মোল্লারহাটের গর্ব
সংগীত ও সমাজসেবায় দীপ্ত মুখ—মোঃ জহিরুল ইসলাম
ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়ন—ছোট্ট একটি গ্রাম, তবে সম্ভাবনার আলোয় ভরপুর। এখানকারই সন্তান মোঃ জহিরুল ইসলাম আজ সংগীত, স্কাউটিং এবং সামাজিক উন্নয়নকর্ম—তিন ক্ষেত্রেই নিজের কর্মদক্ষতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় পরিমণ্ডলে পরিচিত এক আলোচিত মুখ। তার পথচলা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়; বরং একটি প্রান্তিক অঞ্চলের সমাজ-সংস্কৃতিকে বদলে দেওয়ার নীরব নেতৃত্বের ইতিহাস।
সমন্বয়হীনতায় বাউবির বরিশাল অঞ্চল
গানোর কথা, সুর ও শিল্পী: মোঃ জহিরুল ইসলাম
শৈশবের প্রেরণা
সংগীত, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও স্কাউটিং—এই তিনটি ধারার মধ্য দিয়েই তার বড় হওয়া। স্কুলজীবন থেকেই গান শোনা ও গান শেখার প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। পরিবারের সহায়ক মনোভাব তাকে আরও উৎসাহিত করে। পাশাপাশি স্কাউট আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তিনি শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব ও সমাজসেবার বুনিয়াদি শিক্ষা লাভ করেন—যা পরবর্তীতে তার পেশাজীবনের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
সংগীতচর্চায় উজ্জ্বলতা
আজ তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীত শিল্পী। আধুনিক গান, লোকগীতি, আঞ্চলিক সুর—সব ক্ষেত্রেই তার স্বাচ্ছন্দ্য। মঞ্চনাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রেডিও সম্প্রচার—যেখানেই তিনি গান করেন, সেখানেই শ্রোতারা খুঁজে পান আবেগ, আন্তরিকতা ও সত্যিকারের শিল্পীসত্তা।
স্থানীয় তরুণদের সংগীতচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতেও তার আগ্রহ অব্যাহত। অনেকের কাছেই তিনি এখন গানের শিক্ষক, অনুপ্রেরণা ও পথপ্রদর্শক।
উন্নয়নকর্মে নিবেদন
শুধু সংগীত নয়—মোঃ জহিরুল ইসলামের আরেক পরিচয় তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ উন্নয়নকর্মী। বছরের পর বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে উপকূলীয় ও দুর্গম এলাকায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। নারী, শিশু, বিপন্ন জনগোষ্ঠী ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জন্য অধিকার-ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে তার সক্রিয়তা প্রশংসিত।
দুর্গম এলাকায় উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অর্জন করেন “বেকন অ্যাওয়ার্ড”—যা তার পেশাগত নিষ্ঠা ও মানবিক অবদানের এক মর্যাদাপূর্ণ মূল্যায়ন।
স্কাউটিং: নেতৃত্বের পাঠশালা
ছোটবেলা থেকে স্কাউট—এই পরিচয় আজও বহন করেন গর্বের সঙ্গে। বিভিন্ন ক্যাম্প, প্রশিক্ষণ ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি গড়ে তুলেছেন নেতৃত্ব, সহযোগিতা ও মানবিকতার অমূল্য গুণাবলি। এলাকার যুবসমাজকে স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতা
শিক্ষাজীবনে তিনি সম্পন্ন করেছেন এমবিএ। শিক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তিনি উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা, দলনেতৃত্ব, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা
তিনি বিশ্বাস করেন—“যে যা পারে, তা দিয়ে সমাজের কল্যাণে কাজ করাই মানবতার প্রকৃত পরিচয়।”
এই বিশ্বাস থেকেই তিনি প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানো, কমিউনিটি উদ্যোগে যুক্ত থাকা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ধরে রাখার কাজ একসঙ্গে করে চলেছেন।
মোল্লারহাটের অনুপ্রেরণা
মোঃ জহিরুল ইসলামের জীবনগাথা প্রমাণ করে—যদি মানুষের মনোযোগ থাকে, প্রতিশ্রুতি থাকে এবং সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ থাকে, তবে ছোট একটি গ্রাম থেকেও দেশের পরিমণ্ডলে পরিচিত হওয়া সম্ভব।
মোল্লারহাটের মানুষ আজ তাকে নিজেদের গর্ব বলে মনে করে।
আর তিনি নিজের অবস্থানকে ব্যবহার করছেন সমাজ, সংস্কৃতি ও মানবিকতার উন্নয়নে।
মোল্লারহাটের আলোকবর্তিকা
সংগীত, মানবিকতা ও নেতৃত্বের সমন্বয়ে গড়া মোঃ জহিরুল ইসলাম**
ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের নাম শুনলেই অনেকের মনে ভেসে ওঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া শান্ত গ্রামাঞ্চলের ছবি। কিন্তু এই গ্রামের মানুষের কাছে আরও বড় একটি পরিচয়—তাদেরই সন্তান, সংগীতশিল্পী, মানবিক উন্নয়নকর্মী এবং স্কাউট লিডার মোঃ জহিরুল ইসলাম।
তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন—তার জীবনযাত্রা প্রমাণ করে কীভাবে এক তরুণ নিজের প্রতিভা, পরিশ্রম, মানবিকতা এবং দায়িত্ববোধ দিয়ে একটি সমাজকে আলো দিতে পারে।
শৈশব: যেখানে বীজ রোপিত হয়েছিল
মোল্লারহাটের স্নিগ্ধ পরিবেশেই বড় হয়েছেন জহিরুল ইসলাম। বাল্যকাল থেকেই গান শুনতে শুনতে ঘুম, স্কুলের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, আর স্কাউটদের সঙ্গে প্রকৃতি ও মানবসেবার অভিজ্ঞতা—এসবই তাকে গড়ে তোলে এক বহু-মাত্রিক মানুষ হিসেবে।
পরিবারের সংস্কৃতিমনা পরিবেশ তাকে সংগীতচর্চায় প্রেরণা জুগিয়েছে, আর গ্রামবাসীর প্রতি সহমর্মিতা তাকে সামাজিক কাজে আগ্রহী করেছে।
সংগীতচর্চা: আত্মার খাদ্য থেকে পেশাদারি যাত্রা
আজ তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী—কিন্তু এই যাত্রা ছিল দীর্ঘ, অধ্যবসায় ও শ্রমে ভরা।
প্রথম গান
একটি স্থানীয় অনুষ্ঠানে প্রথম গান গাওয়া। দর্শকদের প্রশংসা তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
পরবর্তীতে মঞ্চে নিয়মিত গান, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার এবং জেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে থাকেন।
বেতারে তালিকাভুক্তি
একসময় সুযোগ আসে বাংলাদেশ বেতারের অডিশনে অংশ নেওয়ার। নিজের স্বর, নিখুঁত তাল-লয় এবং উপস্থাপনার দক্ষতায় তিনি নির্বাচিত হন।
এটি শুধু তার নয়—মোল্লারহাট ইউনিয়নের জন্যও গর্বের বিষয় ছিল।
গান নিয়ে ভাবনা
তিনি মনে করেন—
“গান মানুষকে বদলে দিতে পারে। গান হলো আবেগের ভাষা, আর শিল্পীর দায়িত্ব হলো মানুষকে ইতিবাচক পথে উজ্জীবিত করা।”
উন্নয়নকর্মে উজ্জ্বল ভূমিকা
সংগীত তার পরিচয়ের বড় অংশ হলেও, আরেকটি সমান গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়—তিনি একজন অভিজ্ঞ ও মানবিক উন্নয়নকর্মী।
দুর্গম এলাকায় কাজ
উপকূলীয় জনপদ, নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারী-শিশু ও ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়ানো—তার দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতার অন্যতম দিক।
বেকন অ্যাওয়ার্ড
দুর্গম এলাকায় কর্মসম্পাদন, কমিউনিটি অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার অসামান্য ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অর্জন করেন “বেকন অ্যাওয়ার্ড”—যা তার পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন।
নেতৃত্ব ও দক্ষতা
-
কমিউনিটি মোবিলাইজেশন
-
মানবাধিকার সচেতনতা
-
নারী ক্ষমতায়ন
-
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
-
প্রশিক্ষণ ও পরামর্শদান
সব ক্ষেত্রেই তিনি সফলতার সঙ্গে ভূমিকা রেখে আসছেন।
স্কাউটিং: চরিত্র গঠনের মাটিঘর
শৈশবের স্কাউট অভিজ্ঞতাই তাকে দায়িত্বশীল, সময়নিষ্ঠ ও মানবিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন স্কাউট ক্যাম্প, ওয়ার্কশপ, রোভারিং প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি ইয়ুথ লিডারশিপে নিজের অবস্থান সুসংহত করেন।
স্কাউটিং তাকে শিখিয়েছে—
“নিজেকে নয়, সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে।”
শিক্ষা ও পেশাগত পরিপক্বতা
উচ্চশিক্ষা হিসেবে তিনি এমবিএ সম্পন্ন করেন।
এই ডিগ্রি এবং উন্নয়নকাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা তাকে প্রশাসনিক নেতৃত্ব, বাজেট ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প পরিচালনা এবং দল পরিচালনায় দক্ষ করেছে।
সংগীত, সমাজসেবা ও পেশাদার জীবনের সমন্বয়
জহিরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় শক্তি—তিনি সংগীত, সমাজসেবা ও পেশাগত জীবনকে একসঙ্গে বহন করতে পারেন।
দিনের বেলা তিনি মাঠে মানুষের পাশে;
রাতে তিনি মাইক্রোফোন হাতে গান করেন শ্রোতাদের ভালোবাসার জন্য।
তার নিজের কথায়—
“সেবা ও শিল্প—দুটোই মানুষের জন্য। তাই এগুলো একসঙ্গেই আমার জীবন।”
কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতা
তিনি নিয়মিত অংশ নেন—
-
স্থানীয় যুব উন্নয়ন কার্যক্রমে
-
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন
-
শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণ
-
সামাজিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন
-
পরিবেশ ও নদী রক্ষায় আলাপ-আলোচনা
নিজ অঞ্চল মোল্লারহাটের প্রতি তার টান ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
মোল্লারহাটবাসীর চোখে জহিরুল ইসলাম
Md Jahirul Islam
যাদের কাছে তিনি গর্ব—
-
স্থানীয় প্রবীণরা বলেন—“এলাকার ছেলে হয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পরিচিতি পেয়েছে।”
-
তরুণরা বলেন—“উনি আমাদের রোল মডেল।”
-
শিল্পীরা বলেন—“গানটাকে তিনি সম্মান করেন।”
-
সহকর্মীরা বলেন—“নেতৃত্বের পাশাপাশি তার মধ্যে বিরল মানবিকতা আছে।”
উপসংহার
মোঃ জহিরুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন—গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন মানুষ চাইলে নিজ প্রতিভা, ইচ্ছাশক্তি, শ্রম এবং মানবিকতা দিয়ে সমাজে আলো ছড়াতে পারে।
আজ মোল্লারহাট ইউনিয়ন শুধু একটি গ্রাম নয়—এটি একটি অনুপ্রেরণার নাম, কারণ এখান থেকে উঠে আসা একজন মানুষ সংগীত, উন্নয়ন ও মানবিক কাজের সমন্বয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন।
এমন মানুষই দেশের প্রকৃত সম্পদ।
