চলচ্চিত্র শিল্পী পরিষদ নির্বাচন ২০২২
কাঞ্চন-জায়েদ খান নির্বাচিত
জানুয়ারি ২৯ ২০২২, ১৬:৩৮
কাঞ্চন-জায়েদ খান নির্বাচিত ; নির্বাচনের পরে যা বল্লেন কাঞ্চন, নিপুন ও জায়েদ খান
আজকের ঝলক নিউজ
সারা দিন ভোট গ্রহণ এবং প্রায় সারা রাত ভোট গণনা শেষে আজ শনিবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন। চূড়ান্ত ভোট গণনা শেষ হয় আজ ভোররাত সাড়ে চারটায়। প্রথমে কার্যকরী সদস্য এবং অন্য পদের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে হয়। শেষে জানা যায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম। গতকাল শুক্রবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৬৫টি। এর মধ্যে বাতিল ব্যালট ২৬টি। ৩৩৯ ভোটের মধ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
“জামাই দুই নম্বরী” নাটকে তানিন সুবাহ’র সাথে শিপন মিত্র ও সাগর সিদ্দিকী
২০২২-২৪ মেয়াদের জন্য সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি পেয়েছেন ১৯১ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পান ১৪৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে ১৭৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন জায়েদ খান। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নিপুন ১৬৩ ভোট পান।
২১৯ ভোট পেয়ে ডিপজল ও ১৯১ ভোট পেয়ে সহসভাপতি পদে রুবেল নির্বাচিত হয়েছেন। সহসাধারণ সম্পাদক পদে সাইমন সাদিক জয়ী হয়েছেন ২১২ ভোট নিয়ে। তাঁর কাছে সিনিয়র অভিনেতা সুব্রত হেরেছেন ১২৭ ভোট পেয়ে। এ পদে চিত্রনায়ক রিয়াজ ১৫৬ এবং অভিনেতা ডি এ তায়েব ১১২ ভোট পেয়েছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শাহানূর ১৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পরাজিত প্রার্থী আলেকজান্ডার পেয়েছেন ১৫৫ ভোট। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে ২০৫ ভোট পাওয়া জয় চৌধুরীর কাছে নিরব হেরেছেন ১৩৪ ভোট পেয়ে। আজাদ খান কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন ১৯৩ ভোট পেয়ে। তাঁর কাছে ফরহাদ হেরে গেছেন ১৪৬ ভোট পেয়ে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন পীরজাদা শহীদুল হারুন। তাঁর সঙ্গে কমিশনার হিসেবে রয়েছেন বি এইচ নিশান ও জাহিদ হোসেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। এবার ১৫তম নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবারের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্রের ৮ অনুচ্ছেদের (চ) অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা।
এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিজ নিজ প্যানেলের জয় নিশ্চিত করতে কাঞ্চন-নিপুন এবং মিশা-জায়েদ—দুটি প্যানেলের সদস্যরা শক্তভাবে মাঠে নামেন। এ ছাড়া বাতিল হওয়া ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার হিসাব-নিকাশ, জ্যেষ্ঠ তারকা শিল্পীদের সমর্থন—এসবের কারণে শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি শিবিরে বেশ উত্তেজনা ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছিল।
কার্যকরী সদস্য পদে সর্বোচ্চ ২৪০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন নায়ক ফেরদৌস। এ পদে মৌসুমী পেয়েছেন ২২৫, অঞ্জনা ২২৫, রোজিনা ১৮৫, অরুণা বিশ্বাস ১৯২, আলীরাজ ২০৩, সুচরিতা ২০১, কেয়া ২১২, অমিত হাসান ২২৭, জেসমিন ২০৮ ও চুন্নু ২২০ ভোট।
হেরে গেলেন নিপুর তবে থাকবেন শিল্পীদের পাশে ।
নির্বাচনের পরে যে যা বল্লেন,
নির্বাচন পরবর্তী আলাপচারিতায় এসব বিষয়েই মুখ খুললেন এই নেতা ও নায়ক।
প্রথমেই বলেন, ‘অনেকদিন তো একসঙ্গে কাজ করেছি। মিশা ভাইয়ের জন্য মায়া জমে গেছে। তার সঙ্গে বোঝাপড়া খুব ভালো ছিল। তিনি গার্জিয়ানের মতো আমাকে আগলে রেখেছিলেন। তার জন্য আমার মনটা খুবই খারাপ। মিশা ভাইয়ের সাথে একটা সেটআপ ছিল। সেটা খুব মিস করবো। কাঞ্চন ভাই উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের সাথে কাজ করেছেন। তিনি আগে সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তার অভিজ্ঞতা আছে। আশা করি একসাথে শিল্পীদের স্বার্থে কাজ করতে পারবো। ডিপজল ভাই, রুবেল ভাইসহ আমাদের প্যানেলের সিনিয়ররা নির্বাচিত হয়েছেন। ভালো লেগেছে। এতে কাজ করতে সুবিধা হবে। আর যার কাজ করার ইচ্ছে থাকে সে সব জায়গায় করতে পারে।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি, ‘তার জন্য শুভকামনা। তিনি প্রথমবার নির্বাচন করে ভালো করেছেন। নিপুণ তো শিল্পীদের জন্যই কাজ করতে চেয়েছেন। আমরাও সেটা করবো। তাই আশা করি কাজের ক্ষেত্রে তার সহযোগিতা পাবো।’
তবে এবারের নির্বাচনটা তার জন্য বেশ কঠিন ছিল- সেটাও অকপটে স্বীকার করলেন জায়েদ। এর একটি কারণ সাম্প্রতিক তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন তিনি।
বললেন, ‘দয়া করে এভাবে অপপ্রচার গুঞ্জন ছড়িয়ে কাউকে হেয় করবেন না। আমাকে নিয়ে যা ছড়ানো হয়েছে সেটি একদমই অপ্রত্যাশিত ও অন্যায়। আমি যদি কাজ না করতাম তাহলে শিল্পীরা ভোট দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত করতেন না। কিছুটা কাজ করেছি বলেই হয়তো আমি আবারও নির্বাচিত হলাম। ব্যক্তিগত আক্রমণ করে, মিডিয়া ট্রায়াল করে প্রকাশ করা এবং মানুষকে ছোট করাও অপরাধ ও অনৈতিক। আমিও মানুষ, শুধরানোর চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। তার মানে এই না যে, ব্যক্তিগত আক্রমণ করে হেয় করবেন।’
তবে ব্যক্তিগত আরও একটি কারণ উল্লেখ করেন জায়েদ খান। তার ভাষ্য, ‘নির্বাচনটি আমার জন্য কঠিন ছিল। কারণ কিছুদিন আগেই আমার মা মারা গেছেন। মাত্র ৩০ দিন হলো। আর ব্যক্তিগতভাবে যে আমাকে বারবার আক্রমণ করা হয়েছে তা তো বললামই। যা আমাকে খুবই ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। যাক, এগুলো মনে রাখার বিষয় নয়। ভোটের পরিবেশ আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছে।’
সবশেষে সাংবাদিকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান এই নবনির্বাচিত নেতা। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই চলতে চান তিনি।