মানুষের সু-শিক্ষা প্রকাশ পায় আচরনে
কার্টেসি-ম্যানার্স-মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্ব
ফেব্রুয়ারি ২০ ২০২১, ১৭:০২
আজকের ঝলক :
শিক্ষা হলো মানুষের স্বভাব ও আচরন পরিবর্তনের ঢাল । শিক্ষা মানুষকে কোমল ও ইতিবাচক আচরন করতে এবং মানবীয়নীতি শেখায় ।
অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে যাদের মুখের ভাষা শুনলে আপনাকে মনে হবে তারা আদিম কোনো বর্বর জাতি তার মানে হয়তো তারা ডিগ্রী নিয়েছে কিন্তু তাদের আরচরণ কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
শিক্ষার সাথে কার্টেসি, ম্যানার, মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্ব খুবই জড়িত । আসুন জেনে নেই কার্টেসি, ম্যানার, মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্ব কি ?
কার্টেসি :
কার্টেসি মূলত সৌজন্যবোধ যেমন কেউ আমাদের উপকার করলে উত্তরে বলি ধন্যবাদ । আবার কারো কাছ থেকে কোনো কিছু নিলে বলি এই জিনিসটি তিনি দিয়েছেন । আবার মাঝে মাঝে কারো লেখা শেয়ার করলে তার নামটি ব্যবহার করি সেটাই হলো কার্টেসি । কার্টেসি হলো কৃতজ্ঞতাবোধ ও তা প্রকাশ করা ।
আপনি যদি কোনো গ্রুপ বা কোথাও থেকে কোন পোস্ট কপি করে পোস্ট করেন তাহলে লেখকের credit বা কৃতিত্বটা দেওয়ার জন্য মূলত কার্টেসি হিসেবে তথ্যসূত্র লেখাটা প্রয়োজন। অনেকে অন্যের লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেয় যেটা কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের ভিতরও পড়ে। তাই কোনো লেখা কারও অনুমতি ব্যতিত কপি করে পোস্ট করলে কার্টেসি দেওয়া উচিত ।
আপনার স্ত্রীকে খুব সুখি রাখার ১০টি কৌশল ।
ম্যনার্স :
ম্যনার্স মূলত : সমাজে চলার জন্য যে নিয়ম মেনে চলতে এবং যে ধরনের ব্যবহার করতে হয়। সেটা হতে পারে টাইয়ের নট বাধা কিংবা কাটা চামচের ব্যবহার। এসব বিষয় নিয়ে অনেকেরই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ বিষয়ে তেমন কোনো প্রকাশনা চোখে পড়ে না। তবে বর্তমান কর্পরেট জগতে জায়গা করে নিতে যে বিষয়গুলো একেবারে শুরুতেই জানা প্রয়োজন এমন সব বিষয় সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন কৌশল হলো ম্যানার ।
আবার কোনো কিছু করার আগে অনৃুমতি নেয়া যেমন কোনো স্থানে বসার আগে জিগ্গেস করা এখানে কেউ আছে ? আমি একটু বসতে পারি । আবার কেউ মোবাইল ব্যবহার করছে ফোনে কথা বলছে কথা শেষ অবধি অপেক্ষা করা হলো ম্যানার। অর্থাৎ আপনার কারণে কেউ যেনো বিরক্তবোধ না করে আবার আপনিও যেনো কোনো বিরক্তিকর অবস্থায় না পরেন সে জন্য পূর্ববর্তী সতর্কতা হলো ম্যানার ।
ম্যানারিজমের অর্থ বিশেষ রীতি নীতি। ইতালীয়ান শব্দ ম্যানিয়েরা হতে ম্যানারিজমের উৎপত্তি। ইতালীয়ান শিল্পী ভাসারী প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। আমরা বড়দের সম্মান করে তাদের সালাম, আদাব সমস্কার দেই তা হলো ম্যানার । অর্থাৎ প্রতিটি সমাজে কিছু নিয়মনীতি আছে যা আমার শ্রদ্ধা করে এবং সম্মানের সাথে গ্রহন করি ও চর্চা করি সেই সকল সৌজন্যবোধকেই মূলত ম্যানার বলে ।
ম্যানারিজম :
ম্যানারিজম শিল্পীরা প্রকৃতির কাছ হতে শিক্ষা গ্রহন না করে তাদের পূর্ববর্তী কালের শিল্পী অর্থাৎ হাই রেনেসাঁ যুগের শিল্পীদের শিল্পকর্ম হতে শিখতে শুরু করেন। রেনেসাঁর প্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ এ সময়কার শিল্পীরা চাইলেন ওল্ড মাস্টারের কাজকে আজ্ঞা করে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে। যার পরিনতি শিল্পীদের প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ দিতে সমর্থ হয় ম্যানারিজম শিল্পশৈলী। ম্যানারিজম কে তাই ফার্স্ট ইন্টেলেকচুয়াল আর্ট বলা হয়।
ম্যানারিজম শিল্পমৈলীর উৎপত্তি হয়েছিল হাই রেনেসাঁর পর শিল্পের জগতের শূন্যতা পূরনের জন্য। এই শূন্যতা পূরনের জন্য ম্যানারিজম শিল্পীরা পূর্ববর্তী শিল্পীদের কাজের বিশেষ কিছু ম্যানারকে প্রাধান্য দিতে তাদের কাজে এনেছিলেন পূনরাবৃত্তি। আর এ পূনরাবৃত্তি করা হতো সচেতনতার সাথে।
বর্তমান কালের পন্ডিতেরা ম্যানারিজমের যুগকে সংস্কারমুক্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন। পূর্বে মানুষ একে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় বলে মনে করতো। তারা বলতো যে ম্যানারিস্ট শিল্পীরা রেনেসাঁস যুগের সৃষ্টিকে ব্যর্থ অনুকরন করেছিলেন এবং আকৃতিকে অতিরঞ্জিত করতে গিয়ে কৃত্রিমতার আমদানী করেছেন। সপ্তদশ শতাব্দীর নিত্ত ক্লাসিকাল শিল্পানুরাগী পন্ডিতেরা ম্যানারিজম সম্বন্ধে এই ধারনা পোষন করতেন বলে মানুষের মনে এলো সংস্কার। কিন্তু ম্যানারিজম শব্দটির ভাবার্থ পাওয়া যায় শিল্পী ভাসারীর লেখা হতে। ম্যানার শব্দ হতে এর উৎপত্তি ইতালীয় ভাষায় যাকে বলে ম্যানিয়েরা। শিল্পীর ভাবপ্রকাশের পন্থা প্রভাবিত হয় ঐতিহাসিক কারনে বা তার আপন ব্যক্তিসত্তা দ্বারা বা আঙ্গিক দ্বারা এই হতে সৃষ্টি হয় স্টাইল। ভাসারীর ব্যবহৃত ম্যানিয়েরা শব্দটি এরই ইঙ্গিত বহন করে।
মূল্যবোধ
মূল্যবোধ হলো একান্ত নিজস্ব চিন্তাচেতনা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিজে ধারণ করা ও তা চর্চা করা । তাই প্রতিটি মানুষের মূল্যবোধ । মানুষ যে মূল্যবোধে বিশ্বাসী সেই মূলবোধ চর্চায় অভ্যস্ত । উদাহরন স্বরুপ বলা যায় । খারাপ শব্দ ব্যবহার কেউ কেউ মনে করেন খারাপ শব্দ ব্যবহার করলে তার ক্ষমতা প্রকাশ পায় তাই সে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় খারাপ শব্দ ব্যবহার করে । কেউ কেউ দ্বাঁড়িয়ে প্রসাব করাকে যৌক্তিক মনে করেন আবার কেউ কেউ মনে করেন বসে প্রসার করা উচিত । কেউ কেউ বাথরুমে খালিগায়ে গোসল করাকে ঠিক মনে করেন আবার কেউ কেউ পোষাক পড়ে গোসল করাকে ঠিক মনে করেন । কেউ মনে করেন স্বামীকে-স্ত্রীকে শাসন করে দাবিয়ে রাখতে হবে । কেউ কেউ শ্রদ্ধাবোধ রেখে শাসন না করে স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে এগুলো হলো মূলবোধ । তেমনি কেউ কেউ মনে করেন পরীক্ষায় নকল করার চেয়ে ফেল করা ভালো, কেউ কেউ মনে করেন ঘুষ দিয়ে বেশি টাকা আয়ের সাথে কম আয় করা ভালো এগুলো সবই মূলবোধ যা ব্যক্তি টু ব্যক্তি আলাদা ।
ব্যক্তিত্ব :
ব্যক্তিত্ব হলো মানুষের বাহিরের পরিচয় যা তার পোশাক-পরিচ্ছদ, রুচিবোধ, চলাফেরা, সাজ-গোছ, কথা-বার্তা ও ব্যবহারে প্রকাশ পায় । সততার প্রতি ভালবাসা অনুভব করাকেই ব্যক্তিত্ব বলে। অর্থাৎ একজন মানুষ যখন প্রতিটি জিনিসকে যথাযথভাবে মূল্যায়নের প্রচেষ্টা চালান তখন তাকে একজন ব্যক্তি বলে মনে হয়। আর যিনি এরকম করার চেষ্টা করেন না তাকে মৃত বা অপদার্থ বলে মনে হয়৷ সুতরাং এটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে সততা বা সত্যবাদিতার মাধ্যমেই কারও ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়।
সাধারণত মুখের ভাষা ব্যবহার, অন্যের সাথে আচরণের কৌশল, ইতিবাচক শব্দ চয়ন যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে । একজন মানুষ সবসময় তার উচ্চ মর্যাদা ব্যক্তিকে সন্মান দেখিয়ে চলেন, কিন্তু তার থেকে কম মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনি কেমন ব্যবহার করেন, তাকে সন্মান জানায় কিনা এইসবের মধ্যেই কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বোঝা যায়।
https://www.youtube.com/watch?v=WGVjKqK_Rpw&list=RDWGVjKqK_Rpw&start_radio=1
লিখেছেন :
মো: জহিরুল ইসলাম
শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবি ।