বাল্যবিবাহ বন্ধে পুরুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানালো তরুণরা

ডিসেম্বর ১৮ ২০২০, ০১:৪৫

Spread the love

বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন বাবারা। কারণ প্রায় সব বাল্যবিবাহের পেছনেই থাকে বাবার ভূমিকা। বাবাদের দৃষ্টান্ত বদলে দিতে পারে সমাজকে। সকল জেন্ডারের কিশোরদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা ও বাল্যবিবাহ বন্ধে বাবাদের যত্নশীল ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করার নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানিয়েছে তরুণরা।

  বৃহস্পতিবার ‘সবার জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং বাল্য বিবাহ বন্ধে পুরুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে যুবদের অ্যাডভোকেসি প্রকল্প’ এর আয়োজনে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।

 এনগেজ মেন এন্ড বয়েজ নেটওয়াকের সহযোগী ‘ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর ট্রান্সফরমিং মাস্কুলিনিটিজ’ এর মাধ্যমে ‘সবার জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং বাল্য বিবাহ বন্ধে পুরুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ ।

  সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের জেন্ডার অ্যাডভাইজার উম্মে সালমা,  সবার জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ প্রকল্প জাতীয় চেঞ্জমেকার সোহানুর রহমান; অ্যালায়েন্সের সদস্য সংস্থার কর্মীবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে যুব চেঞ্জমেকাররা নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জোরালো দাবি তুলে পুরুষদের নীরবতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানায়। তারা বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ে এবং ২১ বছরের নিচে কোনো ছেলের বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে ‘বিশেষ ক্ষেত্রে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের ‘সর্বোত্তম স্বার্থ’ বিবেচনায় আদালতের নির্দেশে বিয়ে হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

সবার জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং বাল্য বিবাহ বন্ধে পুরুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে যুবদের অ্যাডভোকেসি প্রকল্প থেকে যুব চেঞ্জমেকাররা যত্নশীল পুরুষালি আচরণের লেন্স থেকে  যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং বাল্য বিবাহ বিষয়ক সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা, আইন, ও জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা এবং গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করছে। উদ্দেশ্য ছিল সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে কিভাবে পুরুষ ও কিশোররা সক্রিয় ভাবে জড়িত হওয়ার পাশাপাশি  নারী ও শিশুদের অধিকার প্রচার ও সুরক্ষায় যত্নশীল ভূমিকা রাখতে পারে তা গভীরভাবে অনুসন্ধান করা। পর্যালোচনার পাশাপশি নারী ও শিশুদের অধিকার প্রচার ও প্রসারণে নিযুক্ত  সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, নারী নেত্রী, হিজড়া সহ  যুব নেতাদের সাক্ষৎকার গ্রহণ করা হয়েছে।

যুবদের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। এটি শিশু অধিকার পূরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধা হিসাবে এখনো আমাদের সমাজে  অব্যাহত রয়েছে। বাল্য বিবাহ মেয়ে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য,  এবং মানসিক বিকাশ এবং শিক্ষাগত সুযোগগুলিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেহেতু বাল্য বিবাহ দারিদ্র্যের চক্রকে শক্তিশালী করে এবং লিঙ্গ বৈষম্য, নিরক্ষরতা এবং অপুষ্টি সেইসাথে উচ্চ শিশু এবং মাতৃ মৃত্যুর হারকে স্থায়ী করে তোলে।পুরুষালি আচরণ চর্চায় পুরুষদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে যৌন সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব।  কারণ প্রচার-প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে মেয়েশিশুর প্রতি পরিবারে দৃষ্টিভঙ্গির।

সম্মেলনে আরও বলা হয় যে, বাল্য বিবাহের প্রধান কারণ অভিভাবকদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। বিশেষ করে বাবারা যত দিন বুঝবেন না যে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে মেয়েশিশুর যে  বিরাট ক্ষতিসাধন করা হয়, তত দিন বাল্য বিবাহ বন্ধ করা কঠিন। এই প্রেক্ষাপটে সবার জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে পুরুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিষয়ক যুবদের এডভোকেসি প্রকল্পের ১১১ জন যুব চেঞ্জমেকার নভেম্বর ২০২০ তে দেশ ব্যাপী ৩৪ টি জেলায় প্রায় ২ হাজার ৩৪০ জন পুরুষের সাথে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং বাল্য বিবাহ বন্ধে পুরুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের অ্যাডভোকেসি সংলাপ পরিচালনা করেছে।  এদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, বাবা, স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা, কাজী, ক্রীড়াবিদ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধি।



এই প্রেক্ষাপটে যুব চেঞ্জমেকাররা সবার জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং বাল্য বিবাহ বন্ধে পুরুষ বিশেষত বাবাদের যত্নশীল আচরণে উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের নিকট যুবদের  কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে –  বাল্যবিবাহ নিরোধ ও যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে   পুরুষ ও ছেলেদের জড়িত  করার উদ্যোগ গ্রহণ করা  প্রয়োজন। প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণের গুরুত্ব বিষয়ে পোস্টার, লিফলেট বিতরণ এবং প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে গ্রাম হাটবাজারে প্রচারের ব্যবস্থা করা।  বিবাহিত কিশোরীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোসহ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য পুরুষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য যত্নশীল পুরুষালী আচরণের প্রচার করা এবং প্রণোদনা, স্বীকৃতি দিতে হবে।





আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »