা তাণ্ডব চললেও পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

মসজিদের খাদেম জোবেদ আলী বলেন, নামা’জ শেষ হবার পর অপরিচিত দুই লো’ক এসে গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, মসজিদে অস্ত্র আ’ছে। আলমারির চাবি চাইলে ভয়ে চা’বি দেই। তারা মসজিদে গিয়ে শেলফ, আলমারি তছনছ করে। এ সময় একটি তাকের ওপর রাখা কোরান শরীফের পাশে পা রেখে তারা অ’স্ত্র খোঁজে।

এলাকাবাসী জানান, খাদেম জোবেদ আলী কো’রআন অবমাননার কথা অনেক’কেই বলেছেন। কিন্তু বাসেদ আলী নামে এক মুসল্লিকে তার মুখোমুখি করলে জোবেদ আ’লী কথা ঘোরান। এতে জো’বেদের ওপর ক্ষেপে যান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জা’নান, আবুল হোসেন নামে এক ডেকোরেটর ব্যবসায়ী প্রথম দুই ব্যক্তির একজনকে মারতে মারতে মসজিদ থেকে বের করে আনেন। কি’ন্তু আবুল হোসেনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা’য় পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ও মেয়ে জানান, মসজিদের ভেতর গালি দেয়া’য় আবুল হোসেন একজনকে মেরেছিলেন ব’লে বাসায় ফিরে জানিয়েছিলেনে।

জেলা প্রশাসক আবু জা’ফর বলেন, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যা’জিস্ট্রেট টি এম এ মোমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি দুই সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সু’পার রবিউল ইসলাম ও পাট-গ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম কামরুন্নাহার। ঘটনাস্থল পরি’দর্শন করে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনার প্রত্যক্ষ’দর্শীদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করছেন। ১ নভেম্বর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জ’মা দেবে।

অতিরিক্ত পু’লিশ সুপার রবিউল ইসলাম শুক্রবার পা’টগ্রাম থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনার বিষ’য়ে তদন্ত শুরু করেছে।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলি’শ সুপার রবিউল ইসলাম শুক্রবার সাং’বাদিকদের নিহত শহীদুন্নবীর এবং আহত সুলতান জোবায়েরের পরিচয় জানান। তাদের উভয়ে’র বাড়ি রংপুর। লালমনিরহাট আধুনি’ক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন জোবায়ের।’

এদিকে এই ঘটনায় আশরাফুল, আ’রিফ হোসেন বায়েজিদ ও শরীফ নামে তিন জ’নকে শুক্রবার গ্রে’ফতার ক’রেছে পুলিশ।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »