“কর্মসংস্থান ও দেশের দারিদ্র বিমোচনে তরুন উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি জরুরী“
২ নভেম্বর ২০২৫। কোস্ট ফাউন্ডেশন বরিশাল সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো তরুন উদ্যাক্তা সমাবেশ ২০২৫ ও গ্রাহক সেবা পক্ষ” অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন, যার উদ্দেশ্য ছিল তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত করা এবং ক্ষুদ্রঋণ গ্রাহকদের সেবা মান উন্নত করার কৌশল নির্ধারণ।
তরুন উদ্যোক্তা সমাবেশ অনুষ্ঠানে বক্তারা দেশের দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে তরুন উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি জোড়দার করার দাবী জানান। তারা আরোও বলেন যে, বাংলাদেশেকে সত্যিকারের উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে দেখতে হলে মালয়শিয়া, দঃ কোরিয়ার মত অর্থনৈতিক কর্মসুচি হাতে নিতে হবে যেখানে তরুন, শিক্ষিত উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সরাসরি জড়িত হতে পারে।
মোঃ জহিরুল ইসলাম এর সংঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা মৎস্য কর্মকতা জনাব রিপন কান্তি ঘোষ, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকতা জনাব উত্তম ভৌমিক, ও জনাব প্রিন্স বাহাউদ্দিন তালুকদার, সহকারী পরিচালক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর । বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২০ জন তরুন, সফল ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা অংশগ্রহন করেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা বিনয়িম করে বক্তব্য রাখেন। আলোচকবৃদ তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ গ্রহনে গুরুত্ব, ব্যবসায়িক উদ্ভাবন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ শুধু দারিদ্র্য বিমোচনের নয়, বরং তরুণ সমাজকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বনির্ভর করার একটি কার্যকর হাতিয়ার’’। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সফল উদ্যোক্তারা তাদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যা উপস্থিত তরুণদের অনুপ্রাণিত করে। শেষে গ্রাহক সেবা উন্নয়ন ও আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ গৃহীত হয়।
মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় জনাব আবদুর রব বলেন বলেন কোস্ট ফাউন্ডেশন দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ভোলা এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুনামের সাথে কাজ করে আসছে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা প্রদান করছে। বরিশালে কোস্ট ২০২৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে বর্তমানে কোস্ট এর ২৩২৬৭ সদস্য আছে, যার মধ্যে প্রায় ৪০% সদস্য হচ্ছে উদ্যোক্তা যারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তিনি আরোও বলেন কোস্ট আগামীতে বরিশালা জেলার সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র উদ্যোগ অথনৈতিক কর্মকান্ডসমুহ চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং যেখানে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরী সহযোগীতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তরুন, শিক্ষিত এবং বেকার যুবকদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ কর্মসুচির সাথে জড়িত করার চেষ্টা করে যাবে।
সমাবেশে বরিশাল অঞ্চলের উদ্যেক্তারা তাদের সফলতা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন, তারা উদ্যোক্তা হতে হলে শাহস ও কর্মস্পৃহা নিয়ে আগাতে হবে সে বিষয় তুলে ধরেন এবং সকল উদ্যোগের জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন, তারা জানান কোস্ট এর মত অন্যান্য সংস্থাগুলো এগিয়ে আসলে তুরুনরা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবে।
#উপজেলা কৃষি কর্মকতা জনাব উত্তম ভৌমিক বলেন, কৃষি এখন বানিজ্যিকীকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, শুধু মাত্র উৎপাদন করে চাহিদা মেটালে হবেনা, উৎপাদিত কৃষি পন্য বাজারজাত ও রপ্তানি করার জন্য উদ্যোক্তা তৈরী হওয়া প্রয়োজন যাতে তরুনরা ব্যবসা হিসেবে কৃষি পন্যতে উৎসাহিত হয়। কোস্ট ফাউন্ডেশন সেকল উদ্যোক্তা তৈরী করবে এবং আর্থিক সহযোগিতা দেবে কারিগরী সহযোগিতা করতে পাশে থাকবে কৃষি অধিপ্তর।
#জনাব প্রিন্স বাহাউদ্দিন তালুকদার, সহকারী পরিচালক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ বিনির্মানে অগ্রণি ভ‚মিকা পালন করবে তরুনরা। তাই তরুনদের উদ্যোক্তাদের নিয়ে এরকম সবাবেশ আয়োজন অত্যন্ত প্রসাঙ্গিক, যে কোনো তরুন উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য সম্পুর্ন প্রস্তুত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। কোস্ট ফাউন্ডেশন তাদের যে কোনো সদস্যকে যুব উন্নয়নের সেবা নিতে প্রেরণ করলে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে যুব উন্নয়ণ অধিদপ্তর এবং যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেয়ার জন্য যুব উন্নয়ন কোস্ট ফাউন্ডেণের কাছে ঋণের জন্য পরামর্শ দিতে পারে। উদ্যোক্তা তৈরী হলে তা আমাদের অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখবে।
জেলা মৎস্য কর্মকতা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, তরুন উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক, গ্রামীন অর্থনৈতিক বিকাশ, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি, সামাজিক পরিবর্তন ও নেতৃত্ব, টেকসই লক্ষমাত্রা অর্জনে সহায়তা করছে। যে তরুন স্বপ্ন দেখে, পরিশ্রম করে এবং লেগে থাকে। তিনিই একদিন সফল উদ্যোগক্তা হয়ে ওঠে। একজন তরুণ নিজেই নিজের এবং আরো কয়েকজনের কর্সংস্থান তৈরি করতে পারবে। তরুনদের ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারে অনেকে সফলতা পেয়েছ । তাই আমরা আশা করি কোস্টসহ যে কোন এনজিও এবং সরকারিভাবে সহজ শর্ত এ ঋণ নিয়ে তরুন প্রজন্ম এদিয়ে যাবো। উদ্যোক্তাদের সাথে সমন্বিত কাজের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
চ্যানেল আই এর প্রতিনিধি সাঈদ পান্থসহ আলোচকবৃন্দ তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ গ্রহণে ক্ষুদ্রঋণের গুরুত্ব, ব্যবসায়িক উদ্ভাবন, আর্থিক অন্তভ‚ক্তি এবং গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তারা বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ শুধু দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি, তরুণ সমাজকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বনির্ভর করার একটি কার্যকর হাতিয়ার।”
কর্মসংস্থান ও দেশের দারিদ্র বিমোচনে তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি সুপারিশমালা:
১. সরকারি খাতের জন্য সুপারিশসমূহ:
সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কম সুদে ও জামানতবিহীন ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া চালু করা।
একক জানালা (One Stop Service) ব্যবস্থা: ব্যবসা নিবন্ধন, লাইসেন্স, ট্যাক্স ও প্রশিক্ষণসহ উদ্যোক্তা সহায়তার জন্য জেলা পর্যায়ে একক জানালা সেবা চালু করা।
উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার: সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (TTC) ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম চালু করা।
সরকারি ক্রয়ে অগ্রাধিকার: ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের পণ্য ও সেবা সরকারি ক্রয়ে নির্দিষ্ট কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা।
কৃষি ও মৎস্য খাতের বানিজ্যিকীকরণে উৎসাহ: উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত কৃষি পণ্য শৃঙ্খলে তরুণ উদ্যোক্তাদের যুক্ত করতে ভর্তুকি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান।
ডিজিটাল উদ্যোগ সহায়তা: তরুণদের অনলাইন ব্যবসা, ই-কমার্স ও ফ্রিল্যান্স উদ্যোগে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি প্রণয়ন।
শিক্ষা পাঠ্যক্রমে উদ্যোক্তা শিক্ষা সংযোজন: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় উদ্যোক্তা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, যাতে শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই উদ্যোগী হতে পারে।
২. বেসরকারি খাত ও এনজিওসমূহের জন্য সুপারিশসমূহ:
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে উদ্ভাবন: তরুণ উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসা-বান্ধব ক্ষুদ্রঋণ প্যাকেজ তৈরি করা।
কারিগরি প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপ: সফল উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে “বিজনেস মেন্টরশিপ নেটওয়ার্ক” গড়ে তোলা।
বাজার সংযোগ (Market Linkage): স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বাজার সংযোগে মেলা, প্রদর্শনী ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
নারী উদ্যোক্তা সহায়তা: তরুণী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ঋণ সুবিধা ও ব্যবসা পরামর্শক দল গঠন করা।
আর্থিক স্বচ্ছতা ও গ্রাহক সেবা উন্নয়ন: ক্ষুদ্রঋণ ও প্রশিক্ষণ সেবায় তরুন উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দেয়া।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP): সরকারি সংস্থা, এনজিও ও বেসরকারি কোম্পানির সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।