আজকের ঝলক নিউজ

আমার দুর্দান্ত শৈশব; সাবিনা সিদ্দিকী শিবা

Spread the love

আজকের ঝলক নিউজ নির্বাচিত কথন: 

আমার দুর্দান্ত শৈশব : সাবিনা সিদ্দিকী শিবা

১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় আমার বয়স ১০/১১ বছর।আমরা তখন নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা থাকি।আমরা চার বোন এক ভাই,বড় বোন অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তাই তার সাথে হৃদয়ের তেমন কোন স্বপক্ষে টান ছিলনা।তারপর আমার বড় ভাই,আমি আর ছোট দুই বোন। মোটামুটি সুখি পরিবার। যদিও প্রাচুর্যে খামখেয়ালিতে বাড়াবাড়ি ছিলোনা,কিন্তু মনের প্রাচুর্যে ভরপুর ছিলো।বাবা সরকারী রেলওয়ের কর্মকর্তা ছিলেন।এখানে সেখানে অবাদ বিচরণ। মাই ছিলো একমাত্র আমাদের পরিবারের পরিচালনা মন্ত্রী। তো যাই বলছি,আগে বহুবার বলেছি আমার নানা বাড়ি শরীয়তপুরের আটং বড় মীরা বাড়ি। যেখানে কেটেছে আমার শৈশব কৈশোরে অবতীর্ন আনন্দমুখর রঙবেরঙে উৎসবের দিন গুলো।স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই মিলতো আম কাঁঠালের ছুটি।সারা বছর অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কবে ছুটি হবে,কবে যাবো নানা বাড়ি। একবার মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটে গেলো আমাদের জীবনে,আমার শ্রদ্ধাশীল বড় মামা,সে ছিলো আমাদের ভাগনিদের জীবনে এক মহা পুরুষ।সত্যি কথা বলতে খুব গুণী একজন মানুষ।তার প্রধান কাজ ছিলো,আমাদের নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ানো,আর যেই জানতে চাইতো আমরা কে? বড় গলা করে বলতো,এরা আমার বড় বুজির মাইয়া। ঢাহাতন আইছে।কই গো কিছু খাওয়ান।তো এই খাওয়ান টা না বললেও গ্রামের চিরচেনা দৃষ্টি পট।তবে বেশি ভাগ থাকতো ধামায় করে মুড়ি গুড়, আর না হয় আমের সিজনে আম।তো সেবার বড় মামার বিয়ের কথা চলছে। একদিন দিন তারিখ ঠিক করে আম্মুকে জানানো হলো,আগেতো মোবাইলের প্রচলন ছিলনা।একসপ্তাহ আগে পত্র পাঠাতে হতো।আর খাকি পোশাক পরে পিয়ন দিয়ে যেতো, সেই চিঠি।না হয় লোক মারফতে খবর পাঠানো হতো।নানিও মেঝ মামার মাধ্যমে খবর দিলেন আমাদের সন্যাসীর ধ্যানমৌন বড় মামার জন্য বিয়ের মেয়ে ঠিক,আমরা সবাই দেখতে যাবো।পছন্দ হলে সেদিনই কাবিন করে রেখে আসবো।আমাদের আনন্দ দেখে কে।আমার মেঝ মামা আমাকে আর ছোট বোনকে নিয়ে গেলো।বড় ভাইয়ে সামনে পরীক্ষা বলে যেতে না পারায় আমাদের জন্য ভালো হলো,খবরদারি করার কেউ রইলো না পিঠের উপর।( এখনও এই খবরদারিতে সদা জাগ্রত)
সেবার আমরা গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখি টানা বৃষ্টি। মামার বিয়ের উপলক্ষে অনেক বাজার সদাই-পাতি করতে হয়েছে। একদিন দুইদিন থাকার পর বৃষ্টি তো আর কমেনা।শুরু হলো ঝড় তুফান। ওরে আল্লাহ এমন ঝড় বৃষ্টি আমি মনে হয় এই প্রথম দেখলাম।প্রতিদিন টানা বৃষ্টি ফলে সারা গ্রামে বন্যা প্লাবিত হওয়া শুরু হলো।সারাদিন ভালোই কাটে রাতে দেখি কয়েক ইঞ্চি পানিতে থৈথৈ ঘরে।সারাদিন চৌকিখাট এর উপর বসে বসে আমরা লুডু খেলে সময় পার করছি।এদিকে আমার নানি, আমাদের খাবার জোগান দিয়ে যাচ্ছে।হাট বাজার সব বন্ধ। ভয়াবহ অবস্থা দেশের। নানি বরসি দিয়ে চকিতে বসেই পুঁটি মাছ,টেংরা মাচ,বেলে মাছ কৈই মাছ ধরে।আর তোলা চুলায় বসে রান্না করে আমাদের পেটের খাবার জোগান দেন। এদিকে ঘরে হাঁটু পানি ছাড়িয়ে কোমড়ের কাছে চলে আসতেছে।যা ইট মজুদ রাখা ছিলো তা দিয়ে চৌকির পায়া উঁচু করা হয়।তবুও পর দিন দেখা যায় পানি আরও কয়ে ফুট ওপরে উঠে গেছে। এদিকে খবর আসে, মামার সাথে যার বিয়ের কথা চলছে তাদের বাড়ি ছিলো বুড়ি হাটের কাছে।সে মেয়ে নাকি তার ভালোবাসা মানুষের সাথে চলে গিয়েছে।কি আর করার।বিয়ের সব বাজার এখন এই বিপদে আমাদের রক্ষা করেছে। হয়তো এটাই নিয়তি ছিলো।,আমার ছোট খালা ছিলো আমার মাত্র ৬ মাসের বড়।তার সাথে আমার ভাব ভালোবাসা বেশি।আবার দা-কুড়াল সম্পর্ক। সব কাজেই ছিলাম আমি তার ডান হাত,তবে যখন গ্রামে বাড়ি যেতাম।
সে আর আমি গলা সমেত পানি দিয়ে প্রতিদিন একটা গামছা পরে। সারা শরীর ডুবিয়ে সরকারী রাস্তা থেকে ইট খুলে খুলে নিয়ে আসতাম।আর সেই ইট দিয়ে চকি উচু করতেন।ঢালাই করা ছিলোনা বর্তমানের মতো।ঝড়ে দেখতাম হাকিদার বাড়ি, মৃধা বাড়ি, খাঁ বাড়ি,বড় বড়,আম,জলপাই, পেয়ারা কাউ ফল গাছের ডাল ভেঙে পানিতে পরে থাকতো,আমরা দুই খালা ভাগ্নি মিলে ফল সহ ডাল পানিতে টেনে বাসায় নিয়ে আসতাম।কেউ দেখতো না।এতো বৃষ্টি তে কেউ ঘর থেকে বের হতো।আমরা এই ফাঁকে চুরির মিশনে নামতাম।কার গাছে জাম্বুরা, কার গাছে কাউফল,আতাফল,পেয়ারা,
ডালিম,বিলাতি গাব।সব আমরা চুরি করতাম।আর বাড়ির আসে পাশে ঝোপের ভেতর গামছা দিয়ে মাছ ধরতাম জাল বানিয়ে।ভাবতে ভালো লাগে আমরা কত সুন্দর দিন কাটিয়েছি।আমার ছোট বেলার দুর্দান্ত দস্যুপনার কথা বললে শেষ করা যাবেনা।কয়দিন পর ঝড় বৃষ্টি থামে।আমাদের আবার ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হলো।চলে আসর পর কয়দিন আবার অপেক্ষা থাকতাম কবে যাবো। আজ সে সব দিন গুলো নেই কিন্তু স্মৃতি গুলো মনের মনি কোটায় জমে আছে,,,,
ভালো থেকো প্রিয়;মোঃ জহিরুল ইসলাম
https://www.youtube.com/watch?v=M8VraWspNxo
https://www.youtube.com/watch?v=M8VraWspNxo

 

Exit mobile version