এসএসসি’র ২০ লাখ উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীর ৬ দাবি

Spread the love

করোনা ম’হামারির কারণে চলতি বছরের মার্চ মাস থে’কে দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ র’য়েছে। এ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এর ম’ধ্যে আগামী বছর (২০২১ সা’ল) এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে’ জানিয়ে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থী’দের পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরা’মর্শ দিয়েছেন।

তবে পরীক্ষা কীভাবে হবে, সিলে’বাস কমবে কিনা, সময় বাড়ানো হবে কিনা এ’সব বিষয়ে কোনো দিক নির্দে’শনা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জা’তীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এন’সিটিবি) এখনও ‘পরিকল্পনা’ তৈ’রির প্রাথমিক পর্যায়ে। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও স’মমানের প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এক ধরনের উ’দ্বেগে রয়েছে।

জানা গেছে, ২০২১ সা’লে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা”র্থী রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এসব শি’ক্ষার্থী বছরের প্রায় পুরো’টাই ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে রয়েছে। নিয়’ম অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসএস’সি ও সমমানের পরীক্ষা অনু’ষ্ঠিত হওয়ার কথা। কি’ন্তু প্রায় ৯ মাস ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূ’রে থাকার পর মাত্র ৩ মা’সে পরীক্ষার প্রস্তুতির ঘোষণায় ব্যাপ’কভাবে মানসিক চাপে ২০ লা’খ কিশোর-কিশোরী।’

বিষয়টি নি’য়ে কথা বললে, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাস’পাতালের (সিএমএইচ) মনো’রোগ বিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জে’নারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইস’লাম সময় নিউজকে বলেন, ‘এখা’নে দুই ধরনের ইস্যু আছে। একদিকে প’রীক্ষা সময় মতো না হলে সেশনজট হবে। অন্যদিকে অল্প স’ময় দিয়ে পরীক্ষা নিলে শিক্ষা’র্থীদের ওপর বিরাট বোঝা বা মা’নসিক চাপ দেয়া হবে। মানসিক চাপে প’ড়লে এর কিছু ফলা’ফল হতে পারে। যেমন, পারফ’র্মেন্স খারাপ হতে পারে, মোটিভেশন কমে যাবে, ড্রপআ’উট হতে পারে। অনেকে ভয়ে এবার পরী’ক্ষা নাও দিতে পারে। এ’সব মানসিক চাপের ফলে অনেকে ড্রা’গ নেয়াও শুরু করে। এজ’ন্য সব বিষয় ভেবে সি’দ্ধান্ত নিতে হবে। স’বচেয়ে ভালো হয় প’ড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দি’য়ে পরীক্ষা নেওয়া।’

ক্লাস-পরী’ক্ষা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরাও চায় ক্ষ’তি পুশিয়ে পরীক্ষায় অংশ নি’তে। এজন্য সামাজিক যোগা’যোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘এসএসসি ব্যা’চ ২০২১’, ‘এসএসসি’২১ ব্যাচ এর ক্ষ’তিপূরণ চাই’, ‘করোনার মধ্যে এস’এসসি নয়’সহ বেশ কিছু না’মে গ্রুপ খুলেছে তারা। এস’ব গ্রুপে প্রায় ৭ লাখ স’দস্য রয়েছে।

গ্রুপ’গুলোর এডমিন ও সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে পক্ষ থেকে যো’গাযোগ করা হলে তারা জানায়, তা’রা পরীক্ষা দিতে চান। কি’ন্তু তিন মাসের প্রস্তু’তিতে কোনোভাবেই প’রীক্ষা দেওয়া সম্ভব না। এজ’ন্য তারা ছয়টি দাবি উত্থাপন ক’রেছে।

দাবিগুলোর ম’ধ্যে রয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন না আসা’ পর্যন্ত সশরীরে ক্লাস-পরী’ক্ষা নেওয়া যাবে না, প’ক্ষা নিতে হলে সিলেবাস শেষ করার মতো যৌক্তিক সময় দিয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা, অল্প সময়ে পরীক্ষা নিলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে অন্তত তিন মাস আগে ঘোষণা করা, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বা’স্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অ’ফিসিয়াল কোনো ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলে সব র’কম ফি নেয়া বন্ধ রাখা এবং পরীক্ষা নে’ওয়া সম্ভব না হলে পিএসসি ও জে’এসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অটোপাস দে’ওয়া।

বীরগঞ্জ পাইলট ‘সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা’র্থী স ম র আল নাহিয়ান হৃদম বলেন, ‘এক’জন মানুষ কীভাবে ৮ মাসের সিলেবাস ২ মাসে শেষ ক’রবে? মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কা’ছে সবার পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি,এই’চএসসি’২০ ব্যাচ যেখানে ৭ মাস সময় বেশি পেয়েও অ’টোপাস পেল সেখানে আম’রা ৮ সময় কম পেয়েও কীভাবে প’রীক্ষা দেই।’

এসব দা’বির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের স’ঙ্গে কথা বললে পাংশা পাইলট গার্লস হাই স্কু’লের শিক্ষার্থী পুস্পিতা দিশা বলে,‘আ’মাদের এমন সময় দেওয়া দ’রকার যেন পরীক্ষা নিয়ে হিমশিম খেতে না হয়। আ’বার আমাদের যেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফে’লা না হয়।’

শাহীন স্কু’লের মাওনা শাখার শিক্ষার্থী নুর হা’সনাত প্রান্ত বলে, ‘করো’নার কারণে আমাদের ৮ মা’স ক্ষতি হয়েছে। য’দি পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহ’লে আমাদের সিলেবাস কমা’তে হবে, সময় বাড়াতে হ’বে এবং সহজ করে প’রীক্ষা নিতে হবে।’

ধান’মন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শি’ক্ষার্থী তাহমিদ ঈবনে মো’ফাজ্জল বলে, ‘করোনার ম’ধ্যে আমরা আমাদের লেখাপড়া স্বাভাবিকভাবে কর’তে পারিনি। এজন্য পরীক্ষা পে’ছানো হোক।’

নারা’য়ণগঞ্জের গোলাকান্দাইল মুজিবর রহমান ভূঁই’য়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শি’ক্ষার্থী মারুফ তাসনিম বলে, ‘আ’মাদের এসএসসি পরীক্ষা যদি ৮ মা’স পেছানো হয় তাহলে সে’শন জটের সৃষ্টি হবে। এতে আমা’দের জীবন থেকে এক বছর ন’ষ্ট হবে। তাই আমাদেরকে অ’টোপাস দেওয়া হোক।’

বনানী বিদ্যা’নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলে’জের শিক্ষার্থী উৎস বকসী ব’লে, ‘আমরা কোনো’ভাবেই করোনা চলা’কালীন এবং করোনার ভ্যা’কসিন না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা দি’তে এবং স্কুলে যেতে রাজি নই। আ’মাদের ৮ মাসের ক্ষতিপূরণ দে’ওয়া হলে আমরা এসএসসি পরী’ক্ষা দিবো।

ময়ম’নসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র প্রহর আশ’ফাক বলে, ‘৮ মাসের পড়া ২ মা’সে শেষ করা অসম্ভব। আর সামনে আ’সছে করোনার ২য় ঢেউ। ফ’লে আমাদের জীবন হু’মকিতে রয়েছে। মানবিক বি’বেচনায় ২০২১ সালের এসএসসি প’রীক্ষার্থীদেরও অটোপাস দেও’য়া হোক।’

ফরিদপুর জিলা স্কুলের শি’ক্ষার্থী পাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘মান’নীয় শিক্ষামন্ত্রী কিছুদিন আ’গে অস্পষ্টভাবে শিক্ষাপ্রতি’ষ্ঠান খোলা এবং এসএসসি ২০২১ সম’য়মতো নেওয়ার কথা ব’লেছেন। ফলে অনেক শিক্ষার্থী জীব’নের ঝুঁকি নিয়ে বাইরে প্রাই’ভেট পড়তে যাচ্ছে। এতে করোনা সংক্র’মণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই শি’গগিরই এসএসসি ২০২১ নিয়ে শি’ক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান স্প’ষ্ট করা উচিৎ।’

শিক্ষার্থীদের এ’মন উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে ম’তিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলে’জের অধ্যক্ষ ডা. শাহানারা বেগম সময় নিউজকে বলে’ন, ‘এসএসসি’র এখনও ফর্ম ফি’লাপ হয়নি। এর পরে টেস্ট পরী’ক্ষাসহ বেশ কিছু প্রক্রিয়া আছে। মা’স খানেক আগে রুটি’ন দিতে হয়। সময় অল্প। আ’মি মনে করি, সরকার শি’ক্ষার্থীদের মানসিক চাপের বি’ষয়টিও মাথায় রেখে সি’দ্ধান্ত নেবে। তবে এ’খন নিশ্চিত করে কিছু বলা যা’চ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি বুঝে সরকার সি’দ্ধান্ত নেবে।’

অল্প সময় দি’য়ে পরীক্ষা ঘোষণা হলে শিক্ষার্থীদের ও’পর অতিরিক্ত চাপ পড়বে কি’না জানতে চাইলে ঢাকা বো’র্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক  বলেন, ‘পরী’ক্ষা সব সময় একটু চাপের বিষ’য়। তবে এখনও কোনো সি’দ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রাখা হবে। তারা নবম ও দশম শ্রেণিতে ক’তটা ক্লাস করতে পেরেছে, সং’সদ টিভি বা অনলাইনে কতদূর এগিয়েছে এসব বিবেচনা করে’ই সিদ্ধান্ত হবে।’

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্র’ণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকল বিষয় বিবে’চনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। শি’ক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কি’ছু নেই।’

এদিকে, শিক্ষা’র্থীদের দাবি নিয়ে সময় নিউ’জের পক্ষ থেকে একটি অন’লাইন জরিপ করা হয়। গত ৭ ন’ভেম্বর থেকে ৯ নভেম্বর এ জরিপে ৫০ হাজা’র শিক্ষার্থী মতামত দেন। জ’রিপে প্র’শ্ন ছিল, ‘করোনা পরি’স্থিতির কারণে এসএ’সসি’২১ ব্যাচের শিক্ষা’র্থীরা সামা’জিকমাধ্যমে বেশ কি’ছু দাবি উত্থাপন ক’রেছেন। এর মধ্যে পরীক্ষা পে’ছানো, সিলেবাস কমানো ও অটো’পাস দেওয়া; এ ‘তিনটি দাবি থেকে আপ’নি কোন দাবিটি সম’র্থন করেন?’

উত্তরে অ’টোপাস ঘোষণার পক্ষে মতা’মত দেয় ৪৪ হাজার ২২১ জ’ন (৮৭ দশমিক ১২ শ’তাংশ), সিলেবাস কমা’নোর পক্ষে ৩ হাজার ১৫৭ জ’ন (৬ দশমিক ২২ শতাংশ) ও পরী’ক্ষা পেছানোর প’ক্ষে ৩ হাজার ৩৩৬ জ’ন (৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ)।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »