আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন
জলবায়ু বিপদাপন্ন নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও জীবিকা নিশ্চিতকরণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি নাগরিক সমাজের।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন
ঢাকা, ১৪ অক্টোবর ২০২২। জলবায়ু পরিবর্থনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও তাঁদের জীবিকা নিশ্চিত রাখতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ। আগামীকাল আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসকে সামনে রেখে আজ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল, নিন্মাঞ্চল, পার্বত্য, হাওরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা এবং পরিবেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। খাদ্য, পুষ্টি, জীবিকার পাশাপাশি নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যের ওপর তার প্রভাব চূড়ান্ত। মাত্রাতিরিক্ত লোনা পানির দৈনন্দিন ব্যবহারের ফলে জরায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া, কিশোরীদের মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতা ও যত্নের ব্যাঘাত, দৈনন্দিক কাজে লবণ পানির ব্যবহারে চর্মরোগ কিংবা বন উজার হওয়ার কারণে পাহাড়ি ছড়াগুলোতে সুপেয় পানির অভাব ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিকর প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সংবাদ সম্মেলন থেকে লবণাক্ত এলাকায় সরকারি খরচে পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে নারী ও কিশোরীদের বিশেষায়িত সেবা প্রদান এবং বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি জোরদার করার আহবান জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োকজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তামান্না রহমান। এতে আরও বক্তৃতা করেন কমিটির সদস্য মাসুদা ফারুক রত্না , মঞ্জু আরা বেগম, সৈয়দ আমিনুল হক, শেখ আসাদ, সালমা আক্তার, মনোয়ারা পারভীন, তাহরিমা আফরোজ, সৈয়দা শামীমা সুলতানা, প্রতিভা ব্যানাঞ্জি, মোস্তফা কামাল আকন্দ ।
মূল বক্তব্যে তামান্না রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে উপকূল, হাওর, চর বা পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জীবন, জীবিকা, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ সকল কিছুর ওপর। আর যেকোন দুর্যোগের প্রথম শিকার হয়ে থাকে সাধারণত নারী ও কিশোরীরা। গবেষণা বলছে, খাবার পানির সঙ্গে যে পরিমাণ লবণ নারীদের দেহে প্রবেশ করছে তার প্রভাবে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের গর্ভপাত বেশি হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানোর মতো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকার কারণে বেশির ভাগ প্রান্তিক নারী জরায়ু কেটে ফেলাকেই স্থায়ী সমাধান মনে করছেন। সুপেয় পানির অভাবে অধিকাংশ মেয়েরা মাসিকের সময় ব্যবহৃত কাপড় লবণপানি দিয়ে পরিষ্কার করতে বাধ্য হয়। যা তাদের জরায়ুতে নানা রোগের সংক্রমণ ঘটায়। অন্যদিকে পাহাড়ি নারীরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, তার ওপর পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ বেয়ে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। জলবায়ু আক্রান্ত এলাকায় একদিকে যেমন কিশোরী বিয়ের ঝুঁকি বাড়ছে অন্যদিকে রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। বিশেষ করে তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জীবিকা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, আক্রান্ত পরিবারের শিশুরা অর্থ উপার্জনের জন্য কাজে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে। শিশুদের নানা ধরনের নির্যাতনের পাশাপাশি কন্যাশিশুদের অনেক পরিবার দ্রæত বিয়ে দিচ্ছে। মঞ্জু আরা পারভীন বলেন, কম বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে এবং দ্রুত মা হতে গিয়ে কিশোরী মায়েরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে।
সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, হাওর ও উপকূলের নারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য স্থানীয় নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কাঁচামাল সরবরাহ করতে হবে। ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রশিক্ষিত নার্সসহ নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত ও বিনামূল্যে উপকরণ (স্যানিটারি প্যাড, জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ ইত্যাদি) সরবরাহ করতে হবে।
শামীমা আক্তার বলেন, নারীরা দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ যেমন- গোসল করা, কৃষি কাজ, গবাদিপশু পালন, চিংড়ির পোনা ধরাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে লিউকোরিয়াসহ সাধারণ পানিবাহিত রোগ এবং চর্মরোগের সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৬০ টির বেশি জেলায় উদ্যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশে র্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে।