ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথে কৃষক বেড়িয়ে পড়েন রস সংগ্রহ করতে

গোলগাছের ডগা থেকে মিষ্টি রসে তৈরি হচ্ছে গুড়

জানুয়ারি ২৬ ২০২১, ২২:৫১

Exif_JPEG_420

Spread the love

দক্ষিন উপকূলের অর্থকরী ফসল গোলগাছ: ডগা থেকে মিষ্টি রসে তৈরি হচ্ছে সুমিষ্ট গুড়

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি    দক্ষিন উপক‚লের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল গোলগাছ, নাম গোলগাছ হলেও দেখতে ঠিক নারিকেল গাছের মতো। জন্ম নোনাপানিতে-নোনা সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। এর ডগা থেকে বেরিয়ে আসছে মিষ্টি রস তৈরি হচ্ছে সুমিষ্ট গুড় । এ গুড়ের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। কলাপাড়ায় প্রায় শতাধিক কৃষক এ গাছের রস-গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। প্রতি বছর শীতের শরুতে ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথে কৃষক বেড়িয়ে পড়েন রস সংগ্রহ করতে। বাড়ির উঠানে বসে শুরু হয় গুড় তৈরীর কাজ। এ গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলছে কৃষকের জীবন-জীবিকা। জলবায়ুর প্রভাবসহ প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষন, চাষাবাদের জমি বৃদ্ধি এবং অসাধু একশ্রেনীর বনকর্মীর দস্যুপনার কারনে ক্রমশই ধ্বংস হতে বসেছে গোলগাছ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ দক্ষিণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে গোলগাছ। তবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, পার্শ্ববর্তী আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, ভোলা ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাসহ চরাঞ্চলে গোলগাছের বাগান রয়েছে। শীত মৌসুমে গোলবাগানের মালিকরা এর রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে থাকেন। এর রস দিয়ে সুস্বাদু পায়েশ তৈরি করা হয়।

গোল গাছের স্থানীয় মালিকরা জানান, প্রতিটি গোলগাছ পাতাসহ উচ্চতা হয় ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত। এর ফুল হয় হলুদ এবং লাল। ফুল থেকে গাবনা পরিপক্ক হলে সেটি তালগাছের আঁটির মতো কেটে শাস খাওয়া যায়। গোলপাতা একটি প্রকৃতিনির্ভর পাম জাতীয় উদ্ভিদ। এ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদটি নদী-খালের কাদামাটি আর পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়, গোলগাছ চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক, সহজসাধ্য এবং ব্যয়ও খুব কম। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না,  কোনো পরিচর্যাও করতে হয় না।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে প্রতিদিন সকালে কৃষকরা গোল বাগান থেকে সংগ্রহীত রস বাড়ির উঠানে নিয়ে সেই রস গৃহবধুরা পরিস্কার কাপড় দিয়ে ছেকে ডোঙ্গায় রাখেন। এরপর তাফালে কুটা দিয়ে আগুন জ¦ালিয়ে তৈরী করেন গুড়। গৃহবধু নন্দিতা সকালে বাড়ির উঠানে রস থেকে গুর তৈরির কাজে ব্যস্ত। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গুরে পাক ধরেছে। কথা বলাতে চাইলে বসার জন্য অনুরোধ করেন। আরেক গৃহবধু হৈমন্তী বলেন, প্রতিবছর এই সময়টাতে রস জ¦াল দিলে তৈরী হয় গুর। কয়েকবছর আগেও অনেক বেশি গুড় হত। পরিমান অনেক কমে গেছে। এ গ্রামের গোলগাছ চাষি সামন্ত রাড়ৈই বলেন, প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে কলস নিয়ে বাগানে গিয়ে প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়। অগ্রহায়ন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হবে। গ্রামের আরেক চাষী জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, গোলবাগানে ৪০০ ছড়া ধরেছে। প্রতিদিনই সকালে ও বিকালে গড়ে ১০ কলস রস দিয়ে প্রায় ১০০ কেজি গুড় তৈরি হয়। গোলগাছ চাষী নিতাই হাওলাদার বলেন, বাগান থেকে প্রতিদিন ৪ কলস রস দিয়ে ১৩ কেজি গুর আসে। স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ১০০ টাকা দরে এ গুড় বিক্রি করে বছরে জীবিকার একটি অংশ গোলগাছ থেকে আসে বলে তারা জানান।

কলাপাড়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, চাকামইয়া, নীলগঞ্জ ও টিয়াখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ হাজার গোলগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। ২০২১ সালে ২০,০০০ গোলগাছের চারা রোপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বন বিভাগের। গোলগাছ উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও উপক‚ল অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে

 



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »