নিয়মিত করদাতাগণকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি নাগরিক সমাজের
০১ জুন ২০২২: সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বর্তমান সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়, কিন্তু এই উদ্যোগে নিয়মিত করদাতাগণকে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন নগরিক সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ। তাছাড়া এই কর্মসূচির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সকল পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন তাঁরা। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।
ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারটি পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডঃ তোফায়েল আহমেদ। এতে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী-এমপি, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মজিদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটোয়ারি এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী পরিচালক ডঃ নিলুফার বানু। এতে আরও বক্তৃতা রাখেন জাতীয় শ্রমিক জোটের ডা. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, আশা’র এক্সিকিউিিটভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক, স্প্রিহা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলী আসগর সাবরি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের আহসানুল করিম ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে আহসানুল করিম বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঘোষণা করেছেন, যা আমাদের প্রবীণ নাগরিকদের ভবিষ্যতের একটি আলোকবর্তিকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘোষিত পেনশন কর্মসূচিটির দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বাণিজ্যিক, কিন্তু যেহেতু সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করা হয় তাই এই কর্মসূচিটিকে কোনভাবেই বাণিজ্যিকভাবে না বিবেচনা না করে মানুষের কল্যাণ বা অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। ‘পেনশন অথরিটি অ্যাক্ট-২০২২’ সংক্রান্ত খসড়াটিতে উপরেল্লিখিত বিষযসমূহ অন্তর্ভুক্তিমূলক না হয়ে আমলাতন্ত্র দ্বারা প্রস্তুত এমন একটি কর্মসূচি তুলে ধরছে যা এর কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্বমীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তিনি এই বিষয়ে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন: (১) আয়করদাতাদের সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ, কারণ তারা দেশের উন্নয়নের মূল সম্পদ সংগঠক এবং এর বিনিময়ে এই ধরনের সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, (২) সরকারকে প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে আহরিত রাজস্বের একটি অংশ এখাতে সবরাদ্দ করতে হবে, (৩) সরকার কর্তৃক পেনশন তহবিলের নিরাপত্তা ও বিনিয়োগের সার্বভৌম গ্যারান্টি প্রদান করতে হবে, এবং (৪) সামগ্রিক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং এটিকে একটি স্থায়িত্বশীল ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে গণ মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের রাজস্ব ব্যবস্থা কল্যাণমূখী নয়, এ কারণে এটি প্রকৃতপক্ষে মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ কিন্তু এটি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য এটিকে একটি কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দিতে হবে। নিয়মিত করদাতা শ্রেণীকে উৎসাহিত করতে তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজস্ব ব্যবস্থাটিকে ঢেলে সাজাতে হবে।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার এমপি বলেন, প্রস্তাবিত সর্বজনীন স্কিম আসলে একটি বিনিয়োগ প্রকল্প, অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে সকলের জন্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্তার করতে হবে। এই সংস্কারটি হতে হবে কেবিনেটে যাওয়ার আগেই।
ডঃ তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকারি কর্মচারীগণ বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্পের সুবিধাগুলো সবার আগেই পেয়ে যান, কারণ তাঁরা নীতি কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করছেন। যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর দেন, তাঁদের পুরস্কৃত করার একটি উত্তম উপায় হতে পারে এই পেনশন স্কিম। এই খাতে অর্থ যোগান দিতে ‘যাকাত ফান্ডকে’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে জমা দেওয়ার আগে সংশোধন করতে হবে।
জনাব মাহাবুল হক বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই পেনশন স্কিম গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে ৫০% অর্থায়ন হবে রাজস্ব থেকে। আমরা কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১২%-এ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এটি সফল হলে পেনশন স্কিমে অর্থায়ন সহজতর হবে।
ডাঃ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, পেনশন স্কিমের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা এবং সুশাসনের বিষযটি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যেহেতু দেশে সম্পদ ও জনগণের অর্থ অপব্যবহারের প্রচুর প্রমাণ রয়েছে, তাই অন্তর্ভুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণের পরিবর্তে শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতা হলে এর সফলতা নিয়ে সন্দেহ থাকবে।