মরার আগে মরোনা

করোনা জয়ের কথিকা_ড.আকন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম

Spread the love

আজকের ঝলক ৩১ মে ২০২০ :

ছবি: ড. আকন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম

আল্ কোরআনের সূরা আলে ইমরানের ২৭তম আয়াতে বিবৃত আছে- ‘‘আপনি রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে প্রবিষ্ট করান; আপনি মৃত থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটান, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটান, …………।” আর এভাবেই আল্লাহর ইচ্ছায়ই মৃত/জড় ভাইরাসে জীবনের আবির্ভাব ঘটে অন্য প্রাণীর কোষে ঢুকে (‘করোনা‘র ক্ষেত্রে মানুষের কোষে ঢুকে )। আহা, আল্লাহ্ কি না পারেন? আর আ্ল্লাহকে অসন্তুষ্ট করলে এমনই হয়।

‘‘করোনা” একটি ভাইরাস। ভাইরাসে জীব এবং জড় উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যে কোন ভাইরাস জীবন্ত পোষক কোষের বাইরে জড় বস্তুর ন্যায় আচরণ করে, তার মানে মরা । মরার আবার মরণ কি? তাই তাকে ঘায়েলও করতে হবে আক্রান্ত জীবন্ত কোষের মধ্যে থেকেই, বাইরে নয়। সাধারণত: ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। এ ছাড়া, বিগত ৫০ বছরের পরিসংখ্যান মতে একটি ভ্যাকসিন অবিষ্কার করতে বহু বছর (সচরাচর ৮ থেকে ২০ বছর) লাগে। এমনকি বিজ্ঞানীরা অনেক ভাইরাসের ভ্যাকসিন বহু বছরেও আবিষ্কার করতে পারেনি ( যেমন-জিকা, এইডস, মার্স ইত্যাদি)। সুতরাং ভাইরাসের প্রতিকারের পিছনে না দৌড়ে প্রতিরোধের পিছনে দৌড়াতে হবে। প্রবাদ আছে ‘‘প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম” এ প্রবাদটি সকল রোগের বেলায়ই প্রযোজ্য। এখন ‘করোনা’র জন্য এটি হয়েছে বাধ্যতামূলক, তার কারণ ‘করোনা’র কোন প্রতিকার মানে ঔষধ/টিকা আবিষ্কারই হয় নি। কবে হবে তার কোন নিশ্চয়তাও নেই। তাই এক্ষণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই এর একমাত্র প্রতিরোধ-পন্থা।

আবার দেখুন, থুথু যেখানে সেখানে না ফেলা বা অযথাই ময়লা হাত বার বার নাক-মুখ-চোখে না লাগানো তো মানুষের স্বাভাবিক আচরণ হওয়ার কথা। সেটাও হয়েছে এখন বাধ্যতামূলক। আবার পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ এবং সব ধরমই পবিত্রতাকে ধারণ করে। তাহলে কি দাঁড়ালো? মানুষ স্বাভাবিকভাবে ভাল মানুষের মত আচরণ করলে, ধরমো ভীরু হলে এবং বিজ্ঞজনদের সুবচন (প্রবাদ) মেনে চললে বালামুসিবত থেকে দূরে থাকা যায়। এটা আগেই সবার জানা থাকলেও নতুন করে এটি ‘করোনা’র শিক্ষা। অর্থাৎ ভাল হয়ে চলার বিকল্প নেই। দেখুন, মানুষ নিষেধের বেড়াজালে বন্দি যখন, তখনই ডলফিনের সংখ্যা ও এদের উচ্ছাস বঙ্গোপসাগরের তীর অবধি এসে পৌঁছেছে। আবার তখনই বিশ্বে বায়ু –শব্দ-পানি দূষণও লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। অথচ প্রকৃতি ও নীতির অবক্ষয়করণে মানুষ সীমালঙ্গন করছে দিনের পর দিন (সীমা লঙ্গন করোনাকালেও চলছে, যেমন- ত্রানের চাল চুরি)। এ ক্ষেত্রে আল্ কোরআনের সূরা আল্ ক্বাছাছ্-এর ৫৯ নং আয়াতের অংশবিশেষ হতে দেখুন–‘‘এবং তিনি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংশ করেন যখন এর অধিবাসীরা সীমালংঘন করে”। তাই প্রকৃতি ও নীতির অবক্ষয় রোধকরণ প্রসঙ্গে আমার নিজের কবিতার ভাষায় বলতে হয়-

‘‘প্রকৃতিকে করেছি জয়
এমন বুলি আর নয়
প্রকৃতিকে জয় নয়
করো প্রকৃতির সাথে সন্ধি
থাকতে হবে না তবে বন্দি।

প্রকৃতির পাশপাশি
অবক্ষয় হচ্ছে নীতি
প্রকৃতি ও নীতি
রক্ষণ যথারীতি
নেই কোন ভীতি
পরাজিত হবে ‘‘করোনা”।

ফয়লা মামার ‘‘পুশ”
ময়লা টাকার ঘুষ
পরিহার কেন করোনা?
পরনারী ধরো না
চুরি-চামারি করো না
মরার আগে মরোনা।”

এবার আসি সামাজিক দূরত্ব বিষয়ে-‘‘সামাজিক দূরত্ব” রক্ষা করা মানে কিন্তু অসামাজিক          হওয়া নয়। বাংলার মানুষ খুবই সামাজিক ও মানবিক। আমরা পরস্পর দূরে থাকলেও বিশ্বাসে কাছাকাছি আছি। আমাদের আইন-সৃঙ্খলা বাহিনী, ডাক্তার-স্বাস্থ্যসেবী ও ব্যাংকারদের দেখুন। আমাদের ভাল রাখার জন্য তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। এমনকি মারাও যাচ্ছেন। দেশে চোর-ছেঁচোর, নিঠুর লোক যে নেই তা নয়, তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। তাই হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। অধিক সংখ্যক ভাল মানুষের কারণে আমরা ‘করেনা’কে জয় করতে পারবো ইন্-শা-আল্লাহ। আবার শুধু বিশ্বাসে কাছাকাছি নয়, ‘কোভিড প্রটোকল-১৯’ মেনে আমরা যতটা সম্ভব কাজও করছি অনেকে। অনেকে ঘরে বসেও অন্যদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে অন-লাইনে মিটিং সম্পন্ন করছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে অসহায় মানুষকে ত্রাণও সরবরাহ করেছেন।  অনেকে চাল-ডালের ত্রাণ ছাড়াও ডাক্তারদেরকে বিনামূল্যে Personal protective equipment (PPE) ও সরবরাহ করেছেন । অনেকে আবার লাশের জানাজা ও কবরস্থ করার ব্যবস্থা করছেন। এভাবেই আমরা পরষ্পরের এবং অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছি।

এবারে আসা যাক ঘরে থাকা নিয়ে। যেহেতু ‘করোনা’ এড়িয়ে থাকার জন্য প্রতিাকার নয় প্রতিরোধই প্রধান হাতিয়ার, আবার প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে- ঘরে থাকা। আবার ঘরেও তো শারীরিক ও মানসিকভাবে ভাল থাকতে হবে। করোনাকালে ‘করোনা-চিকিৎসা’ ছাড়াও সাাধারণ চিকিৎসার জন্যও ডাক্তার পাওয়া দুরূহ হচ্ছে। তাই ঘরেও সুস্থ-সাবলীল থাকার বিকল্প নেই। তাই করোনাকালে ঘরে বসে সময় অতিবাহিতকরণ বিষয়ে কিছু কথা বলা অবান্তর হবে না বলে মনে করছি।  এ সময় ‘‘করোনায় করণীয়” বিষয়ক উপ-প্রকল্প প্রণয়ন করে দাতা সংস্থায় অর্থায়নের জন্য আবেদন দাখিল করতে পারেন।  ‘কোভিড-১৯ প্রটোকল’ নিয়ে সচেতনতামূলক লেখা লিখতে পারেন। দাপ্তরিক/অদাপ্তরিক,আনুষ্ঠানিক/অনানুষ্ঠানিক অন-লাইন মিটিং করতে পারেন। নিজ গ্রাম/ মহল্লার বন্ধু-বান্ধব/আত্মীয়স্বজনদের খোঁজ-খবর নিতে, তাদের মধ্যে অসহায়দের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারেন। বিদেশে অবস্থানরত বন্ধু-বান্ধব/আত্মীয়স্বজনের খোঁজ-খবর নিতে পারেন। স্কুল-কলেজের অতীব পুরাতন বন্ধু-বান্ধদের খোঁজ-খবর নিতে পারেন। এ ছাড়া, অপনি যে সব এসোসিয়েশনের সাথে জড়িত সে সব এসোসিয়েশনের বন্ধুদের সাথে ‘করোনা’য় অসহায় মানুষের পাশে দাড়াঁনোর পরিকল্পনা করতে পারেন।  এ সকল সামাজিক দায়িত্বের বাইরেও নৈতিক ও তাত্ত্বিক উন্নয়নে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে আর যা যা করা যায় তা হলো- ধরমীয় ও নৈতিক বই পড়া,  অন্যান্য ভাল বই পড়া,  ছাদ/ব্যলকুনি বাগান করা, স্বামী/স্ত্রী-সন্তানদের সাথে ভাল ভাল গল্প/খুনসুটি করা, ঘরোয়া খেলা (যেমন-ক্যারাম, লুডু  ইত্যাদি) করা, স্বামী/স্ত্রীকে ঘরকন্নার কাজে সাহায্য করা (এতে স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানরা অবাক ও খুশী হবেন), টেলিভিশনের ভাল ভাল অনুষ্ঠান দেখা, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে গুণগত সময় দেয়া, ব্যায়াম করা ইত্যাদি। এ ফিরিস্তির বাইরেও আপনার ভাল লাগা যে কোন ভাল কাজ করতে পারেন।

শেষ কথা : আমি অন্তত হতাশ নই এ জন্য যে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে মডেল হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে। বিপদে-আপদে একজন আর এক জনের পাশে দাড়াঁনোর ঐতিহ্য আমাদের আছে। সিডড়-আইলা-সাভারের রানা প্লাজার মত ট্রাজেডিকালে অনেক সুস্থ মানুষ অন্যদেরকে (অনাত্মীয়দেরকেও) বাচাঁতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন, পাগল হয়েছেন এবং মারাও গেছেন। দু–চার জন চোর-ছেঁচোর বাদে আমরা সবাই যে যার মত করে ‘কোভিড প্রটোকল’ মেনে প্রযোজ্যমতে কাজ করলে এ ‘করোনা’কেও আমরা জয় করতে পারেবো ইন-শা-আল্লাহ। আমার মতে এ দেশের বেশীর ভাগ লোক ধরমো ও নৈকিত দিক দিয়াও শক্তিশালী, তাই অযথা ভয় নয়, আবার অবহেলাও নয় বরং মনোবল চাঙ্গা রেখে আসুন আমরা যে যার মত দায়িত্ব পালন করে যাই।স্বাধীনতা লাভের মতই, জয় আমাদের হবেই, ইন-শা-আল্লাহ।

সবশেষে আল্ কোরআনের সূরা আল “বাকারাহ্”র শেষ আয়াতের অংশ বিশেষ পড়ে আমরা দোয়া করতে করতে বিদায় নিতে পারি এভাবে- ‘‘‘.. . …. হে আমাদের রব্ব! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি, তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব্ব! আপনি আমাদের এমন কিছু বহন করাবেন না, যার ক্ষমতা আমাদের নেই । আর আপনি আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক।

 

ড. আকন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম

সিনিয়র মহা-ব্যবস্থাপক এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী PACE Project.

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »