জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা ২০২২-২৩
জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ বিস্তারিত
জুন ১৩ ২০২২, ২২:৪৮
আজকের ঝলক
জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা ২০২২-২৩
জিডিপির সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে, ঋনের পরিমান না বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি পূরন করা বড় চ্যালেঞ্জ : যেখানে সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ।
১২ জুন ২০২২। কোস্ট ফাউন্ডেশন। ঢাকা।
অনলাইন সভায় বক্তারা ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের ট্যাক্স এবং রিসোর্স মবিলাইজেশন, কৃষি, মুদ্রাস্ফীতি ও জীবিকা, শিক্ষা, জলবায়ু, জেন্ডার দৃষ্টিকোণ, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং বাজেট ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ভর্তুকি, বাজেটে রাজনীতি ও অর্থনীতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করেন। আলোচনার মাধ্যমে বাজেটের সুবিধা-অসুবিধা উঠে আসে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এই বাজেটের টাকার পরিমানে বৃদ্ধি পেলেও রাজস্ব আয়, বৈদেশিক ঋণ, জিডিপির সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে বাজেটে সুশাসন নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভর্তুকিতে বরাদ্দ ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এবারের প্রাথমিক প্রাক্কলনে ১৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা ভর্তুকি ব্যয় বাড়ছে। এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যের সাম্প্রতিক যে গতি প্রকৃতি তাতে ভর্তুকি ব্যয় আরও ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এটি বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি চ্যালেঞ্জ।
এই বাজেট ঘাটতি থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। চতুর্দিকে চক্রাকারে এই যে ঘাটতিগুলো রয়েছে, সেগুলোর একটা ফয়সালা না হলে বার্ষিক বাজেট নিয়ে কথাবার্তা বলার কোনো অর্থ থাকবে না। শুধু নিঃস্ব হতে থাকা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের কিংবা আরও নিচে নেমে বিত্তহীনের দীর্ঘশ্বাস শুধু দেখা যাবে।
‘‘বাজেটে যেভাবে আয়ের উৎস্য হিসাবে ঋণকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে টাকার মান ডলারের বিপরীতে আরো কমে যাবে, দেশে এখনো অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কাছ থেকে সঠিকভাবে কর আদায় হচ্ছেনা কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তালিকায় নেই তাদের কাছ থেকে কর আদায় হলে বাজেট ঘাটতি কমানো সম্ভব ’’- আহসানুল করিম বাবর
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট চার লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর-সংগৃহীত কর থেকে পাওয়া যাবে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।ফলে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বাজেটে এ হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এ ঘাটতি মেটানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
ঘাটতির মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান আসবে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সরকার ঘাটতি বাজেট পূরনের জন্য ঋনের দিকে ঝুকবেন যা জাতীয় অর্থনীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ জন্য এখনো যে সকল কোম্পানীগুলো ভ্যাট ট্র্যাক্সের আওতায় আসেনি বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় অনেক বড় বড় কোম্পানী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তাদের ভ্যাটের আওতায় আনতে পারলে বাজেট ঘাটতি কমানো সম্ভব।
‘‘বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাজেটে প্রশাসনিক খরচের তুলনায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে খরচ কম এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও উন্নয়নের বাজেটের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনা জরুরী, বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এ ঘাটতি মেটানো হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা মনেকরি ঘাটতি বাজেট ভালো যদি সেই ঘাটতি কর আদায় করে পূরণ করা যায়। প্রতি বছরই যদি ঋণ করে ঘাটতি মেটাতে হয় তাহলে বড় একটি অংশ খরচ হবে ঋণ ও সুদ পরিশোধে যা আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়’’। করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে শিক্ষার্থীরা স্কুলের বাইরে ছিলো তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরেছে গ্রামীণ কিশোরীদের উপর, তারা অনেকেই পড়াশুনার খচর মেটাতে পারবেনা, তাই তাদেরকে অন্তত এইচ,এস, সি পর্যন্ত লেখাপড়ার সকল খরচ ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে, তাই আমাদের ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে’’ রেজাউল করিম চৌধুরী।
মোস্তফা কামাল আখন্দ জানান, মানুষ বাজেটের আকার বোঝেনা তারা বাজারে গিয়ে দেখবে তাদের দৈনান্দিন প্রয়োজনীয় পন্য ক্রয় সীমার মধ্যে আছে কি-না। মূল্যস্ফীতি বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় কোন দেশের দ্রব্য বা সেবার মূল্যের স্থায়ী একটা উর্ধগতি বুঝায়। সাধারণভাবেই মানুষ নিত্যদিন যে দ্রব্যের প্রয়োজন বোধ করে তার দাম নিয়েই তারা চিন্তা করবে।
মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্য সরকার ঠিক করেছে তা ঠিক আছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করা হয়নি। বাজেট বক্তৃতায় এমন কিছু বলা হয়নি। মুদ্রানীতি নিয়েও বলা হয়নি। ঘাটতির বিষয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে সে জায়গায় ব্যাংক খাত প্রস্তুত কি না? ব্যাংক খাতে বর্তমানে যে তারল্য সংকট, তাহলে কী করে সরকার ব্যাংক থেকে টাকা নেবে?
ঠিক এই মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশ। গত ৪০ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এ দৌড়ে ব্রিটেনও খুব পিছিয়ে নেই। জ্বালানি ও জীবযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লন্ডনে বিক্ষোভ করেছে মানুষ। মূল্যস্ফীতির হার পাঁচ দশমিক চার শতাংশ নিয়ে বছর শেষ করেছে দেশটি। যদিও ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
নতুন বাজেটের ফলে যাবে মূল্যস্ফীতি না ঘটে সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। কারণ মূল্যস্ফীতি হলো ছিনতাইকারীর মতো ধ্রæত আর শকুনের মতো হিং¯্র। আর প্রকাশ্যে কর বাড়িয়ে দেওয়া হলো মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ।
আলোচনাকালে জাহাঙ্গীর হোসেন তার আলোচনায় জানান জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার বাড়ানোর দাবি নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসস্কসহ দেশের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটছে না।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা মোট বাজেটের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। বিদায়ী বছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। তা ছিল বাজেটের ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাবকে গতানুগতিক বলেছেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। গুণগত শিক্ষার জন্য বরাদ্দের হার আরও বাড়ানোর দাবি করেছেন তাঁরা। শিক্ষায় বিনিয়োগ জিডিপির ৬ ভাগে যেতে হবে। আমরা ৩ ভাগে আছি। শিক্ষায় আরও অনেক বিনিয়োগ করতে হবে, অন্যান্য দেশে দেখা যায় প্রতি ১৫জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক অথচ আমাদের দেশে এখনো ৩৫জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। আমরা বিশ্বাস করি, বড় বড় মেগা প্রকল্প হচ্ছে, যেগুলো আমাদের যোগাযোগের জন্য, দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার। তেমনি পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা। সেটিই হওয়া উচিত বড় মেগা প্রকল্প।
উচ্চশিক্ষা বলতে যা বোঝায়, তাতেও এত বেশি খাদের সংস্থান করে রেখেছি যে সেখানে গভীরতা এবং মানবতা দুটোরই অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সত্যিকার অর্থে কোন ধরনের গবেষণা হচ্ছে এবং সেই গবেষণায় আমাদের জ্ঞানচর্চা কতটা লাভবান হচ্ছে, সেই প্রশ্ন করা হলে যে উত্তর পাওয়া যাবে, তাতে স্বস্তি মিলবে না। শিক্ষাক্ষেত্রের বাজেট ঘাটতি কী দিয়ে পূরণ হবে? সততা ও দক্ষতা যেখানে সিস্টেমের কারণে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে, সেখানে আদর্শ শিক্ষক কিংবা তুখোড় ছাত্রের জন্য কি অপেক্ষা করতে পারি আমরা?। তাই গুনগত শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধি করে সেখানে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
‘‘কৃষিখাতে সকল ভর্তুকি যাতে প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছায় সেটি স্পষ্টভাবে বাজেটে উল্লেখ থাকতে হবে। কৃষির সাথে সরকারের অনেকগুলো দপ্তর জড়িত, বাজেট বৃদ্ধি হয়েছে সেটি যেমন ভালো বিষয় কিন্তু তার সুবিধা যেনো প্রকৃত কৃষকরা পায় সে দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিদ্যুৎসহ আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি দিলে তা দরিদ্র কৃষকের জন্য কাজে আসেনা বরং ডিজেল, বীজ ও সারের উপর ভর্তুকি দিলে তা গরিব কৃষকের উপকারে আসে, ’’- ইকবাল হোসন।
২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এতে মোট দেশজ ও উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন বাজেটে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তাই আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতেই সর্বোচ্চ বরাদ্দ আসা উচিত। আলোচনার মন্তব্য করতে গিয়ে মুজিবুল হক মুনীর বলেন ‘‘ এবছর বাজেটের সুখবর হলো এই বাজেটে স্পষ্ট করে কৃষির স্বীকৃতি আছে এবং বাজেটের একটি অংশে কৃষির গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং এটি যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারে তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করা হয়েছে। এখন বাজেটের সঠিক ব্যবহার হলো গুরুত্বপূর্ণ’’
‘‘এবারের বাজেটে জেন্ডার উন্নয়নে ৫.৬ শতাংশ বরাদ্দ যা বিগত বছরের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি, কিছুটা দানের মতো করে বেড়েছে যা না বড়লেই নয় এমন। নারী উন্নয়নে বিশেষ করে নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, আয়বর্ধক কাজের সুযোগ, সামাজিক সুরক্ষায় অংশগ্রহন ও ক্ষমতায়নে বাজেট বাড়ানো উচিত এবং সরকারের যে ৪৪টি দপ্তর এই বাজেট ব্যবহারের দ্বায়িত্বে থাকে তাদেরকে জেন্ডার বিষয়ক ইতিবাচক ও বাজেট খরচে সচেতন হওয়া প্রয়োজন’’ ফেরদৌস আরা রুমী
বাজেটে জেন্ডার কতটুকু এগিয়েছে কোথায় আছি তার পুরো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি এবারের বাজেটে জেন্ডার উন্নয়নে ৫.৬ শতাংশ যা বিগত বছরের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি।জাতীয় বাজেটের মধ্যে নারীর জন্য বরাদ্দ, নারীর জন্য কতটুকু প্রতিফলন হচ্ছে, তা স্পষ্ট করা উচিত। বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ, আর সার্বিক বাজেটে নারী সুযোগগুলো কতটুকু পাচ্ছে এটিই আমাদের দেখার বিষয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নারীবান্ধব না এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নারীর বড় একটি অংশগ্রহণ আছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাত এখনও নারীবান্ধব না। থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নারী চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হবে।
বিভিন্ন স্থানে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার আছে, এগুলোর বাজেট বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন থাকে না। এগুলোতে নারী আরও হয়রানির শিকার হয়। দরিদ্রদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার কথা। এর জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এখানেও সাধারণ মানুষ এ সুবিধাটা পান না আর নারী তো পরের কথা। কৃষিক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন। একজন সাধারণ নারী কৃষক দেশের সরকার থেকে যা পাওনা, যা তার অধিকার, তা তারা পান না। আমাদের দেশের নারীরা শোষিত, বঞ্চিত, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবেও বঞ্চিত, সামাজিকভাবেও বঞ্চিত।
নারী উন্নয়নে বিশেষ করে নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, আয়বর্ধক কাজের সুযোগ, সামাজিক সুরক্ষায় অংশগ্রহন ও ক্ষমতায়নে বাজেট বাড়ানো উচিত। খোলা বাজারে ১০ টাকা কেজির চাল কিনতে হবে ১৫ টাকায় এর বড় একটি প্রভাব পড়বে নারীদের উপর।
‘‘দেশের ৭৪ শতাংশ মানুষ ক্ষুদ্র ঋণের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ করোনার সময়ে গ্রামীন অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি এই ক্ষুদ্র ঋণের কারণে। গবেষণায় দেখা গেছে ক্ষুদ্রঋণ জিডিপিতে ১৪% অবদান রাখছে। বাংলাদেশের এনজিওগুলো মাসে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা প্রোটফলিও। অথচ সরকারীভাবে এখনো ক্ষুদ্রঋণের তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই। এমনকি ক্ষুদ্রঋণের সাথে কর্মরতদের পেশার কোনো সংজ্ঞা নেই এবং রাষ্ট্রের কোনো দলিলে তার উল্লেখ নেই। সময় হয়েছে জাতীয় বাজেটে ক্ষুদ্রঋণের স্বীকৃতি প্রদান ও এনজিও পেশার সংজ্ঞা প্রদান করার। এজন্য এমএফআই ও পিকেএসএফ’র ভ‚মিকা ব্যাপক’’- তারেক সাইদ হারুন
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৫০ বছর। সে হিসেবে দেশের অর্থনীতি যতটা শক্ত-সামর্থ্য থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। তবে আশার কথা, গত দু’দশকে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিপ্লব হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দরিদ্র অর্থনীতির উত্তরণ ঘটিয়ে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এ উন্নয়নের পেছনে গার্মেন্ট ও বৈদেশিক রেমিটেন্সের পাশাপাশি যে খাতটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তা হচ্ছে এনজিও ও এমএফআইয়ের ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা।
দেশব্যাপী প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রায় ৩ কোটি দরিদ্র, হতদরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষকে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করেছে। এ ক্ষুদ্র ঋণপ্রাপ্ত পরিবারগুলো উৎপাদন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যেমন হাঁস-মুরগির ফার্ম, ডেইরি ফার্ম, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, সবজি বাগান, মাছ চাষ, দোকান ইত্যাদি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করে নিজেরাও যেমন স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে, তেমনই দেশজ উৎপাদনেও সহায়কশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ফলে যেসব পরিবার দরিদ্র ও হতদরিদ্র ছিল তাদের এক বিশাল অংশেরই দারিদ্র্য নিরসন হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি কেউ কেউ অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি ও মহাজনি ঋণগ্রস্থ হাত স্বাবলম্বী কর্মীর হাতে পরিণত হয়েছে।
এভাবেই দেশজ উৎপাদন ও দারিদ্র্যের হার কমে যাওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার ছেড়ে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তাই ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহন করা খুবই জরুরী।
বাজেট আলোচনাকালে মো: জহিরুল ইসলাম জানান, ‘‘পাওয়ার সিস্টেম লসে বছরে অপচয় ৩,৫০০ কোটি টাকা, বিদায়ী অর্থ বছরে অব্যবহূত বিদ্যুতের জন্য দেশে ক্যাপাসিটি চার্জ ১০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ’’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)২০২০ সালে একটি প্রতিবেদনে বলেছিল, বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪৩ শতাংশ ব্যবহারিত হয়, বাকি ৫৭ শতাংশ অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেয়া হয়। এর উপরে বড় বোঝা হতে পারে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানী।
ক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উপাদান করে অর্থনীতিতে বোঝা বাড়তে থাকবে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে তা যথাযথ সঞ্চালন করতে না পারলে ক্যাপসিটি চার্জ দিতে দিতে একসময় অর্থনৈতিক পতন ঘটাতে পারে। ৬ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা যায়। গত বছর সব মিলে অপচয় হয়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
গত অর্থ বছরে তুলনায় বিদায়ী অর্থ বছরে অব্যবহারিত বিদ্যুতের জন্য দেশে ক্যাপাসিটি চার্জ ১০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর অব্যবহারিত বিদ্যুতের ব্যয় আগামী অর্থ বছরে (২০২৩) ৩১ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় পৌঁছবে। আর ২০২৪ সালে রূপপুর প্লান্ট শুরু হলে এ চার্জ আরো বাড়বে বলে মনে করে সংস্থাটি। এ মেগা প্রকল্পের কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বিদ্যুতের দর বাড়তে থাকলে সকল পন্যের উপর তার প্রভাব পড়বে। এমনিতেই প্রতি বছর সিস্টেম লসে অপচয় হচ্ছে ৩,৫০০ কোটি টাকা।
‘‘২৫টি মন্ত্রনালয় জলবায়ু পরিবর্তন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির তুলনায় বাজেট কমেছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে শুধু জলবায়ু অভিযোজন এর জন্য ৪৯ হাজার কোটি টাকা ব্যায় করতে হবে। অভিযোজন কৌশলে খরচ হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা যা সাংঘর্ষিক। প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা জলবায়ুর জন্য ক্ষতি হয়। সরকারের জলবায়ু পরিকল্পনা অনুসারে ৮৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন’’ আবুল হাসান।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় সরকারের প্রতিশ্রæতিসমূহ, বিভিন্ন জাতীয় পরিকল্পনা ও জলবায়ু সংক্রান্ত নীতি কাঠামোতে অন্তভর্‚ক্ত করা হয়েছে এবং তারই আলোকে সরকার জাতীয় বাজেটে পৃথকভাবে জলবায়ু বরাদ্দ প্রদান করছে। প্রাসঙ্গিক নীতি, পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে অভিযোজন এবং প্রশমন কর্মসূচিতে সরকারের এই অর্থ বরাদ্দকরন উদ্যোগ প্রসংশনীয় হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্তমানের বরাদ্দ ঝুঁকি মোকাবেলায় যথেষ্ট নয় এবং ভবিষ্যতে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে তা মোকাবেলায় অপ্রতুল, তাদের মতে শুধু নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহনই নয় এক্ষেত্রে যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজন অথচ সরকার প্রতি বছর গতানুগতিক হারে বাজেট বরাদ্দ প্রদান করছে ।
প্রতিবছর ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগে পৃথকভাবে জলবায়ু সম্পৃক্ত বরাদ্দ প্রদানের দাবি করছে সরকার। সরকারের জলবায়ু অর্থায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উক্ত মন্ত্রনালয়গুলোর মোট জলবায়ু সম্পৃক্ত বরাদ্দ ছিলো ৩০৫৩১.৯৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮.০৭ শতাংশ এবং জিডিপি’র ০.৬৯। বিগত ৫ বছরের এই জলবায়ু সম্পৃক্ত বরাদ্দ পর্যালোচনায় আমরা ক্রমবর্ধমান হারে বরাদ্দ হ্রাসের চিত্রই দেখতে পাই এবং মোট জাতীয় বাজেটের তুলনায় এই হার খুবই নগন্য, ২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৭.৩৬ শতাংশ ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিলো ৭.৪৮ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৭.৭৪ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৮.৮২ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এই বরাদ্দের হার ছিলো ৮.১ শতাংশ্। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান, অথচ চাহিদা ও প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী জলবায়ু সম্পৃক্ত বরাদ্দ বাড়ছেনা বরং ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকার কৌশলপত্র প্রনয়ণ করেছেন [বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলগত্র ও কর্মপরিকল্পনা ২০০৯] কিন্তু এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নে বর্ধিত বরাদ্দের বিষয়টি এ পর্যন্ত নিশ্চিত করেন নাই। দ্বীতিয়ত: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কোন কোন খাত অগ্রাধিকার দেওয় উচিৎ তাও পরিকল্পনায় অষ্পষ্ট রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যে কারনে জাতীয় বাজেটেও গতানুগতিক অর্থ [জিডিপি’র ১% এর কাছাকাছি] বরাদ্দই দেওয়া হচ্ছে। অথচ কৌশল পত্রের চাহিদা অনুসারে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে জিডিপির কমপক্ষে ০২ শতাংশ বা ৮৮২৫৬ কোটি টাকা জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় রাশিদা বেগম জানান চলতি অর্থবছরে সংশোধিত মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেখানে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসেবে নতুন অর্থবছরে টাকার অংকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৪ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।
নতুন অর্থবছরের ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণের জন্য। অর্থাৎ, স্বাস্থ্য সেবার জন্য থাকছে ২৯ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। এর ১৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা খরচ হবে পরিচালন বাবদ, উন্নয়ন পাবে ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা।প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটেও এই হার একই ছিল। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেখানে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য মোট ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত মোট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এই বাজেট যাতে সঠিকভাবে খরচ হয় সে বিষয় সুশাসন প্রত্যাশা করেন।
জাতীয় বাজেট ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয় আলোচনাকালে মুজিবুল হক মুনীর বলেন ‘‘ জাতীয় বাজেটে প্রশংসনীয় বিষয় হলো, কৃষিখাতকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাজেটের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সরকার চেষ্টা করেছে এই বাজেটটি গরিব বান্ধব করার জন্য তারমানে আমাদের দেশে প্রচুর গরিব মানুষ আছে এটা স্বীকৃত। অর্থ পাচার কারীদের মাত্র ৭% কর দিয়ে টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে যা সুশাসনের সাথে সাংঘর্ষিক। বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যবহার হবে প্রশাসনিক কাজে যা উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। একটি প্রশ্ন থেকে যায় সাধারণ জনগন যারা বৈধভাবে টাকা আয় করে দেশে রাখছেন তারা কর দিবেন ১৫% আর টাকা পাচারকারী ৭% কর দিয়ে টাকা বৈধ করার সুযোগ পাবে। এটি টাকা পাচারের জন্য উৎসাহিত করতে পারে। বিশে^ আমাদের দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হতে পারে। সরকার ঘাটতি বাজেট পূরণ করতে চায় ব্যাংক ঋণ থেকে কিন্তু ব্যাংকগুলো কি প্রস্তুত এ অর্থ জোগান দিতে?। হিসেব করলে সংখ্যাগত দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় গত ৫০ বছরে বাজেট বেড়েছে ৭৫০ গুন কিন্তু যখন বাজার মূল্য বিশ্লেষণ করতে যাই তখন দেখি এর পরিমান মাত্র ১০ গুন তার মানে বাজেট একটি অংকের খেলা মাত্র। সরকার ইচ্ছা করলে সঞ্চয়পত্রর বিনিময় বাজেট ঘাটতি মিটাতে পারে। আর পাবলিকের উপর করের বোঝা চাপিয়ে আয় বাড়ানোর আগে সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ করের টাকা কোথায় কিভাবে খরচ হবে সেটা জেনেই কর দেয়া উচিত। উৎপাদিত সম্পদের সুষম বণ্টন এবং মানব সমাজের কল্যাণের জন্য অর্থনৈতিক নীতি সংক্রন্ত চিন্তাই হলো রাজনৈতিক অর্থনীতি।
প্রস্তাবিত বাজেট ২০২২-২৩ সম্পর্কিত আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষনে অনুমান করা যায় কারণে টাকার মান কমে যেতে পারে সেক্ষেত্রে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভার পড়বে। মেগা প্রকল্পগুলো সচেতনতার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রশাসনিক ব্যয়ের সাথে উন্নয়নমূলক ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা থাকা উচিত। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ও পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনার সুযোগ দিলে অন্যায়কে উৎসাহিত করা হয়। ২ লাখ ৪১ হাজার টাকার ঘাটতি বাজেট যদি ঋণ করে পূরণ করতে হয়, তাহলে দিন দিন ঋণের বোঝা বাড়তে থাকবে। দেশের উন্নয়নে গবেষণার কাজে আরো বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। জলবায়ু-শিক্ষা-কৃষি খাতগুলো গুরুত্বপূর্ন এগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনর্থক খরচ কমাতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানীর যৌক্তিকতা কতটুকো তা বিবেচনায় নেয়া উচিত। সর্বোপরি জনগনের করের টাকা যাতে স¦চ্ছতার সাথে খরচ হয়, দপ্তরগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত হয় ও জাতীয়ভাবে ব্যয় কমানো যায় সেদিকে মনোযোগ দেয়ার জন্য তাগিদ দেন।
লিখেছেন মো: জহিরুল ইসলাম,
আরো পড়ুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন
ভিডিও দেখুন https://www.youtube.com/watch?v=9LdISYeMZ7o