করছে অপরাধ, জড়াচ্ছে হানাহানি সংঘাতে, খুন ধর্ষণের তদন্তে আসে উঠতি বয়সীদের নাম, জিরো টলারেন্সে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা

পাড়ায় পাড়ায় মাস্তান গ্রুপ

Spread the love

রাজধানীসহ জেলা-উ’পজেলার পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে মাস্তান গ্রুপ। ক্ষ’মতাসীন দলের বা সহযোগী সং’গঠনের নাম ভাঙিয়ে কিশোরদের একটি অংশ এ’লাকার ‘প্রভাবশালী’ বড় ভাইদের হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অলি-গলি। ক’রছে নানা অপরাধ। গ্রুপে গ্রুপে দ্বন্দ্বে খু’নোখুনি হচ্ছে। বাড়ছে হানাহানি সংঘাত। দল বেঁধে মাদক সেবন ‘করছে যত্রতত্র। পি’ছিয়ে নেই ধর্ষণের মতো অপরাধ করতেও। বিভিন্ন স্থা’নে ঘটিত অপরাধকান্ডের তদন্তে বেরিয়ে আসছে উঠতি বয়সী ত’রুণদের নাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিরো ট’লারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কঠোর হস্তে দমন নী’তি নিয়ে এগোচ্ছে তারা।

সূত্রমতে, স’রকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পাড়ায় পাড়ায় মাস্তান গ্রু’পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আ’ইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে যে কোনো স’ময়ে শুরু হবে বিশেষ অভিযান। ব্যবস্থা নেওয়া হবে উঠতি মা’স্তান গ্রুপ ও তাদের আশ্রয়-প্র’শ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও। কোনো কোনো রা’জনৈতিক নেতা ও গডফাদার কোথায় কী’ভাবে কিশোর অপরাধীদের নানা কৌশলে ব্যবহার করছে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারের একটি গোয়েন্দা প্র’তিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়ে’ছে। এর মধ্যে রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আনতে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া, জুমার খু’তবায় কিশোর অপরাধের ভয়াবহতা সম্পর্কে অভি’ভাবকদের সচেতন করা এবং কিশোরদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করা। প্র’তিবেদনটি এর’ই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সং’শ্লিষ্ট দফতরগু’লোতে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মহান’গর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ প্র’সঙ্গে বলেন, পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং, মাস্তানদের তালিকা করা হচ্ছে। এ বি’ষয়ে ডিএমপির সব থানাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেও’য়া হয়েছে। কিশোর গ্যাং ও মাস্তানদের চিহ্নিত, তাদের অবস্থান, গ’তিবিধি নজরদারি করার নি’র্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বি’গত সরকার আমলেও এলাকাভিত্তিক কিংবা পাড়া-মহল্লাভিত্তিক সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিল। বর্তমান সরকার মেয়াদেও বহাল পাড়ায় পাড়ায় মস্তান গ্রুপ। তারা এলাকার প্রভাবশা’লী রাজনৈতিক নেতার ছ’ত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করছে। দলবেঁধে মাদক সেবন করার পা’শাপাশি পাড়া-মহল্লায়, স্কুল, ক’লে’জের সামনে নারীদের উত্ত্যক্ত করছে। নিজেদের বী’রত্ব দেখাতে গিয়ে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘ’টনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে। এ ছা’ড়াও ব্ল্যাকমেল করছে বিভিন্নজনকে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা, আধিপত্য ধরে রাখার জন্য এই কিশোর গ্রুপকে ব্যব’হার করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আবার কে’উ কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়ি’ত না হলেও অপরাধ ঢাকতে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকার চেষ্টা করছে।  সম্প্রতি নো’য়াখালীর বেগমগঞ্জের এক না’রীকে নি’র্যাতন করে ভিডিও প্রকাশ করে কিশোর গ্রুপ। এ গ্রুপের মূল হোতা ছিল দেলোয়ার বাহিনী। দেলোয়ার গ্রেফতারের পর তার স’হযোগী গ্রুপের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বা’হিনীর হাতে ধরা পড়ে। এই বেগমগঞ্জেই ২১টি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু ক্ষমতাসীন দল নয়, বিএনপির নে’তাদের হয়েও কাজ করছে কেউ কেউ। একইভাবে সাভারে এক গৃহবধূকে ধ’র্ষণ শেষে ব্লেড দিয়ে হত্যা চেষ্টায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন কিশোর গ্রু’পের হোতা বলে জানা গেছে। জানা গেছে, রাজ’ধানীসহ সারা দেশে এই কম বয়সী অপরাধী গ্রুপ রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইলে বা নিজেদের মধ্যে কথা বলে হাসা’হাসি করে। মো’টরসাইকেলে এলাকায় তারা ম’হড়া দেয়। এসব মস্তান গ্রুপ, উঠতি তরুণরা সাধারণ মানুষের স্বস্তি কেড়ে নি’চ্ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এই কিশোর গ্যাংয়ের ‘ছে রয়েছে দেশি অস্ত্রের ছড়াছড়ি, এমনকি অ’ত্যাধুনিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। মু’ঠোফোন ব্যবহার করে এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য ও ছবি আদান-প্রদান করে পরস্পরকে হামলার নির্দেশ দিচ্ছে। যে বয়সে বই নিয়ে কিশোরদের স্কুলে যাওয়ার কথা ঠিক সেই বয়সে ছুরি, চাকু হাতে কিশোররা হত্যাকা-সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কান্ড ঘটিয়ে চলেছে। শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে উঠতি বয়সের কিশোরদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। কিশোর অপরাধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গোটা সমাজ ব্যবস্থায়। সারা দেশে গ্যাং কালচারের অস্তিত্ব থাকলেও ঢাকায় এর দাপট বেশি। রাজধানীতে ৬২টি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ৪২ গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ এবং এদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।

একটি সূত্রমতে, গত ১০-১১ ব’ছরে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া আ’লোচিত হত্যাকা- বেশির ভাগই কি’শোর অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারের নেতৃত্বে এরা বড় ধরনের চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ইভ টিজিং এবং মা’দক বিক্রির মতো কাজে যু’ক্ত হচ্ছে।

স’মাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিশোরদের একটি বিরাট অংশ নি’ম্নবিত্তের। ঢাকাসহ দেশের ছো’ট-বড় শহরে দরিদ্র পরিবারের লাখ লাখ কি’শোর বড় হয় অযত্ন-অবহেলার মধ্য দিয়ে। পারিবারিক বন্ধন ক্রমেই শি’থিল হয়ে যাওয়া, সা’মাজিক অবক্ষয়, অস্থিরতা কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অ’ন্যতম কারণ।

ঢাকা বি’শ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক জানান, কিশোর গ্যাং স্থায়ী কালচারে পরিণত হতে যাচ্ছে। এর অ’ন্যতম কারণ উন্মুক্ত বা আকাশ সংস্কৃতি, ই’ন্টারনেট, তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার। এ ছাড়া রাজনৈতিক আশ্রয়ও একটি কারণ। করোনার সময় অভিভাবকদের প’রিকল্পনার অভাবে সন্তানদের কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এ সু’যোগে তার সন্তান নিজের মতো করে সময় ব্যয় করছে। পরে সে নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপন ক’রতে চায়। আর এটি করতেই গি’য়েই কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বা নিজে কি’শোর গ্যাং সৃষ্টি করছে।

তিনি এও বলেন, ক’রোনার সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কি’শোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে। বে’ড়েছে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব। ঢাকায় কিছুটা নিয়’ন্ত্রণে থাকলেও ঢাকার বাইরে আগের মতো চলাফেরা করছে কিশোররা। বিভিন্ন বিষয়ে অধিক সময় দেওয়ায় বিরোধ বাড়ছে। ফলে হত্যা, ইভ টিজিং, ছিনতাই, এলা’কায় আধিপত্য বিস্তার, মা’রামারিসহ বিভিন্ন ধরনের অ’পরাধে জড়াচ্ছে কি’শোররা।

র‌্যাবের আ’ইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. ক’র্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে কিশোর গ্যাং এবং মস্তান গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। বি’ভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- করে তারা মূলত ফৌ’জদারি অপরাধ করছে। বিভিন্ন সহিংস ঘ’টনার জন্ম দিচ্ছে। এসব উঠতি বয়সী কি’শোর গ্যাং বা মাস্তানদের নিয়ন্ত্রণে র‌্যাবই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে র‌্যাব অত্যন্ত সফল। র‌্যাবের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং ও ম’স্তানদের চিহ্নিত কর’তে র‌্যাবের সদস্যরা সাদা পোশাকে দা’য়িত্ব পালন করছে। কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আইনের আ’ওতায় আনতে র‌্যাব স’চেষ্ট রয়েছে।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »