যে কারণে ইতিহাসের রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে আলু
অক্টোবর ১৭ ২০২০, ০১:৩৩

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নি’র্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দা’মে কোল্ড স্টোরেজে আলু বি’ক্রি হচ্ছে। শুধু কোল্ড স্টোরেজ প’র্যায়েই নয়, বেধে দেয়া দামের কোনো তো’য়াক্কা না করেই বিক্রি হচ্ছে খুচরা বা’জারেও। আর এই নি’য়ন্ত্রণহীন বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে এককেজি আ’লুর দাম পড়ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যা বে’ধে দেয়া দামের চেয়ে প্রায় দ্বি’গুণ।
কৃ’ষক পর্যায়ে উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ৩২ পয়সা ধরে গত সপ্তাহে আ’ড়ৎ পর্যায়ে প্রতিকেজি আ’লুর দাম ২৫ টাকা, হিমাগার পর্যায়ে ২৩ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
কি’ন্তু হিমাগার পর্যায়ে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। অর্থাৎ বেধে দেয়া দা’মের চেয়ে প্রায় ২০ টাকা বেশি দরে। আর খুচরা বাজারে দেখা গেছে এ’ককেজি আলুর দাম ঠেকেছে ৫০ টাকায়। বাং’লাদেশের বাজারে আলুর দাম বে’ড়েছে হু হু করে এবং দাম বা’ড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি সং’কটের মধ্যে আছেন স্বল্প আয়ের মা’নুষেরা।
জুলাই মাসে যে’খানে কেজি প্রতি ৩০ টাকায় আ’লু বিক্রি হয়েছিল, সেখানে বাজার ভে’দে আলু এখন বিক্রি হচ্ছে কে’জি প্রতি ৪৫ থেকে ৫৫ টা’কায়। এর আগে কখনও আলুর দাম এ’তোটা বাড়তে দেখা যা’য়নি।
কৃ’ষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এই দাম বাড়ার পেছনে মূলত চার’টি কারণ তুলে ধরেছেন। প্রথমত, উ’ত্তরাঞ্চলে টানা চার মাস প্র’লম্বিত বন্যার কারণে আলুর পা’শাপাশি সবজির আবাদ কম হ’য়েছে। সেটার চাপ প’ড়েছে আলুর ওপর।
দ্বি’তীয়ত হিমাগারে আলুর মজুদ গত বছরের চা’ইতে কমে গেছে। হিমাগার মালিক স’মিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুদ ছিল ৫৫ লা’খ টন। এ বছর মজুদ হয়েছে ৪৫ লাখ টন। অ’র্থাৎ এবার চাহিদার তুলনায় মজুদ ১০ লা’খ টন কম।
এর কা’রণ হিসেবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছর আ’লু বাম্পার ফলনের কারণে কৃ’ষকরা ভালো দাম পায়নি, এ কারণে এ’বারে তারা আলুর আবাদ ক’ম করেছে।
তৃতীয়ত ক’রোনাভাইরাসের সময় বিভিন্ন ত্রা’ণ কাজে চাল, ডালের পা’শাপাশি বিপুল পরিমাণ আলু বিতরণ হয়েছে, এ’ছাড়া বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো রো’হিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে বাং’লাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আলু কি’নেছে।
সে’টার প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে জা’নিয়েছেন তিনি। চ’তুর্থত, সরকারের ২০ শতাংশ ভর্তুকির কারণে গত ব’ছরের তুলনায় চলতি ব’ছর প্রায় ৪০ গুণ বেশি আলু র’প্তানি হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গত ব’ছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মা’সে রপ্তানি হয়েছিল ৩ লাখ ৩৬ হা’জার ডলার মূল্যের আলু। আর চ’লতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে র’প্তানি হয়েছে ১ কোটি ৪৮ হাজার ডলার মূ’ল্যের আলু। এ কারণে বিপুল প’রিমাণ আলু দেশের বাইরে চলে গেছে।
এদিকে, বি’দ্যুতের দাম কিছুটা বাড়লেও হি’মাগারের মালিকরা আলু সংরক্ষণের খরচ আগের মতোই রা’খার কথা জানিয়েছে। এরপরও বা’জারে যে দাম রাখা হচ্ছে সেটা অ’স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন কৃ’ষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
এজন্য তিনি বাজার ম’নিটরিং আরও জোরদার করার আ’শ্বাস দিয়েছেন। তবে বর্তমান বা’স্তবতা বিবেচনা করে ব্য’বসায়ীদেরও নৈতিক হতে আহ্বান জানান ম’ন্ত্রী।
তিনি বলেন, “চা’হিদার তুলনায় যোগান কম হওয়ায় বাজারে দাম বে’ড়েছে। ২৫-৩০ টাকা বিক্রি করলেও ব্য’বসায়ীদের লাভ হবে। তা’রপরও তারা কেন এতো দামে বিক্রি করছে? ব্য’বসায়ীরা যদি মুনাফার স্বার্থ থেকে সরে দাঁ’ড়ায়, তাতে মানুষেরই উপকার হ’বে।”
এবার আলুর মজুদ ১০ লাখ ট’ন কম বলে জানা গেছে। দাম প্র’সঙ্গে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলেন, ব’র্তমান বাস্তবতায় সরকার আলুর যে দাম নি’র্ধারণ করে দিয়েছে তা অ’যৌক্তিক।
হি’মাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, “এ’খন আলুর কেজিতে খরচ আছে ২৩ টাকা। কোল্ড স্টো’রেজের ভাড়া, লোডিং আনলোডিংয়ের খরচ, ব্যাংক ই’ন্টারেস্ট, বস্তার দাম, তার মধ্যে এই সিজনে আলু রা’ইখা দিলে ওজন কইমা যায়। সব মি’লিয়ে কস্টিং তো কম না। স’রকার যে দাম দিসে এই দামে কিভাবে বি’ক্রি করবে?”
তবে ব্য’বসায়ীদের এমন দাবি মানতে না’রাজ বিশেষজ্ঞরা। এই দাম বা’ড়ার পেছনে বাজারে সুশাসনের অ’ভাবকেই সবচেয়ে বড় কারণ বলে তারা ম’নে করছেন।
মজু’তদারদের কারসাজির কারণে পা’ইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার যাওয়ার প’থেই দাম বাড়ছে বলেও জানান সা’বেক কৃষি তথ্য সেবার প’রিচালক নজরুল ইসলাম।
তার মতে, বাজারে প’র্যাপ্ত আলু থাকা সত্ত্বেও অ’তিরিক্ত মুনাফার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃ’ত্রিম সংকট তৈরি করে রে’খেছে। এমন অ’বস্থায় কৃষক থেকে ভো’ক্তা পর্যন্ত বাজার ম’নিটরিং এর পরামর্শ দেন তি’নি।
সে’ইসঙ্গে আলু উৎপাদনে সরকারের সু’নির্দিষ্ট কর্মপন্থা প্রণয়নের ওপরেও তিনি জো’র দেন। এদিকে সব ধ’রনের শাকসবজির পাশাপাশি যদি আ’লুর দামও বেড়ে যেতে থাকে, তা’হলে নিম্ন আয়ের মা’নুষেরা পুষ্টিগত সমস্যায় প’ড়বেন বলেও আশঙ্কা করা হ’চ্ছে।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা