বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানী ও ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর লড়াই
বাংলা ভাষায় স্বাস্থ্য বিষয়ক ‘মাসিক গণস্বাস্থ্য’ পত্রিকা বের করার যখন ঘোষণা দেয়া হয় তখন আমি কলেজে যোগদান করেছি। প্রবল আগ্রহে সেই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকে অনেক বছর গ্রাহক হয়ে এ পত্রিকা পেয়েছি। এ পত্রিকার মাধ্যমে এবং আরো অনেক প্রকাশনার মারফৎ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ওষুধ বাজারের কারচুপি ও শোষণের মুখোশ খুলে দেয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ওষুধ উৎপাদন ও ব্যবসার নৈরাজ্য নিয়ে বৃটিশ গবেষক ডায়না মেলরোজের গবেষণা গ্রন্থ Bitter Pills-এর অংশবিশেষ-বাংলাদেশ অংশ ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও ওষুধ’ নামে বইটি গণপ্রকাশনী প্রকাশ করে। তারা আরো প্রকাশ করে ডেভিড ওয়ার্নারের বিখ্যাত বই ‘যেখানে ডাক্তার নেই’ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের (essential drug ) তালিকা।
এই বইগুলো প্রকাশের ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উদ্দেশ্য ছিল বহুজাতিক কোম্পানীর বিরুদ্ধে লড়াই চালানো। গরিব দরদী ডাক্তার গ্রামে ও শহরে আরো অনেক পাওয়া যাবে কিন্তু গরিব বাংলাদেশকে শোষণকারী বিশ্ব পুঁজিতন্ত্রের কারবারী বহুজাতিক কোম্পানীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে বেপরোয়া মুনাফার বিরুদ্ধে লড়াই চালাবার হিম্মত একমাত্র জাফরুল্লাহ চৌধুরীরই ছিল। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ওষুধনীতি বাস্তবায়নের আন্দোলনে বহুজাতিক কোম্পানীর পক্ষাবলম্বনকারী এবং ওষুধনীতির বিরোধী চাকুরীরত সরকারী ডাক্তারদের সংগঠন ‘বি এম এ’ মাসাধিককাল ধর্মঘট করে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অচল করে দেবার পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও তাঁর সহযোদ্ধারা ওষুধ নীতি বাস্তবায়ন করে ছেড়েছিল। অতএব বাংলাদেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএমএ-র একজন অপ্রিয় ব্যক্তি! জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রয়াণে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য লড়াই করার ও তার নেতৃত্ব দেবার মতো একজন অকুতোভয় সৈনিককে আমরা হারালাম।