উপকূলীয় মৎস্য খাতে নারীর অবদানের স্বীকৃতি প্রয়োজন-কোস্ট ট্রাস্ট

আর্থ-সামাজিকভাবে বঞ্চিত জেলে পরিবারের নারীসদস্যবৃন্দ

ajkerjholok

Spread the love

আজকের ঝলক নিউজ:

উপকূলীয় মৎস্য খাতে নারীর  অবদানের স্বীকৃতি প্রয়োজন : ‘‘আর্থ-সামাজিকভাবে বঞ্চিত জেলে পরিবারের নারীসদস্যবৃন্দ’’

১৬ নভেম্বর ২০২০ ঢাকা : জাতীয় রিপিটার্স ইউনিটি সভা কক্ষে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বেসরকারী সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট । তারা মৎস্যজীবী নারীদের মাঝে এই গবেষণা করেছেন । প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মূল প্রবন্দ উপস্থাপন করেন সহকারী পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম, সঞ্চালনয় ছিলেন উপ নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক । বক্তব্য রাখেন পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ, যুগ্ন পরিচালক মুজিবুল হক মুনীর । এছাড়া কৃষক ফেডারশেনর সভাপতি বদরুল আলম । সভায় বক্তারা জেলে নারীদের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন ।

ajkerjholok

বাংলাদেশের মৎস্য খাত আমাদের সামগ্রিক জীবনে মৎস্যখাতের গুরুত্ব কতটুকু তার পরিচয় পওায়া যায় ‘মাছে ভাতে বাঙালি’-এই একটি বাক্যে। ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য, সাধারণত একজন বাংলাদেশী তাঁর প্রতিদিনের খাদ্যশুিক্ত বা ক্যালরির ৭৫%ই সংগ্রহ করেন ভাত থেকে, আমাদের ফসলের এখনো ৭৫% ধান। আর এই প্রথান খাবার ভাতের সাথে এখনো আমাদের প্রধান সম্পূরক খাবার এই মাছ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ২৩০টি নদী, শত শত হাওর-বাওর মৎস্য সম্পদে ভরপুর। শত বছর ধরে মৎস্য খাত দেশের অর্থনীতিতেও রাখছে গুরুত্বর্পুণ। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৩.৭৭% এবং কৃষি জিডিপি’র ২৫.৩০% আসে মৎস্যখাত থেকে, দেশের মানুষ মোট প্রাণীজ আমিষের প্রায় ৬০%ই আসে মৎস্য খাত থেকে। শুধু তাই নয়, এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত আছেন প্রায় ১৯ লাখ মানুষ, যার ১০-১২%ই নারী। দেশের মৎস্যখাত মূল দুটি ভাগে বিভক্ত- অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক। অভ্যন্তরীন মৎস্যখাত আবার উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণ এবং মৎস্যচাষ এই দুটি ভাগে বিভক্ত। এক সময় মোট মৎস্য উৎপাদনের তিন চতুর্থাংশই আসতো উন্মুক্ত মৎস্য আহরণ থেকে। ১৯৮৩-৮৪ সালে দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ৬২.২৯% এসেছে উন্মুক্ত আহরণ থেকে, মৎস্যচাষের বা এ্যাকুয়াকালচারের অবদান ছিল ১৫.৫৩%। তবে এক্ষেত্রে বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭-১৮ সালে দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে উন্মুক্ত মৎস্য আহরণের অবদান মাত্র ২৮.৪৫% এবং মৎস্যচাষের অবদান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬.২৪%। অন্যদিকে সামুদ্রিক মৎখাতের অবদান বর্তমানে প্রায় ১৬%। বিশ্ব খাদ্য এবং কৃ ষি সংস্থার ২০২০ সালের হিসাব বলছে যে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণ থেকে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ
দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৩.৭৭% এবং কৃষি জিডিপি’র ২৫.৩০% আসে মৎস্যখাত থেকে। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত আছেন প্রায় ১৯ লাখ মানুষ, যার ১০-১২% নারী।

Ajkerjholok

মৎস্যচাষে বিশ্বে ৫ম, তেলাপিয়া চাষে বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ায়। উপকূলীয় মৎস্য খাত বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা রয়েছে, এটি সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বন থেকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত এবং আমাদের মোট সামুদ্রিক জলসীমার আয়তন ১১৬,০০০,০০০ বর্গকিলোমিটার। উপকূলীয় এলাকা দেশের বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ৩২%, মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৮% এই উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। সুতরাং এসব তথ্য নিঃসন্দেহে দেশের সামগ্রিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনীতিতে উপকূলীয় মৎস্যখাতের অপরিসীম গুরুত্বের প্রমাণ দেয়। মৎস্য খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২০ সালের গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ৭ম স্থানে রয়েছে। সামগ্রিক সূচকের ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম, এই সূচকে শীর্ষ ১০০-এ স্থান পাওয়া দক্ষিণ এশিয়া থেকে কেবল বাংলাদেশই রয়েছে। তবে মুদ্রার অন্য পিঠও উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। অর্থনৈতিক কর্মকাÐে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম, স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান ১১৯তম। আমাদের মৎস্য খাতের নারীর অংশগ্রহণের স্বরূপ জানতে গেলে দ্বিতীয় চিত্রগুলোই বেশি পাওয়া যায়। মৎস্যখাতের নারীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে । সরাসরি মৎস্য উৎপাদনে সম্পৃক্ততা নারীর কম হলেও মৎস্য উৎপাদন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নানা কাজে নারীর অবদান অনস্বীকার্য।

পরিবারের সাধারণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৮% নারীর মতামত নেওয়া হয় না। সমাজের কোন কোনও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৮২% নারীই কোনদিন অংশগ্রহণ করেননি।

মৎস্যউৎপাদনের আগে জাল বুনার কাজে নারীর গুরুত্বপূর্ণ অবাদন আছে, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রায় ৮০% শ্রমিকই নারী। আর পুরুষ জেলে যখন মৎস্য আহরণ করতে যায়, বিশেষ করে উপকূলীয় জেলেরা যখন মাছ ধরতে সমুদ্রে চলে যান, যখন পরিবারের নারী সদস্যটিকে একটানা কয়েকদিন পুরো সংসারটি সামলানোর দায়িত্ব বর্তায়। নারীর এই কাজগুলো বেশিরভাগই অর্থ াব বিনিময় মূল্য দিয়েই বিবেচনা দেওয়া হয় না। এ জন্য এই খাতে নারীর অবদানটি এখনো কাক্সিক্ষত রকম স্বীকৃতি নেই। উপকূলীয় জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের অবস্থা জানতে সাম্প্রতিক গবেষণা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের অবস্থা, তাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো জানতে, তাঁদের জন্য সমস্যা সমাধানের সুপারিশগুলো চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কোস্ট ট্রাস্ট সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে। সুইডবায়োর সহযোগিতায় পরিচালিত এই গবেষণায় তুলে আনা হয়েছে পরিবারে ও সমাজে নারীর অবস্থান, তাাঁদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সিদ্ধান্তগ্রহণ করার ক্ষেত্রে পরিবারে ও সমাজে নারীর অংশগ্রহণ ইত্যাদি। গবেষণায় অবস্থান জানার পাশাপাশি কিছু সুপারিশমালাও তুলে ধরা হয়েছে। ভোলা, কক্সবাজার ও বাগেরহাট জেলায় এই গবেষণার জন্য জরিপ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তিন জেলার ৪টি উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সরাসরি মোট ১২০০ জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই ইউনিয়নগুলোর মোট পরিবারের ৪০% জেলে পরিবার, মোট পরিবার ২০০৯৯ এবং জেলে পরিবার ৭৯৯৪ (৩৯.৭৮%)। অন্যদিকে ভোলা ৭০% পরিবারই জেলে মৎস্য পরিবার এবং কক্সবাজারে এটি ৬৬.৯৯%। প্রাপ্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে অংশীজনদের সঙ্গে একটি কর্মশালার মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। গবেষণায় আমরা পেয়েছি যে, অন্তত নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে জেলে পরিবারের নারী সদস্যরা সাংবিধানিক যথাযথ অধিকার থেকে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮ (১) আশ্বাস দেয় যে, রাষ্ট্র কেবলমাত্র ধর্ম, বর্ণ, বর্ণ বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনও নাগরিকের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না, ২৮ (২) অনুচ্ছেদটি রাষ্ট্র এবং জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলে।

আমাদের শ্রম নীতিমালায় ২০১২ নারী ও পুরুষের সমান মজুরি এবং অধিকার সম্পর্কে বললেও, আমরা দেখেছি নারী শ্রমিকদের সবাই পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় কম মজুরি পাচ্ছেন। মৎস্য শ্রমিকদের ২১% নারী আবার মনে করেন পুরুষের তুলনায় নারীদের কম মুজুরি পাওয়াই স্বাভাবিক, ৩৯% নারী আবার নারীদের শ্রমমূল্য পুরুণদেতর তুলনায় কম হওয়াই উচিৎ বলে মনে করেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে দেশে নারীর অবস্থানের উন্নতি হলেও, জেলে পরিবারে নারীর ক্ষমতায়নের অবস্থা এখনো যথেষ্ট সঙ্গীন। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরিবারের সম্পদ কেনাকাটায় ৩১% নারীরই কোনও মতামত গ্রহণ করা হয় না, পরিবারের সাধারণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৮% নারী সদস্যরেই কোনও মতামত নেওয়া হয় না। অন্যদিকে মাত্র ২% নারী সদস্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে কোনও বিশেষ প্রযোজনে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন এবং সমাজের কোন সালিশে বা অন্য কোনও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ৮২% নারীই কোনওদিন কোনভাবে অংশ গ্রহণ করেননি। আমরা আরও দেখেছি, জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের বেশিরভাগই কোনও না কোনও সহিংসতার শিকার এবং পুরুষ সদস্য মাছ ধরতে বাড়ির বাইর্ েথাকলে তাদের প্রায় সবাই আতংকে থাকেন। গবেষণার প্রাপ্ত সামগ্রিক চিত্রটি আগামী ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। প্রাপ্ত গবেষণার আলোকে আমরা মৎস্য খাতে জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি ও তাদের সমস্যা সমাধানে নি¤েœাক্ত সুপারিশমালা এই সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হচ্ছে


মৎস্য খাতে নারীর অবদান চিহ্নিত করতে বিশেষ নীতিমালা ও উদ্যোগ প্রয়োজন
জেলে পরিবারের নারী সদস্যদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে, তাঁদের আর্থিক স্বাবলম্বন ক্ষমতায়নের পথ প্রসারিত করবে
মৎস্যখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে নারী বান্ধব নীতিমালা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে
মৎস্যখাত সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা ও আয়োজন থাকতে হবে
মৎস্যশ্রমিকদের জন্য শ্রম নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ প্রয়োজন, মৎস্য খাতের নারী শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়ন শক্তিশালী করতে হবে ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি কোস্ট ট্রাস্ট ।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »