আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাল তামিম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তামিমের বিদায়
জুলাই ০৬ ২০২৩, ১৭:০১
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় তামিম ইকবাল
আজকের ঝলক নিউজ
আরো একটি তারকার বিদায়
তামিম ইকবালের কাজীর দেউড়ির পৈত্রিক নিবাস থেকে হাঁটা দূরত্বে হোটেল টাওয়ার ইন। দুপুর দেড়টায় সময় নির্ধারণ করলেও তার প্রায় মিনিট বিশেক আগে কালো টি-শার্ট পরে তিনি সেখানে হাজির। অসংখ্য ক্যামেরা আর গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় ঠেলে চেয়ারে বসে দৃষ্টি যেন তার শূন্যে। চোখ ছলছল, আবেগের স্রোত তখনই টের পাওয়া যাচ্ছিল। আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল বড় ঘোষণাই আসতে যাচ্ছে। সেই বড় ঘোষণার দিতে গিয়ে গলা ধরে এলো তার বারবার, কান্না লুকাতে পারলে না। চোখ মুছে ধরা গলাতেই বলে দিলেন বিদায়।
তামিম লিখিত কোন বিবৃতি পড়েননি, লিখিত একটা বিবৃতি তৈরিও ছিল হয়ত। কিন্তু নিজের ভেতরের আবেগ আনুষ্ঠানিক বার্তা বোঝানো কঠিন। তামিমের বক্তব্যের পুরোটা থাকল দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকের জন্য,
‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আমার মনে হয় না বলার দরকার আছে। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমার মনে হয়েছে এটাই ঠিক সময়। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিব।’
‘আমি সব সময় একটা কথা বলেছি যে আমি খেলেছি… (কান্নার পর থেমে গেলেন)। আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য (আবার কান্না)… (আরও কিছুক্ষণ থেমে) কাজেই আমি নিশ্চিত না আমি তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি পুরো ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আরও অনেকেই আছে যাদের ধন্যবাদ দিতে হবে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন, আকবর খান, উনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা।
২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তামিমের। হারারেতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। টাইগাররা সেদিন জিতেছিল ১৪ রানে। ১৬ বছরের ব্যবধানে আরেকটি ওয়ানডে হয়ে থাকল তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। তবে আগের দিন (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী আফগানদের কাছে ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
৩৪ পেরোনো তামিম অবসরে গেলেন বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ একটি ক্যারিয়ার সঙ্গী করে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক রেকর্ডে জ্বলজ্বল করছে তার নাম, অনেক ‘প্রথম’ এসেছে তার নৈপুণ্যে। সেসব তুলে ধরা হলো দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য।
♦ তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ১৫ হাজার রান রয়েছে তামিমের। ৩৮৫ ম্যাচে ৩৫.৩৯ গড়ে তার সংগ্রহ ১৫১৪৮ রান।
তামিমের বর্নাঢ্য ক্যারিয়ার
- ♦আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের সেঞ্চুরির সংখ্যা মোট ২৫টি। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারের ২০টি সেঞ্চুরিও নেই।
- ♦ ২৪১ ওয়ানডেতে ৩৬.৬২ গড় ও ৭৮.৫৪ স্ট্রাইক রেটে তামিম করেছেন ৮৩১৩ রান। বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এই সংস্করণে ৮ হাজার রানের তালিকায় আছেন তিনি।
- ♦ওয়ানডেতে ১৪টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৫৬টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তামিমের। দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সবার উপরে আছেন তিনি।
- ♦বাংলাদেশকে ৩৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে তামিম জয়ের দেখা পেয়েছেন ২১টিতে, হেরেছেন ১৪টিতে। বাকি দুটি ম্যাচে কোনো ফল আসেনি। অন্তত পাঁচটি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে জয়-পরাজয়ের শতকরা হারে (৬০%) বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনি।
- ♦৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি ফিফটিসহ তামিমের রান ৫১৩৪। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি।
- ♦সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফিফটির সংখ্যায় সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে ও সেঞ্চুরির সংখ্যায় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যৌথভাবে দুইয়ে আছেন তামিম।
- টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। ৭৪ ম্যাচে ২৪.৬৫ গড় ও ১১৭.৪৭ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেছেন ১৭০১ রান।
- ♦সব সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ চার (১৭৫৩টি) ও ছয় (১৮৮টি) হাঁকিয়েছেন তামিম।