আজকের ঝলক নিউজ

সভা- সেমিনারে ন্যূনতম সৌজন্য

Spread the love

সভা- সেমিনারে ন্যূনতম সৌজন্য: সংস্থাকে যেভাবে তুলে ধরবেন

রেজাউল করিম চৌধুরী

নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন।

নজিও কর্মী হিসেবে আমরা এখন ঢাকা ও কক্সবাজারে আইএনজিও এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার বিশাল সুযোগ পাচ্ছি। আমি যেহেতু স্থানীয়করণ বিকাশে কাজ করি, সংশ্লিষ্টদের কাছে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরার জন্য এসব অনুষ্ঠানকে কাজে লাগানোর সুযোগ গ্রহণের জন্য আমি স্থানীয় এনজিও নেতৃবৃন্দকে অনুপ্রাণিত করি। আপনার সংস্থার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অংশীজন যদি একটি ভালো ধারণা না পায়, তাহলে অর্থায়ন নিরাপদ বা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। মনে রাখবেন, স্থানীয়করণ একটি নৈতিক চুক্তি, এই চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অংশীজন কিন্তু বাধ্য নয়। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আমি এই বিষয়ে পরামর্শ দিতে চাই:
১. আমি স্থানীয পর্যায়ে বা কক্সবাজারে সভা- সেমিনারে বাংলা ভাষা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করছি, কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, বিদেশিদের জন্য এটাকে বাধ্যতামূলক করা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।তাই, স্থানীয় এনজিও নেতৃবৃন্দকে ইংরেজিতে দক্ষতা উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে, এটি আমাদেরকে বিদেশীদের সঙ্গে সরাসরি কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। ইংরেজিতে আমরা দক্ষ হলে আমরা যেমন আমাদের কথা বিদেশীদের কাছে ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারবো, তাঁদের কথাও আমরা বুঝতে পারবো।
২. অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন। সভার আলোচ্যসূচি বা বা সভা বিষয়ক কাগজপত্র সংগ্রহ করে সে মোতাবেক নিজের প্রস্তুতি নিন।অনুষ্ঠানে আপনি কী বলতে চান, কী জানতে চান সেই বিষয়ে আগেই একটি নোট তৈরি করুন। অনুষ্ঠান চলাকালে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা উচিৎ নয়, শুধুমাত্র প্রয়োজনই হলেই কথা বলুন।
৩. অনুষ্ঠানে অংশগ্রণকারী বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে অনুষ্ঠান শুরুর অন্তত ১০ মিনিট আগেই অনুষ্ঠালস্থলে পৌঁছান। আপনার সঙ্গে আপনার বিজনেস বা ভিজিটিং কার্ড নিন এবং সেগুলো অন্যদের সঙ্গে বিনিময় করুন। আপনার ভিজিটিং কার্ডে আপনার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য থাকা উচিত, সম্ভব হলে এতে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঠিকানাগুলোও দিতে পারেন। ভিজিটিং কার্ড খুব রঙ্গিন করা উচিৎ নয়।
৪. অনুষ্ঠানে কথা বলতে চাইলে, বিনীতভাবে হাত তুলে বা নেড়ে মডারেটর বা সঞ্চালকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন। আপনাকে কথা বলতে আহ্বান জানানোর আগেই অনুগ্রহ করে কথা বলার চেষ্টা করবেন না।
৫. মিটিংয়ে কথা বলার আগেই কী বলতে চান সে বিষয়ে একটা প্রস্তুতি নিয়ে নিন এবং শ্রোতাদের মেজাজ-আগ্রহ অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। খুব বেশি প্রয়োজন হলেই এবং অংশগ্রহণকারীদের বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ আছে মনে হলেই আপনার বিষয়গুলো তুলে ধরুন। আপনি যে বিষয়ে বলতে চান, সে বিষয়গুলো যদি আগে কেউ বলে ফেলে তাহলে সেগুলো বাদ দিন। অংশগ্রহণকারী হিসেবে আপনার বক্তৃতা এক মিনিটের বেশি হওয়া উচিৎ নয়। কথা বলার সময় কঠিন বা টেকনিক্যাল শব্দ বা বাক্য পরিহার করুন, আপনার বক্তব্য সহজ-সাধারণ ভাষায় সংক্ষেপে তুলে ধরুন।
৬. আপনার হয়ত খুব গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু একবারের বেশি কথা বলা উচিৎ নয়। বার বার কথা বললে আপনি একজন বিরক্তিকর ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে পারেন। এবং এর ফলে হয়ত ভবিষ্যতে মিটিংয়ে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো নাও হতে পারে।
৭. সর্বদা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং অন্যের মর্যাদা বজায় রাখুন। ইতিবাচক পদ্ধতিতেও সফলতার সাথে নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরার কৌশল শিখুন, আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মিটিং ছাড়াও আপনার কথাগুলো বলার অন্য অনেক উপায় আছে।
৮. মোবাইল ফোন এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, কিন্তু মিটিংয়ে এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকুন। এই পরামর্শগুলি অনুসরণ করুন: (ক) মিটিং চলাকালে মেবাইল স্ক্রিন স্ক্রোল করবেন না, (খ) ফোনটি বন্ধ বা নীরব (সাইলেন্ট) রাখুন, (গ) মডারেটর বা সঞ্চালক অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত ছবি তুলবেন না, (ঘ) মিটিং চলাকালে মোবাইল ফোনে অনুগ্রহ করে কথা বলবেন না, (ঙ) ফোন এমনভাবে ধরবেন না, যাতে অন্যরা মনে করে আপনি রেকর্ড করছেন।
মনে রাখবেন, আপনার ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে বিকাশ করুন যাতে আপনি বরফের এলাকার মানুষের কাছেও রেফ্রিজারেটর বিক্রি করতে পারেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।
উপকূলের বন্ধু কোস্ট ফাউন্ডেশন
https://coastbd.net/
Exit mobile version