দেশের উন্নয়নে এনজিওদের অবদান

Spread the love

দেশের উন্নয়নে এনজিওদের অবদান

আজকের ঝলক এনজিও ডেস্ক :

নিজস্ব প্রতিনিধি ।

বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে । বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল । এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ একটি মাইল ফলক ।  শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও নারীর অগ্রযাত্রায় রয়েছে চমৎকার সাফল্য। এই সাফল্য সরকারের একার পক্ষে অর্জন করাকি সম্ভব ? কোনো একা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কি সম্ভব ? এক বাক্যে উত্তর হলো না । এই দেশের উন্নয়নে অন্যম অবদান হলো এনজিও সেক্টরের । অনেকেই ধারণা করেন এনজিও মানেই ক্ষুত্র ঋণ ! আদৌ কি তাই ? দেশে লক্ষাধিক এনজিও আছে যারা কোনো প্রকার ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করেনা । আচরণগত উন্নয়নে কাজ করে ।

আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় হলো আমাদের ক্ষুদ্র এই দেশটিতে আছে বিশ্বের ১ নম্বর এনজিও ব্র্যাক ।

এবার আসুন দেশের উন্নয়নে ছোট্র করে কিছু আলোচনা করি ।

১. কাঁচা টয়লেট থেকে পাকা টয়লেট :

খোলা টয়লেট রাখবোনা অন্যের মল খাবোনাসহ বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে এনজিওগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোলা টয়লেটের পরিবর্তে পাকা টয়লেট ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন । গরিব অসহায়দের দিয়েছেন ফ্রি টয়লেট, অংশিক ফ্রি টয়লেট আবার কাউকে দিয়েছেন টাকার বিনিময়। এখন প্রত্যান্ত অঞ্চলেও খোলা টয়লেট দেখা যায়না যার ফলাফল এখন কোনো রোগ মহামারী আকার ধারণ করছেনা ।

২. টীকা নেয়ার জন্য ক্যাম্পেই :

টীকা নেয়ার জন্য গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী পুরুষ ও শিশুদের সচেতন করে টীকা কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন এনজিও কর্মীরা । এখন আর সচেতন করতে হচ্ছেনা টীকা ভিতি কেটে গেলে এখন প্রায় সকল অভিভাবক সন্তানের টীকা নিশ্চিত করছেন ।

৩. খাবার স্যালাইন তৈরী ও ব্যবহার : 

একমুষ্টি গুরু ও এক চিমটি লবন  এই শ্লোগান নিয়ে এনজিও কর্মীরা প্রতিটি ঘরে ঘরে স্যালাইন বানানোর পদ্ধতি শিখিয়েছেন এবং ব্যবহার নিয়ম পৌঁছে দিয়েছেন তাদের কাছে । এখন আর ডায়রিয়া মহামারি আকার ধারণ করছেনা ।

৪. গর্ভবতী ও কিশোরী মেয়েদের সুরক্ষা :

আজকের কিশোরী আগামী দিনের মা । কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য  বিষয় সচেতনা ও চর্চা করার জন্য উপকরণ বিতরণ করেছেন ও টীকার জন্য আগ্রহী করেছ এনজিওরাই । গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন যত্ন, প্রসবকালীন যত্ন ও প্রসব পরবর্তী যত্ন বিষয় দক্ষতা উন্নয়নসহ ধাত্রী প্রশিক্ষণ দিয়েছে  এনজিওরা ।

যক্ষা হলে রক্ষা নেইিএই কথাটির ভিত্তি নেই । এই শ্লোগানটি বেশ পরিচিত ব্র্যাক দেশ থেকে যক্ষা ভীতি দূর করতে অবদান রেখেন যা এক বাক্যে ‍স্বীকার করবেন যে কেউ । এখনো ব্র্যাক সারা দেশে এই কাজটি করেছে যাচ্ছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথ ।

৫. এসিড নির্মুল :

১৯ দশকের কোনো এক সময় এসিড সন্ত্রাস বেশ আলোচিত ছিলো দেশের বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় এসিডের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন ও এসিডে সন্ত্রাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, আইনগত সহযোগিতা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থায় সহযোগিতা করেছে এনজিওরাই ।

৬. শিক্ষা : 

শিশু শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা , নারী শিক্ষা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এনজিরা নিরলসভাবে কাজ করেছে। দেশের নিরক্ষরতা দূর করতে যেসকল যায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে শিশুদের ও বয়স্কদের জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেেএনজিওরা ।

৭. প্রতিবন্ধী উন্নয়ন

প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সম্মান দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মূলশ্রতধারায় রাখতে এনজিওরা কাজ করেছে । তাদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও পূনর্বাসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এনজিরা ।

৮. মৎস্য, কৃষি ও প্রাণি সম্পদ

বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সচেতন শিক্ষার মাধ্যমে ও উপকরণ সরবরাহ করে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদের এনজিওদের ভূমিকা ব্যপক ।

৯. আচরণ পরিবর্তন : 

মানুষের চিন্তা, চেতনা আচরণগত পরিবর্তান করার জন্য কাজ করেছে বিশেষ করে নারী পুরুষের বৈষম্যরোধে কাজ করেছে যার ফলে জেন্ডার সমতায়ন হচ্ছে । প্রতিষ্ঠানে আজকে জেন্ডার ফোকাল, যৌণ নিপিড়ন কমিটিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কমিটি গঠন এনজিওদের চর্চার ফসল ।

১০. সুশাসন ও ন্যায়বিচার

নাগরিকের অধিকার ও স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহীতা চর্চার মাধ্যমে গ্রামীন পযায়ে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের যোগসূত্র স্থাপন করেছে   এনজিওরা । যদিও এখনো এই সেক্টরে কাজ করার সুযোগ আছে ।

১১. জীবনদক্ষতা 

এনজিওরা জীবন দক্ষতার উপাদানগুলো নিয়ে সমজের ছাত্র-যুবক-কিশোর-কিশোরীদের কাজ করেছে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহন, সমস্যা সমাধান, সৃজনশীল চিন্তা, সহানুভূতি, সমানুভূতি, আত্ন সচেতনতা, প্রজনন স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয় ।

১২. নারীর অগ্রযাত্রায় 

নেতিবাচতভাবে  একটি কথার পচলন হয়েছে যে নারীকে ঘর থেকে বের করেছে এনজিওরা । ঠিক তাই যে নারীরা নিজেদের ঘরে বন্দী ছিলো সেখান থেকে মৃুক্তির পথ দেখিয়েছেন  এনজিওরা । দেশে প্রথম সাইকেল, মোটর সাইকেল, কাজ করা শিখেয়েছেন এনজিওরা যার ফলে এখন নারীরা দেশের সবক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে । এখন নারীরা তাদের অধিকার বিষয় বেশ সচেতন  ।

১৩. ক্ষুদ্র ঋণ

বয়লার মুরগী না থাকলে মানুষ ডিম ও মুরগীর মাংশ নিয়ে কি করতো এই ছোট্র ভাবনাটি ভাবলে বেঝা যাবে এমন  একটি দেশ গরিব অসহায় মানুষের টাকা প্রাপ্তি কি আসলেই সহজ । ইচ্ছা করলেই কি যে কোনো মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারে ? ইচ্ছা করলেই কে গরিব মানুষ যে কোনো দোকান থেকে হাজার হাজার টাকা বাকি করতে পারে ?  কিন্তু এনজিওরা কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরিব মানুষকে টাকা দিয়ে এসেছে এখনো দিচ্ছে যখন গরিব মানুষের সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তখন এনজিওর রাস্তা খোলা । দেশে লক্ষাধিক এনজিও থাকায়  কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই মানুষ খুব সহজে টাকা নিতে পারছে এনজিওে থেকে ।

 

প্রশ্ন উঠতে পারে মানুষের ঋনের পরিমান বেড়েছে । এনজিওদের টাকা কিন্তু এনজিওদের পকেটে নাই সদস্যদের পকেটে এনজিওরা শুধু নিচ্ছে দিচ্ছে আর কাগজ কলমে হিসাব নিকাশ । কোনো কারণে এনজিও বিলুপ্তি হলে টাকা কিন্তু সদস্যদের কাছেই । দেশে করোনা  পরিস্থিতিতে কিন্তু অনেক এনজিও কর্মীদের বেতন ঠিকভাবে দিতে পারোনি । কারণ লিকুইট কোনো মানি এনজিওরা রাখেনা সব গ্রাহকদের কাছে । তাই ঝুঁকিতে থাকলেও এনজিওরা থাকে সদস্যরা নয় ।

১৪. কর্ম সংস্থান : দেশের লক্ষ লক্ষ বেকারদের কর্ম সংস্থান হয়েছে এনজিওতে । তাই এনজিওগুলোর ভূমিকা স্বীকার করতে হবে এক কথায় ।

এমন কোনো সেক্টর খুঁজে পাবেন না যেখানের উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা নেই ।

আরো পড়ুন  এনজিও কর্মীদের জন্য চাই সমতা ও নায্যতা; প্রয়োজন জিও-এনজিও উদ্যোগ

এনজিওদের চলার পথ কখনো মশ্রিণ ছিলনা : এনজিওদের এতো অবদান থাকলেও তাদের চলার পথ কখনো খু্ব মশ্রিন ছিলনা । প্রথম দিকে কাজ করতে গেলে কমিউনিটি থেকে বেশ বাঁধার মুখে পরতে হয়েছে এনজিওদেরকে এমনকি বিধর্মী বানিয়ে ফেলা হবে, নারীদের পাচার করে দেবে ইত্যাদি গুজব ছিলো । এছাড়া নারীদের নিয়ে সভা সেমিনার করার বিরুদ্ধেও ছিলো ফতোয়া । অনেক সময় এনজিওদের অপমান অপদস্ত হতে হয়েছে । স্থানীয় সরকার সবসময় এনজিওদের কাজের সুফল বুঝতে পেরে এনজিওদের কাছে রাখায় অনেক সমস্যা সমাধান সহজ হয়েছে তবে সুশাসন ও জবাবহীতিতা প্রসঙ্গে তাদের তেমন একটা আগ্রহ ছিলনা যদিও এখন চিত্র ভিন্ন । এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সাথে বেশ লিয়াজু মেন্টেন করে কাজ করতে হয়েছে এনজিওদের ।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ করে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এনজিওদের ভূমিকা অপরিসীম । এমডিজি অর্জনে এনজিওগুলো বিশেষ অবদান রেখেছে। কিন্তু তার প্রকৃত স্বীকৃতি কই ? । জাতীয় অর্থনীতিতে এনজিও কর্মীদের ভূমিকার স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে সাথে সাথে টেকসই পরিকল্পনা । পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেতে পারে । এখনো জাতীয়ভাবে এই সফলতার তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই । জাতীয় বাজেটেও আলাদা করে  এখনো এনজিওদের উন্নয়নে তেমন কোনো গুরুত্ব নেই । সময় এসেছে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে এনজিওদের সফলতার জন্য তাদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সম্মানিত করা ও উৎসাহিত করা ।

https://www.youtube.com/watch?v=u76jyGoCvvA

 



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »