ত কিছুর পরও বাংলাদেশের নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছেন

পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীর অবস্থা ও অবস্থান

Spread the love

পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীর অবস্থা ও অবস্থান

পরিবারে জন্মের পর থেকে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। পরিবারে নারীর মতামতের মূল্যায়ন নেই। সিদ্বান্ত গ্রহণে নেই নারীর তেমন কোন অংশগ্রহণ। পরিবারে লিঙ্গভিত্তিক শ্রমবিভাজন রয়েছে। সন্তান প্রতিপালনে নারী বেশি ভূমিকা পালন করে। গৃহস্থালী কাজে পুরুষের সহযোগিতা অত্যন্ত কম। পরিবারে নারীর শ্রম একঘেয়েমি ও বিরতিহীন। নারীর শ্রমের তেমন কোন মূল্য নেই ফলে নারীর কোন নিজস্ব আয় নেই। যারা বাইরে কাজ করে তারাও আবার উপার্জিত আয় স্বাধীনভাবে ব্যয় করতে পারেনা। তাদের আয় পরিবারের সদস্যের হাতে তুলে দিতে হয়।

বিবাহসহ সকল পারিবারিক বিষয়ে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত হয়নি। বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়ের সম্মতি নেওয়া হয় না। জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি গ্রহণে নারীর কোন স্বাধীনতা নেই। জন্ম নিয়ন্ত্রণ ঝুকিঁপূর্ণ পদ্ধতি গ্রহণে নারীকে বাধ্য করা হয়। পরিবার ঘরের বাইরে নারীর বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে ও খেলাধুলায় অংশগ্রহনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ফলে নারীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের সুযোগ কম।

সামাজিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার লংঘিত হয়। এদেশের নারীরা যৌতুক, ধর্ষণ, এসিড নি-ক্ষেপ ও হত্যাসহ নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক নির্যাত¬নের শিকার হয়। সমাজের বিভিন্ন ফতোয়া ও পর্দা প্রথার শিকার হয়। শতকরা ৮০ ভাগ নারী স্বামী দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আইন থাক্ললেও রাষ্ট্র নারী পাচার রো¬ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ক্লরতে পারেনি।

আমাদের সমাজে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। ২০০৫-০৬ এর শ্রমশক্তির জরিপে দেখা গেছে মোট শ্রমশক্তির ২৯.২ শতাংশ নারী। ১৯৮৫-৮৬ সালে যা ছিল ৯.০৪ শতাংশ। এই শ্রমশক্তি শুধুমাত্র সেইসব পণ্য ও সেবাসমূহ যার বাজার মূল্য আছে। এর বাইরে গৃহস্থালী কাজে নারী যে সময় ব্যয় করছে তা হিসাব করলে নারী শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার অনেক বেশি হবে। এই বিশাল অবমূল্যায়িত শ্রমশক্তির কারণে নারীরা আমাদের সমাজে অধস্তন অবস্থায় রয়েছে।

অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা অর্জনে নারীরা পিছিয়ে আছে। ক্লর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীর অগ্রাধিকার থাকা সত্তেও গ্রামীণ নারীদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বৈষম্য রয়েছে। মোট নিয়োজিত শ্রমশক্তিতে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় শতকরা ৩১ ভাগ। অনেকক্ষেত্রে সমান কাজ করেও নারী সমান মজুরি পায় না। এখনও এদেশের নারীরা স্বাধীনভাবে পেশা নির্বাচন করতে পারে না। নারী স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। চাকুরিতে নিরাপত্তার অভাব। চাকুরিস্থলে নারী বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। সংবিধানে নারীর মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের বিধান থাক্ললেও তা সমতার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা হয়নি।

আইনগতভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইনে সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। অন্যান্য ধর্মীয় আইনেও নারী কমবেশি বৈষম্যের শিকার। আইনগতভাবে সন্তা¬নের অভিভাবক হিসা¬বে মা¬য়ের স্বীকৃতি নেই। আমাদের দেশে নারীর পক্ষে কিছু আইন তৈরি হলেও সেগুলির সঠিক বাস্তবায়ন নেই। বরং সালিসের নামে নারীর অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। স্বামীর তালা¬কের ক্ষমতা থাক্ললেও স্ত্রী শর্তসা¬পে¬ক্ষে তালাক দিতে পারে।
আমাদের দেশে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে স্থানীয় সরকারসহ সকল পর্যায়ের নির্বাচনে প্রার্থী হিসা¬বে প্রতিদ্বন্ধিতা করার ক্ষে¬ত্রে নারীর অংশগ্রহনের অধিকার নিশ্চিত হয়নি। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচিত নারীর সদস্য মাত্র ১৯ জন। প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা কাজে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৬ শতাংশ আর পেশাগত ও কারিগরি কাজে প্রায় মাত্র ২৫ শতাংশ। এদেশের নারীদের আন্তর্জাতিক পর্যা¬য়ে সরকা¬রের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ একবারে সীমিত।

জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন অথবা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। বাংলা¬দে¬শের নাগরিকত্ব আই¬নে নারীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে। বাংলাদেশের একজন পুরুষ কোন বিদেশি নারী¬কে বিবাহ করলে বিদেশি নারী বাংলাদেশের নাগরিক হন কিন্তু এদেশের কোন নারী বিদেশি পুরুষকে বিবাহ করলে তিনি এদেশের নাগরিক হ্লতে পা¬রেন না। সন্তা¬নের জাতীয়তার ক্ষেত্রে এদেশের বাবা মা হিসাবে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সন্তানের জাতীয়তা মায়ের জাতীয়তা অনুযায়ী হয় না।

নারী ও পুরুষের শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরির্বতন সত্তেও কারিগরি ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। প্রাথামক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে র্পাথক্য না থাকলেও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ছেলে শিক্ষার্থী ও মেয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাত ০.৫৩। বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষ শতকরা ৫৬.৩ ভাগ আর নারী শতকরা ৪৪.২ ভাগ। তাছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা জেন্ডার সংবেদনশীল নয়। স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের দেশের নারী চরম বঞ্চনার শিকার।বর্তমানে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর হার শতকরা ৩ ভাগ। দেশের ৫০ভাগ গর্ভবতী নারী প্রসবপূর্ব সেবা পায় না। একজন নারী একজন পুরুষের তুলনায় ২২ ভাগ ক্যালরি কম গ্রহণ করে। একদিকে নারীর পৃষ্টিহীনতা অন্যদিকে অধিক সন্তান জন্ম দেয়া নারীর স্বাস্থ্যকে রুগ্ন করে তোলে।

এত কিছুর পরও বাংলাদেশের নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছেন। নারী তাদের অবস্থা ও অবস্থান পরিবর্তনের জন্য লড়াই করেছেন ঘরে ও বাইরে। লড়াই করছে নারী- পুরষের সমতার জন্য।

মোঃ জহিরুল ইসলাম

সহকারী পরিচালক, জেন্ডার ও এ্যাকুয়াকালচার ।

 



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »