কর্মীবান্ধব এনজিও কোস্ট

উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে কোস্ট ট্রাস্ট

ফেব্রুয়ারি ০১ ২০২১, ১৯:৪২

Spread the love

কোস্ট ট্রাস্ট উপকূলীয় অঞ্চলের একটি আস্থাশীল সংস্থা যারা ১৯৯৮ সাল থেকে উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে ।

১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ এ্যাকশন এইড ভোলা অঞ্চলের প্রকল্প শেষে ততকালীন প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী । কোস্ট ট্রাস্ট নামে স্থানীয় এনজিওতে রুপ দেন । ততকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক এনজিও থেকে স্থানীয় এনজিওতে রুপ দিতে চাইলে কর্মীদের মধ্যে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়  এবং কর্মীদের একাংশ স্থানীয় এনজিও না করার জন্য বাঁধা দিলেও পরবর্বতীতে প্রায় সকল স্টাফ এই মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং স্থানীয় জনগনের সহযোগিতায় আজ একটি মান সম্মত এনজিও হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় । প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে ১০০টির অধিক অফিসে প্রায় ২৫০০ সহকর্মী কাজ করে আসছেন । বর্তমানে সংস্থাটির প্রধান অফিস ঢাকার শ্যমলী, এছাড়া সংস্থার আঞ্চলিক  অফিস রয়েছে ভোলা, কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী ও বরিশাল। সংস্থাটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো দক্ষজনবল ও স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সাপোর্ট ।

সংস্থাটির বিশেষ গুরুত্ব হলো যে কোন প্রকার  দুরযোগ মোকাবেলা আন্তরিকতার সাথে সবার আগে মানুষের পাশে দ্বাঁড়ায় সংস্থাটি। এছাড়ও সংস্থাটি কর্মীবান্ধব হিসাবে পরিচিত কারণ এখানে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি মনোনিবেশ করা হয়ে থাকে । এমনকি প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেও দক্ষ কর্মীদের সংস্থার তহবিল থেকে বেতন দিয়ে ধরে রাখেন। এছাড়া কর্ম পরিবেশ তৈরীতে রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন নির্দিস্ট স্কেলে বেতন কাঠামো, নূন্যতম ১০% বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট,  দুটি উৎসব ভাতা, শুক্র-শনিবার ছুটি, বাৎসরিক সরকারি ছুটি, মেডিকেল ভাতা, সন্তান পরিচর্চা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি । রক্তের স্বজনদের মৃত্যুতে অর্থ ও মানবিক সহায়তা, এছাড়া পিএফ, গ্র্যাইচুটি, কর্মী কল্যান তহবিল ইত্যাদি তো আছেই । সংস্থাটির সবচেয়ে বড় একটি বিষয় হলো বেতন ও দায়িত্বর দিক  থেকে আলাদা হলেও অন্যান্য সকল সুবিধা সবাই সমান ভোগ করেন । এমনকি এখানের নির্বাহী পরিচালক ভ্রমনের জন্য যে ভাতা পান ও বাহন বা টিকিট ব্যবহার করতে পারেন একজন সাপোর্ট স্টাফ থেকে সবাই সমান সুযোগ ও ভাতা পান ।

এখানের কর্মীরা যে কারো সাথে অবাদ যোগাযোগ করতে পারেন এবং অভিযোগ দিতে পারেন এমনকি  নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধেও বোর্ড’র কাছে অভিযোগ দেয়ার সুযোগ আছে, যা সবাই ইতবাচক ভাবে গ্রহন করেন।  এক কথায় বলা যায় এটি একটি কর্মী বান্ধব এনজিও ।

কোস্ট (www.coastbd.net) ১৯৯৯ সালের শুরু থেকে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর ২০ বছরের পুরনো । প্রকল্প থেকে একটি এনজিও
হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে । এটি ভোলা দ্বীপের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত একটি প্রকল্প ছিল। ১৯৯৪-১৯৯৭ এর সময়কালে জাতীয়করণের প্রক্রিয়াটি ঘটেছিল, মূলত এগুলি হ’ল নির্মাণের সক্ষমতা ও কভারেজ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওভারহেড ব্যয় হ্রাস করা, সুবিধাভোগীদের উন্নয়নমূলক উদ্যোগের সক্রিয় অংশীদার হিসাবে তাদের ভূমিকা পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা এবং অবশেষে স্থানীয় নিশ্চিতকরণের জন্য বোর্ড গঠন দায়িত্ব পালন
। এটির কার্য-সম্পর্কিত পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত মূল্যবোধগুলির সেট রয়েছে যা দরিদ্র অস্তিত্ব, অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণ, কাজ দ্বারা শেখা, মানব সম্ভাবনার সমতা, ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক আচরণে অর্থনীতি, নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি সম্মান, জেন্ডার সাম্যতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের অধিকার , যোগাযোগ, সম্পর্ক ও জবাবদিহিতা, গণ সংস্থা, প্রশাসন ও পরিবেশ ও বৈচিত্র্য।

কোস্ট ট্রাস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো দ্বারা নিবন্ধিত (নম্বর ১৪৪২)। কোস্ট মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে (নং 00956-04041-00068)। COAST হিউম্যানিস্টিটিভ অ্যাকাউন্টিবেলিটি পার্টনারশিপ আন্তর্জাতিক দ্বারা অনুমোদিত একটি সংস্থা এবং ইউএন ইকোসকের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

কোস্ট তার মাইক্রো ফিনান্স (এমএফ) প্রোগ্রামগুলিতে কেবল আয় বৃদ্ধি, বৃহত্তর ক্ষমতায়নের জন্য করেনা বরং সবার উপরে মানবীয় নীতিকে গুরুত্ব দেয় এ ক্ষেত্রে নীতিগত দিকনির্দেশনা রয়েছে এমএফ প্রোগ্রামটি দারিদ্র্য হ্রাস এবং সমাজকল্যাণে বৃহত্তর অবদানের জন্য উপযুক্ত এমএফ কেবল নিছক পরিষেবা নয়; এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধ ব্যবসা, এমএফ প্রোগ্রামটি লোকালয়ের জীবিকার ক্রিয়াকলাপের জন্য যথাযথ হতে হবে, এমএফ কর্মসূচিকে জনগণের ক্ষমতায়নের একটি সামগ্রিক পদ্ধতির একটি অংশ তাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সক্ষমতা সহজ করে তোলা উচিত? নাগরিক v।) দরিদ্র লোকদের নিজস্ব মূলধন জমার জন্য সঞ্চয় করতে হয় এবং সংকটকালীন সময়ে ব্যয়ও মেটাতে হয়। এমএফ ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে এর ক্লায়েন্টদের কাছে স্বচ্ছ, জবাবদিহি এবং অংশগ্রহণমূলক।

প্রতিষ্ঠান গঠনের ক্ষেত্রে এটি হ’ল জনগণের সংগঠন (পিও) গঠন এবং দরিদ্রদের মধ্যে দল, ইউনিয়ন, উপজেলা, প্রকল্প এবং কোস্টের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার স্তরের নেতৃত্বের বিকাশ। পিওগুলি বৈধ চাহিদা মধ্যস্থতার জন্য সামাজিক সংহতকরণের জন্যই নয়, এটি প্রোগ্রাম এবং সংস্থার পরিচালনায় অংশগ্রহণ / পরামর্শ গ্রহণেরও অন্তর্ভুক্ত। সাংগঠনিক বিষয়ে পিওদের অংশগ্রহণ পদ্ধতিগতভাবে সংহত করা হয়েছে। দুই ব্যক্তির সংস্থার প্রতিনিধি সংগঠনের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য হিসাবেও রয়েছেন।

উন্নয়ন শিক্ষামূলক কর্মসূচির অংশ হিসাবে গ্রুপগুলিতে সাপ্তাহিক সংবেদনশীল পাঠ রয়েছে, এটি কার্যকরী এবং কর্মসূচির লক্ষ্য বিবেচনায় প্রস্তুত করা হয়েছে, পাঠগুলিও নব্য-সাক্ষর সদস্যদের অংশগ্রহণের জন্য সাক্ষরতার অনুশীলনের স্থান সরবরাহের সাথে সংহত করা হয়েছে। মূল প্রোগ্রামগুলির সমস্ত উপাদানগুলি ছাড়াও উন্নয়ন প্রোগ্রাম রয়েছে, যা হয় আংশিক ব্যয় পুনরুদ্ধারের ভিত্তিতে বা সম্পূর্ণরূপে বাহ্যিক তহবিল দ্বারা সমর্থিত। কোস্ট ব্যয় পুনরুদ্ধার এবং বাহ্যিক নির্ভরতা ধীরে ধীরে হ্রাস করার উপর জোর দেয়। এছাড়া কোস্ট ট্রাস্ট নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ণ করে আসছে বিশেষ করে চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা ।

বলা দরকার যে কোস্ট ট্রাস্ট ভোলা জেলার বিভন্ন চরাঞ্চলে শিক্ষার জন্য কিছু স্কুল করেছিলেন যা এখন সরবকারি স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে । ভোলার বিভন্ন চর যেমন চর জহিরউদ্দিন, চর-কলাতলী, ঢালচর, চরকুকরী মুকরী, চর মোতাহার, চর মোজাম্মেল। পটুয়াখালীর চর কাজল, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন চরে কোস্ট ট্রাস্ট অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ ও উন্নয়ন প্রকল্প চালু রেখেছে যেখানে অনেক এনজিও যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ ও নিরাপত্তার কারনে তাদের কাজ সমাপ্ত করেছেন । কোস্ট ট্রাস্ট ইক্যুয়িটি-বিডি ও বিডি-সিএসও নামে দুটি দেশীয় নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছে । পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক আন্তর্জাকিত নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থেকে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধিতে কাজ করছে।

কোস্ট ট্রাস্টের রয়েছে একটি কমিউনিটি রেডি,যেটি ভোলার চরফ্যসনে অবস্থিত । উপকূলের কন্ঠস্বর রেডিও মেঘনা ৯৯.০ এফএম । চরফ্যসনের মানুষের জন্য একটি বিনোদনের মাধ্যম, পাশাপাশি সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন বার্তা এই রেডিওর মাধ্যমে প্রচার করে জনগনকে সচেতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে সরাসারি স্বাক্ষাৎকার ও প্রশ্নোওত্তরের সুবিধাভূগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রেডিও মেঘনা যেকোনো ঘুর্ণজড়ে ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এবং সেখানের মানুষকে সতর্ক করে এখান থেকে অধিক সেবা পান জেলেরাও। কোস্ট ট্রাস্ট করোনা আগমনের প্রক্কালে তাদের সকল সদস্যদেরকে আগাম সতর্ক করেছেন এবং সরকারি বার্তা উপকূলীয় মানুষের কাছে পেঁছে দিয়েছেন। সরকারি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন বার্তা ছোট ছোট ভিডিও ও লিফলেট করে বিতরণ করে করোনা মোকাবেলায় সরকার, নিজস্ব কর্মী, দেশের মানুষ ও রহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছেন।

এ বিষয় ভোলার প্রবিন সাংবাদিক সুশলি সমাজের প্রতিনিধি মোকাম্মেল হক মিলন বলেন ‘‘ কোস্ট ট্রাস্ট একটি ব্যতিক্রম এনজিও যারা তাদের সকল কাজে স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করেন, বিধায় তাদের সকল কাজগুলো গ্রহনযোগ্যতা পায় এবং জনবান্ধব হয়’’।

লেখক: মোঃ জহিরুল ইসলাম, উন্নয়ন কর্মী ।



আমাদের ফেসবুক পাতা




প্রয়োজনে কল করুন 01740665545

আমাদের ফেসবুক দলে যোগ দিন







Translate »