প্রকৃত পক্ষে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছে অনেক পুর্বে।

ভাষা আন্দোলন যেভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা

ফেব্রুয়ারি ২৩ ২০২১, ২০:৫৭

Spread the love

ভাষা আন্দোলন যেভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ভাষা আন্দেলন একটি সুরিণীয় অধ্যায়।প্রকৃত পক্ষে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছে অনেক পুর্বে।

ইংরেজ শাসিত ভারতে একটা প্রশ্ন উঠেছিল ভারতের সাধারণ ভাষা কি হবে ?কংগ্রেস মহল একবাক্যে হিন্দীর স্বপক্ষে রায়দান করে।সাধারণভাবে মুসলমানেরা উর্দুর পক্ষে মত প্রদান করে। তবে এই দুই মতবাদের বিপক্ষে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে বাংলাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার জন্য একটি শোর উঠে।
তার উদ্যোক্তাদের মধ্যে শান্তি নিকেতনের মনীষীগনই ছিলেন প্রধান। বাংলাকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার স্বপক্ষে ১৯২০ সালে শান্তি নিকেতনে যে সভা হয় তার সভাপতি ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে সভায় ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার স্বপক্ষে এক দীর্ঘ প্রবন্ধ পাঠ করেন। এ প্রবন্ধটি মোসলেম ভারত, পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তবে তখনকার দিনের ভারতের সকল অঞ্চলে এ মতবাদ গৃহীত হয়নি।
সহিদ মিনার
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হওয়ার পরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে হিনীকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রবর্তন করা হয়। তবে এতে কোন কোন প্রদেশ সম্বত ছিল না। মাদ্রাজে হিন্দীর বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা দেখা দেয়। মাদ্রাজ প্রদেশের সুবিখ্যাত জননেতা চক্রবর্তী রাজা গোপাল চারী হিন্দীর পক্ষে ছিলেন বলে তিনি তার জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেন।হিন্দীকে সাধারণ ভাষা করার যার পক্ষপাতি ছিলেন তাদের যুক্তি ছিল, পুর্বেই যখন হিন্দীকে ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে, তখন তাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করতে কি আপত্তি থাকতে পারে? তার উত্তরে হিন্দীর বিরোধী মাদ্রাজীর। বলতে, হিন্দী হচ্ছে বিজয়ীদের ভাষা। যে আর্যগোষ্ঠীর লােকেরা কোন কালে দাক্ষিণাত্য জয় করেছিল তাদের ভাষা হচ্ছে হিন্দী। কাজেই হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে বিজেতা বলতে তারা শ্রী রাম চন্দ্রকে মনে করতো
তেমনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিন্ধু প্রদেশের ভক্টর দাউদ পােতা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে নির্বিবাদে গ্রহণ করতে সম্মত ছিলেন না। তিনিও পশতু ভাষার কবি খােশাল খান খটকের মত মােগলদের বিরোধী ছিলেন। মােগল আমলেই উর্দু বিশেষভাবে বিকশিত হয়েছে বলে তার বিরোধিতা করতেন।

তবে এ ক্ষেত্রেও উর স্বপক্ষে যারা যুক্তি পেশ করতে তাদের যুক্তি ছিল এই যে, যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দ্বারা উর্দু,সাধারণ ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়েছে তখন দেশ বিভাগের পর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে কোন আপত্তির কারণ থাকতে পারে না। তবে এখানে একটি নতুন সমস্যা দেখা দেয়।

সাধারণ ভাষা হিসেবেই সকল প্রদেশের মুসলমান উর্দকে গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের।মুসলমানদের পক্ষে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার মস্তবড় অসুবিধা ছিল এই যে, পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানেই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ লােকের বাস এবং তাদের ভাষা ছিল বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানের কোন অঞ্চলেরই কথ্য ভাষা উর্দু, ছিল । শুধুমাত্র পশ্চিম পাঞ্জাবের লেখার ভাষা ছিল উর্দ।
অথচ সেই পশ্চিম পাঞ্জাবের লেখার ভাষাকেই পাকিস্তানের সর্বত্র রাষ্ট্ৰীয়-ভাবে চালু করার কোন যুক্তিই নেই। কাজেই এই প্রচেষ্টার মুলে যে অন্ত রয়েছে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য ছিল।
ভাষা আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা এ আন্দোলনের সার্থকত।খুব সম্ভবতঃ বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, ডক্টর শহীদুল্লাহ, মাওলানা মােহাম্মদ আকরাম খাঁ, ডক্টর কাজী মােতাহার হােসেন, আবুল মনসুর আহমদ, প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম প্রমুখ বুদ্ধিজীবী ও মনীষীগণ।
দেশ বিভাগের সঙ্গে সঙ্গেই প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ঢাকা বিশ্ব।বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রের সহযােগিতায় ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তমদুন মজলিস গঠন করে। এই তন্দুন মজলিসের উদ্যোগেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবী সম্বলিত প্রথম পুস্তক পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দ’?-প্ৰকাশিত হয়।
এই পুস্তকে ডক্টর কাজী মােতাহার হােসেন, আবুল মনসুর আহমদ ও অধ্যাপক আবুল কাসেমের তিনটি প্রবন্ধ ছিল এবং এদেশের ছাত্র সমাজ ও জনগণ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীর স্বপকে এ সব প্রবন্ধাবলীর যুক্তিতে দৃঢ় অহা হাপ করে।
গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলার স্বপক্ষে ও ধীরেন্দ্রনাথ দেবের প্রস্তাব ও লিয়াকত আলী খান কর্তৃক অগ্রাহ্য হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে রেসকোর্সের ময়দানে ও কার্জন হলে কায়েদে আযম মাহাদ আলী জিন্নাহর উর্দর স্বপক্ষে ভাষণের পর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীর স্বপক্ষে জনমত আরো প্রবল হয়ে উঠে এবং অবশেষে পল্টন ময়দানে নাজিমুদ্দীনের উপর পক্ষে পুনরায় ঘােষণার পর পূর্ব পাকিস্তানের জনমত বাংলার দাবীর পক্ষে আরো দুর্বার হয়ে উঠে।
এ আন্দোলনের মুলত: দু’টি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায় ১৯৪৭-৪৮ সালের আন্দোলন। এতে অংশ গ্রহণকারী ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, অধ্যাপক ও সচেতন বুদ্ধিজীবী শ্রেণী এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলন হল ৫২ সালের গণ আন্দোলন। এ দু’টি পর্যায় নিয়েই সামগ্রিকভাবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।

অাশ্চর্যের বিষয়, এ আন্দোলনের দু পর্যায়ের কোনটিতেই অংশ গ্রহণ করেননি এন লোকও স্বগর্বে ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী সৈনিক বলে নিজেকে প্রচার করছে এবং যারা প্রকৃত পক্ষে ভাষা অন্দোলন কালে ভীষণ নির্যাতন ভােগ করে আন্দোলনকে গড়ে তুলেছেন। তারা অনেকেই আজো অখ্যাত, অজ্ঞাত রয়ে গেছেন।

https://www.youtube.com/watch?v=3FKpbgOS-Hc&list=RD3FKpbgOS-Hc&start_radio=1

লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মোঃআজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন 
নির্বাহী সদস্য,জাতীয় পার্টি
কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি
সভাপতি,জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।
এই লেখার সূত্র ও দায়ভার লেখকের :



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »