গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি হলো নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা
স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলো জনগণ। আর সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন জনগণের ভোটে সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।এর প্রায়োগিক তাৎপর্য দাঁড়াল এই যে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সীমাবদ্ধ হল পাঁচ বছর অন্তর ভোট দেওয়ার মধ্যেই।
আজকের দেশের নির্বাচন গুলোর হালচাল দেখে অনেকেই ভাবছেন নির্বাচন ব্যবস্থা আজ এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলেছে।তবে মনে রাখতে হবে হঠাৎ এক দিনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়নি এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর।
বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনের পরেই ভোট কারচুপি সহ হরেক রকমের অভিযােগ শােনা যায়।একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রশ্নে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলাের এভাবে মরিয়া হয়ে ওঠার জন্য দায়ী প্রচলিত ‘গরিষ্ঠ ভােট পদ্ধতি যার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে
সংঘাতমূলক রাজনীতি এই পদ্ধতিতে সামান্য ভােটের ব্যবধানে হেরে গিয়ে একটি ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে বহুদূরে ছিটকে পড়তে পারে। আবার ছলে বলে কলে কৌশলে অন্যদের চাইতে বেশী ভােট সংগ্রহ করতে পারলেই একজন প্রার্থী একটি এলাকার দন্ডমূল্ডের কর্তা হয়ে বসতে পারেন-সামগ্রিক ভােটের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ পেয়েও।
অর্থাৎ,এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে সকল পক্ষেই থাকে চরম ঝুকি। যা জন্ম দেয় পরাজয়ের ভীতি জণিত প্রচন্ড মানসিক অস্থিরতা। ফলে প্রাথীগণ এবং তাঁদের সমর্থকগণ হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে পড়েন এবং বিজয়লাভের জন্য নীতিবােধ পুরােপুরি বিসর্জন দিয়ে বসেন।
নির্বাচন যদি প্রার্থীর ব্যক্তিগত মান-সম্মান বা বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়,তাহলে এক্ষেত্রে কাউকে সংযত হবার উপদেশ দিয়ে কোন কাজ হবে বলে মনে হয়। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হলে নির্বাচন পদ্ধতির মৌলিক পুনর্বিন্যাস প্রয়ােজন।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা গরিষ্ঠ ভােট পদ্ধতি ব্যবহার করছি ব্রিটিশ শাসনের উত্তরাধিকার হিসাবে। দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে স্থানীয় প্রয়ােজনের নিরীখে এই ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেনি। ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আমাদের প্রেম-ঘৃণা দৃষ্টিভংগীর কারণে গণতন্ত্রের তথাকথিত প্রতীক হিসেবে ওর্মেই মিনিষ্টারের যে ভাবমূর্তি আমাদের চিন্তা চেতনাকে আন্দ্র করে রেখেছে তার ফলেই সম্ভবত এই চরম অগণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে আমরা বিনা-প্রতিবাদে এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছি।
এমনকি এই নির্বাচন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা, কিংবা বিকল্প নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলােচনা-পর্যালােচনা থেকেও আমরা এ যাবৎ বিরত থেকেছি। পৃথিবীতে বৃটেন এবং তার কলােনীসমূহ ছাড়া আর কোথায়ও হবহু এই ধরণের নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলিত নেই এবং অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ বহু পূর্বে এই পদ্ধতি বর্জন করে আনুপাতিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, এই তথ্যটি বােধ হয় আমাদের রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপকভাবে পরিজ্ঞাত নয়।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মোঃআজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন
কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, জাতীয় পার্টি
কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি
সভাপতি,জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ